Blood Moon: ‘লাল চন্দ্রগ্রহণ'-র সাক্ষী হল কলকাতা। গোটা ভারতের মতো পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতেও ‘লাল চন্দ্রগ্রহণ' দেখতে উৎসাহী মানুষের ঢল নেমেছিল নানা জায়গায়। সেইরকমই একটি কর্মসূচি আয়োজিত হয় যাদবপুরে (blood moon time in india)। ‘পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সাক্ষী হও। এই আবেদন নিয়ে টেলিস্কোপে আকাশ চেনো এবং কুসংস্কারমুক্ত মন নিয়ে আসো।' মূলত এই স্লোগানকে সামনে রেখেই রায়পুর গার্লস হাইস্কুল, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এবং যাদবপুরের ডাঃ কাদম্বিনী গাঙ্গুলি বিজ্ঞান সভার উদ্যোগে আয়োজিত হয় এই অভিনব কর্মসূচি (live lunar eclipse today)।
রবিবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে যায় ‘লাল চন্দ্রগ্রহণ' দেখার তোড়জোড়। এদিন দুটি টেলিস্কোপের সাহায্যে ‘লাল চন্দ্রগ্রহণ'-এর সাক্ষী হন বহু মানুষ। সবথেকে বেশি উৎসাহ দেখা গেল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। রায়পুর গার্লস হাইস্কুলের আবাসিক ছাত্রীরা এদিন উপস্থিত ছিলেন এই কর্মযজ্ঞে। সেইসঙ্গে, অঞ্চলের বহু মানুষ, আট থেকে আশি সকলেই রবিবার শামিল হন এই কর্মসূচিতে। বিজ্ঞান মনস্কতাকে সঙ্গী করে এই ‘লাল চন্দ্রগ্রহণ' দেখলেন ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে তাদের অভিভাবকরা সবাই।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা একটি জিনিস তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। অনেকেই মনে করেন যে, সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময় খাওদাওয়া করা উচিত নয়। কিন্তু উদ্যোক্তারা বলছেন, এই ধারণার আসলে কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটা আসলে একটা ট্যাবু। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এই ট্যাবু অনেকটা ভাঙলেও এখনও কিছুটা আছে। অনেকে আবার আগে তৈরি করা খাবারও ফেলে দেন এই সময়ে। তবে তার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
সেই বিষয়গুলিও ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা হয় এবং এই একইসঙ্গে কিছু খাওদাওয়ারও আয়োজন করা হয় রবিবার। যেমন সন্ধ্যায় ছিল মুড়িমাখা, চা এবং রাতে ভাত বা রুটি-মাংস। সবাই মিলে রীতিমতো উপভোগ করলেন এই ‘লাল চন্দ্রগ্রহণ' পর্ব। এদিন সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট থেকে শুরু হয়ে এই কর্মসূচি।
উদ্যোক্তাদের কথায়, প্রায় ৩০০ জন উপস্থিত ছিলেন এদিন। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক শেখ সুলেমান এবং কার্যকরী কমিটির সভাপতি সঞ্জয় ঘোষও উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্য স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরাও ‘লাল চন্দ্রগ্রহণ' দেখতে উপস্থিত হন।
এই প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা তথা শিক্ষক সুশান্ত গুপ্ত জানিয়েছেন, “আমাদের এই কর্মসূচি শুরু হয় সন্ধ্যা থেকেই। দুটো টেলিস্কোপ বসানো দিয়ে শুরু। প্রায় রাত ১২টার পর পর্যন্ত চলেছে। আমরা এটাই সবাইকে বলতে চাই যে, কুসংস্কারমুক্ত মন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে, বর্তমান ভ্রান্ত কিছু ধারণা! যেটা পাঠ্যবই সহ অন্যান্য নানাক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সমাজকে রীতিমতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে দেওয়ার একটা অপচেষ্টা চলছে। সেটাকে প্রতিরোধ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।"
এদিন কলকাতায় রাত ১১.৩০ মিনিট নাগাদ, প্রায় সম্পূর্ণ চাঁদই ঢেকে যায়। তখন চাঁদের রঙ ধীরে ধীরে লাল হতে শুরু করে। এরপর রাত ১২টা নাগাদ দেখা যায় সেই ‘ব্লাডমুন’ অর্থাৎ, ‘রক্তচাঁদ'।
চাঁদ এবং সূর্যের ঠিক মাঝখানে যদি পৃথিবী চলে আসে, তখন তার ছায়া সরাসরি পড়ে চাঁদের উপর। আর তখনই তাকে বলা হয় পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। তবে সেই সময়, চাঁদ কিন্তু পুরোপুরি কালো হয়ে যায় না। বরং, ধীরে ধীরে গাঢ় লাল হয়ে ওঠে। তার কারণ হল, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো প্রতিসৃত হওয়ার জেরে, সেই সূর্যরশ্মির লাল অংশ খানিকটা কম পরিমাণে প্রতিসৃত হতে শুরু করে। তখন তা চাঁদের উপরে গিয়ে পড়তে শুরু করে।
সেইসঙ্গে, সূর্যরশ্মির নীল অংশটি চারদিকে ছড়িয়ে যায়। তাই গ্রহণের সময়, চাঁদকে ঐরকম গাঢ় কালচে লাল রঙের দেখাতে শুরু করে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।