এই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শাসক দলের প্রতিনিধি বা জনপ্রতিনিধিরা প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেরও পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক বাড়ির জন্য টাকা পেয়েছেন।
আবাস যোজনাতে দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব তৃণমূল। এবার টুইট করে আবাস যোজনায় প্রাপকদের তালিকায় বিজেপির দ্বিচারিতা নিয়ে মুখ খুলল রাজ্যের শাসক দল। এর আগেই আবাস যোজনা ইস্যুতে তৃণমূলের কেন্দ্র বিরোধিতার সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গঙ্গাসাগর মেলার উদ্বোধন করে মমতা বলেছিলেন ‘বিজেপি নেতাদের দোতলা তিনতলা করে বাড়ি, তাঁরাই গ্রামীণ আবাস যোজনার নামে টাকা তুলে নিয়েছেন।’
সেদিন বিজেপির একাধিক নেতা আবাস যোজনার নামে টাকা তুলে নিয়েছেন বলে বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বিজেপি নেতাদের দোতলা, তিনতলা বাড়ি। তাও টাকা নিয়ে নিয়েছে গ্রামীণ আবাস যোজনার নামে। সেগুলো তদন্ত করে বাতিল করছি।’ বৃহস্পতিবার টুইট করে তৃণমূল কংগ্রেস জানায় কোন কোন বিজেপি নেতার নাম কেন্দ্রের আবাস যোজনায় রয়েছে।
১. বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীর বিধায়ক দীপঙ্কর ঘরামির স্ত্রী প্রতিমা ঘরামি
২. কোচবিহার থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাবা বিধুভূষণ প্রামাণিক
৩. ঝাড়গ্রামের বিজেপির জেলা সভাপতি তুফান মাহাতর নাম রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে তাঁর ভাইয়ের নাম
৪. উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বিজেপি নেত্রী লক্ষ্মী মজুমদার
৫. বাঁকুড়ার স্থানীয় বিজেপি নেতা নারায়ণ শিট
৬. পুরুলিয়া রঘুনাথপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রবীন ঘোষ গোপের স্ত্রী লেহালি গোপে
উল্লেখ্য, এই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শাসক দলের প্রতিনিধি বা জনপ্রতিনিধিরা প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেরও পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক বাড়ির জন্য টাকা পেয়েছেন। অনেক জায়গায় দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পর নাম কাটার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছেল। বিজেপিও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে একাধিক অভিযোগ করেছে।
নবান্নের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বাড়ি তৈরির কাজে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ হল, উপভোক্তাদের গড়িমসি এবং কিস্তির টাকা সময়ে না পাওয়া। এই দু’টি বিষয়ে বিশেষ নজর দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। নবান্নের নির্দেশ, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ব্লক স্তরের সব উপভোক্তার সঙ্গে সিনিয়র অফিসারেরা বৈঠক করে কেন্দ্রের নিয়মবিধি ব্যাখ্যা করবেন।
উল্টোদিকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পশ্চিমবঙ্গে হওয়া দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে আগেই সতর্ক হয়েছিল কেন্দ্র সরকার। সেই সতর্কতা মেনে রাজ্য প্রশাসনকে বাড়তি কড়াকড়ির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেই নির্দেশ অনুযায়ী নবান্নের তরফেও এ বার সময়সীমা মেনে বাড়ি তৈরি করতে বলা হচ্ছে উপভোক্তাদের। এমনকি ৯০ দিনের মধ্যে বাড়ি তৈরি হয়ে যাবে, এমন মুচলেকাও উপভোক্তার কাছ থেকে নেওয়া যায় কি না, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে নবান্ন।
নামকরণ বিতর্কের জেরে বেশ কয়েকমাস প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পশ্চিমবঙ্গকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। শেষমেশ সেই জট কেটে চলতি মাসে বাংলায় ১১ লক্ষ ঘর তৈরির জন্য ৮২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের তরফে রাজ্যকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে দেওয়া হয়ছে যে, দুর্নীতির অভিযোগ এলে ফের বন্ধ হয়ে যেতে পারে বরাদ্দ। তবে এবার পাল্টা অভিযোগ এনে বোমা ফাটিয়েছে তৃণমূল।