
কলকাতার বাসিন্দা এক বৃদ্ধার সঙ্গে এমন প্রতারণা হয়েছে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। শুধুমাত্র একটি অটোমেটেড ফোন কল, একটি ভয় এবং একটি ভুয়ো “কাস্টমার কেয়ার নম্বর” তাঁর জীবনের সমস্ত সঞ্চয় কেড়ে নিয়েছে। এই ঘটনাটি আরও একবার প্রমাণ করে যে ফোন কল ফ্রড, অনলাইন স্ক্যাম এবং ভুয়ো পুলিশ অফিসার সেজে প্রতারণার মতো ঘটনা কত দ্রুত বাড়ছে। প্রায় দেড় বছর পর বুধবার কলকাতা পুলিশ এই ঘটনার আসল তথ্য প্রকাশ করে। এরপর এই স্ক্যামের সঙ্গে জড়িত তিন স্ক্যামার তাদের হাতে ধরা পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা স্বীকার করেছে যে তারা ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে ৭৮ লক্ষ টাকারও বেশি প্রতারণা করেছে।
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে যে সাইবার ক্রাইম শাখা গুজরাটের বিভিন্ন অংশ থেকে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনাটি ৯ মার্চ ২০২৪-এর, যখন কলকাতার বাসিন্দা এক মহিলার মোবাইলে একটি অদ্ভুত কল আসে, তখন তিনি ভাবতেও পারেননি যে এটি তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ কল হতে চলেছে। কলে বলা হয় যে তাঁর নামে একটি পার্সেল “বাতিল” হয়ে গেছে। মহিলাটি ভেবেছিলেন যে হয়তো এটি কোনও অনলাইন অর্ডারের ব্যাপার। তাই তিনি কিছু না ভেবেই মেসেজে দেওয়া “কাস্টমার কেয়ার নম্বর”-এ ফোন করেন।
এখান থেকেই শুরু হয় এমন এক প্রতারণা, যেখানে তাঁকে ভয় দেখানো হয়, হুমকি দেওয়া হয় এবং তাঁর নামে ড্রাগস ভর্তি পার্সেল পাঠানোর অভিযোগ এনে তাঁর মানসিক অবস্থা দুর্বল করে দেওয়া হয়। ভুয়ো কলার নিজেকে মুম্বাই পুলিশের অফিসার বলে পরিচয় দেয় এবং জানায় যে পার্সেলটিতে ২০০ গ্রাম নিষিদ্ধ মাদক পাওয়া গেছে। মহিলাটি বারবার বলতে থাকেন যে এর সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই, কিন্তু স্ক্যামাররা গল্পটিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তোলে এবং বলে যে তাঁর আধার কার্ডের নম্বর ব্যবহার হয়েছে এবং তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর সন্দেহ রয়েছে।
ওই বৃদ্ধাকে বলা হয় যে তিনি আরবিআই-তে সিকিউরিটি অ্যামাউন্ট জমা দিন, যাতে তাঁর নাম “পরিষ্কার” হয়ে যায়। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, তাঁকে এটাও বলা হয় যে তিনি যেন এই বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলেন। ভয় এবং আতঙ্কে মহিলাটি স্ক্যামারদের দেওয়া অ্যাকাউন্টে ৭৮.৩ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার করে দেন। পরে যখন তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন, তখন তিনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। টাকার লেনদেনের পথ অনুসরণ করা হয় এবং ক্রমাগত ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের পর গুজরাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ এখন এই পুরো চক্রের বাকি সদস্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
অনেক সময় স্ক্যামাররা একটি সাধারণ আইভিআর কল বা রেকর্ড করা মেসেজ পাঠিয়ে মানুষকে ভয় দেখায়। কলে পার্সেল, পুলিশ, ব্যাংক, ড্রাগস বা ট্যাক্সের মতো শব্দ শুনে মানুষ ঘাবড়ে যায় এবং যাচাই না করেই সঙ্গে সঙ্গে কল ব্যাক করে। এই ভুলটিই ওই মহিলা করেছিলেন।
প্রতারক নিজেকে মুম্বাই পুলিশের অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে মহিলার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এটি একটি পুরনো কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর কৌশল। মানুষকে বিশ্বাস করানো হয় যে তাদের নাম কোনও অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে এবং এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাদের “সিকিউরিটি” হিসেবে টাকা জমা দিতে হবে।
৭৮ লক্ষ টাকার মতো বড় অঙ্কের টাকার খোঁজ করা সহজ নয়, কিন্তু সাইবার ক্রাইম টিম ব্যাংক লেনদেন, ডিজিটাল ট্রানজ্যাকশন এবং মোবাইল লোকেশনের মাধ্যমে স্ক্যামারদের পুরো নেটওয়ার্ক ধরে ফেলে।