গত কয়েক দশকে বাঙালির জীবন থেকে অনেককিছুই হারিয়ে গিয়েছে। কলকাতার জীবনযাত্রাও বদলে গিয়েছে। আধুনিক হয়েছে শহর। সেই আধুনিকতার জেরে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছে পুরনো কলকাতার অনেককিছুই।
৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেন, ৬৬, হ্যারিসন রোড, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট। এই ঠিকানাগুলির কথা বললেই বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্রগুলির কথা মনে পড়ে যায়। বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়ি মাতিয়ে রাখতেন ঘনশ্যাম দাস ওরফে ঘনাদা। এই মেসবাড়ির বৈঠকখানায় বসেই তিনি রোমহর্ষকর অভিজ্ঞতার কথা শোনাতেন। হ্যারিসন রোডের মেসবাড়িতে থাকতেন ব্যোমকেশ বক্সী ও তাঁর সাহিত্যিক বন্ধু অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মেসবাড়ির বৈঠকখানায় বসেই অনেক রহস্যের সমাধান করেছেন ব্যোমকেশ। মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের মেসবাড়িতে থাকতেন শিব্রাম চক্রবর্তী। কলকাতার ইতিহাসে এরকম আরও অনেক বিখ্যাত মেসবাড়ি রয়েছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কালজয়ী সাহিত্যিকও জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন কলকাতার মেসে। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগের অবসানের সঙ্গেই বহু সাহিত্যের আঁতুড়ঘর মেসবাড়িগুলিও গৌরব হারিয়েছে। এখন আর কোনও সাহিত্যিক মেসবাড়িতে থাকেন না। সাহিত্য যেমন বদলে গিয়েছে, তেমনই মেসবাড়িও আর আগের মতো নেই।
গত শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে কলকাতায় মেসবাড়ির গৌরবময় যাত্রা শুরু হয়। সেই সময় অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে তো বটেই, দেশের বিভিন্ন শহর থেকে বহু মানুষ কর্মসূত্রে বা পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসতেন। তখন বর্তমান সময়ের মতো ফ্ল্যাট ছিল না কলকাতায়। পেয়িং গেস্টের তখনকার সংস্করণ ছিল মেস। একটি বাড়িতে দল বেঁধে অনেকজন একসঙ্গে থাকতেন। মাসের শুরুতে মেসের ম্যানেজার বা মালিককে ভাড়া ও খাওয়ার খরচ বাবদ নির্দিষ্ট টাকা দিতে হত। তারপর সারা মাস আর এসব নিয়ে ভাবতে হত না। প্রতিটি মেসবাড়িতেই থাকতেন রান্নার ঠাকুর, ফাইফরমাশ খাটার লোক। কর্মসূত্রে যাঁরা থাকতেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই বাড়ি কলকাতা থেকে খুব দূরে হত না। তাঁরা সাধারণত শনিবার অফিস করে বাড়ি চলে যেতেন আর সোমবার অফিস করে মেসে ফিরতেন। এই বাবুদের দৌলতে শুক্রবার রাতে মেসে খাওয়া ভালো হত। মেসের সবাই সন্ধেবেলা তাস খেলতেন, আড্ডা দিতেন, বিপদে একে অপরের পাশে থাকতেন।
কলকাতার বিখ্যাত মেসবাড়িগুলি ছিল মূলত সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ অঞ্চলে। কারণ, সেখান থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও অফিস পাড়া ছিল কাছে। সেই মেসবাড়িগুলি এখনও আছে। বেশিরভাগ মেসবাড়ি জরাজীর্ণ হয়ে গেলেও, কয়েকটি মেস এখনও ভালো অবস্থাতেই আছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পড়ুয়া বা চাকরিরত যুবকরা এখনও মেসে থাকেন। ইতিহাস ও নস্ট্যালজিয়াই তাঁদের সঙ্গী।
আরও পড়ুন-
বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজি মিউজিয়ামে চন্দ্রযান-৩ অভিযান উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান
চলন্ত ট্রেনে চুলোচুলি যাত্রীদের! ভাইরাল ভিডিও দেখে হতবাক নেটিজেনরা, দেখে নিন সেই ভিডিও
বিশ্বের সেরা ১০০ জন মহিলা শিল্পীর মধ্যে জায়গা পেলেন, টাইম স্কোয়্যার বিলবোর্ডে স্বাতী ঘোষ