যদিও আতঙ্কের বন্দিদশা তবুও সব বিষয়েই সদর্থক অর্থ খুঁজে নেওয়া আমি মানসিকভাবে নিজের লড়াকু মনোভাব বজায় রাখতে স্বচ্ছন্দ। আমি অর্থাৎ সুতপা দত্ত দাশগুপ্ত , শিক্ষিকা এবং সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সাথে যুক্ত জীবনকে পজিটিভ ধারণায় নেওয়া একজন স্বচ্ছ চিন্তা ধারার মানুষ ।
একদিকে কচুপাতা সেদ্ধ খাচ্ছে মানুষ, অন্যদিকে ত্রাণের নামে বিধায়কের সমাবেশ
এতদিন সকাল থেকে রাত দিনকে কাজের সমধারায় বেঁধে রাখতে বেশ হিমসিম খেতে হতো । একধাক্কায় যেন পুরো দৃশ্যপটটাই বদলে গেল । করোনা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে লড়াই এ যত ক্ষুদ্র ভূমিকা ই হোক না কেন দায়িত্বের বিচারে চিন্তাভাবনার জায়গাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, আমরা বিপদসীমার মধ্যে প্রতিদিনই একটু একটু করে জড়িয়ে ফেলছি নিজেদের।
রাজ্য়ে করোনায় মরছেন কারা,ঠিক করবে পাঁচজনের বিশেষজ্ঞ কমিটি
কখনও অসচেতনতা, কখনো পরিস্থিতির গুরুত্ব না বোঝার মানসিকতা, কখনওবা এমন অপরিচিত বিপদের সম্মুখীন হলে যেরকম দিশেহারা ভরসাহারা মানসিক অবস্থা হয় তেমনিই ভরসাহীন অবস্থা আমাদের । প্রতি মূহুর্ত কাটছে খবরের তথ্য স্ংগ্রহ করে, টিভির নিউজ দেখে আর দেশদুনিয়ার সাথে যতটুকু পারা যায় সম্পর্কিত থেকে । কেমন একটা আতঙ্কের আবহাওয়ায় রয়েছি আমরা সক্কলে । বাড়িতেই থাকা , রান্না খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সারা, ন্যূনতম প্রয়োজনীয় কাজটুকু মিটিয়েই দৌড়ে ঘরের ঘেরাটোপে ফেরা , কঠোরভাবে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ,হাত পা ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করা , চরম শীতের দিনেও দমবন্ধ হয়ে যাবার অজুহাতে মাফলার না ব্যবহার করা আমি , মাস্ক ব্যবহারে সচেতন হওয়া ইত্যাদি আরো কতো কি ।
' পৈতের সময় তিনদিন ঘরবন্দী ছিলাম', লকডাউনে স্মৃতির শহরে 'লালপাহাড়ি' গানের স্রষ্টা.
গৃহকর্মী সহায়িকারা আপৎকালীন ব্যবস্হায় নিজের মতো করে কাজ করছে। তাদের কাজটুকু নিজের মতো করেই পরিপূরণ করা । ফলতঃ কিছুটা হলেও চুপিচুপি বলি, আমার আরো দুটো ভালো লাগার সাথে সংযুক্তি ঘটেছে। রকমারি রান্না করা আর খাবার পরেই বাসনটা চটপট মেজে ফেলা । সময়ের অপ্রতুলতার কারণে যেটা অনেক সময়েই একটা বিমুখতায় পর্যবসিত হতো এ যাবৎকাল। বাড়ির চারদেয়ালের বন্দিদশা ঠিক কিন্তু বহু বহু দিন ধরে পরিবারের মানুষজনের সাথে এভাবে সময় কাটানো হয়নি এটাও ঠিক ।
বাড়িতে বয়স্করা কিন্তু অন্যভাবে একটুআধটু খুশিই । সারাবছর কাটে তাদের উর্ধশ্বাস ছুটে চলা দেখে ..এই সময়টায় বাড়ির সমস্ত সদস্যকে নিয়মমতো বাড়িতেই আবদ্ধ দেখে তাদের নিভে আসা জীবনটায় একটু হলেও উদ্দীপনার সঞ্চার হলো বোধহয় ।প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু পড়ার অভ্যেস আমার বহুকালের । সময়ের স্লথগতি সেই অভ্যেসে অনেক পরিবর্তন আনলো। একদিনেই অনেক কিছু পড়া, কাজের ফাঁকে কানে হেডফোন লাগিয়ে রেওয়াজ করে নেওয়া আমি অনেকক্ষণ সুরেলা সময় অতিবাহিত করতেই পারছি। পৃথিবীর কিছু আসছে যাচ্ছে না ।
যদিও পরবর্তীতে বিভিন্ন কাজের জমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবু বৃহত্তর অর্থে যে সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছি আমরা, সারা বিশ্বের মানুষ ...তার মোকাবিলা হয়তো দলবদ্ধ সচেতনতা দিয়েই সম্ভব হবে । তাই আমাদের দেশনায়কদের সাথে আমরাও এক ধাপে আজকে দাঁড়িয়ে এই সংকটের মোকাবিলা করি। আসুন সবাই মিলে বলি- লড়বো, জিতবো, বাঁচবো রে .......
সুতপা দত্ত দাশগুপ্ত (শিক্ষিকা, শিল্পী)
শ্রীরামপুর