গ্রামের স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই কৃষক পরিবরের। অনেক ছাত্রছাত্রী আবার কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। অনেকে আবার দিনমজুর পরিবারের সদস্য। ফলে শীতের সময় সকাল ৯টার আগে তাদের বাড়িতে রান্না বসছে না।
কেউ খালি পেটে (empty stomach), কেউ আবার কোনওরকমে নাকে মুখে গুঁজেই শীতের মধ্যে ছুট দিচ্ছে স্কুলের দিকে। চরম সমস্যায় পড়েছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ডোমকল, ইসলামপুর, বসন্তপুর, সুতি, কাটাখালি, জঙ্গিপুর সহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়ারা। ঘড়িতে সকাল সাড়ে ৯ টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠছে স্কুলের ঘণ্টা (School Open)। খুলে যাচ্ছে স্কুল। ক্লাস (Class) শুরু হয়ে যাচ্ছে সকাল ১০টার সময়। আর ওই সময় স্কুলে যেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পড়ুয়াদের।
নবম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের অধিকাংশই প্রথম ক্লাসে যোগ দিতে পারছে না। ক্লাসে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা দেখছেন, বেশিরভাগ বেঞ্চই ফাঁকা। ফলে খুব অল্প সংখ্যক পড়ুয়া নিয়েই তাঁদের ক্লাস করতে হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে এই সমস্যা সবথেকে বেশি পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। গ্রামের (Village) স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই (Student) কৃষক পরিবারের (Farmer Family)। অনেক ছাত্রছাত্রী আবার কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। অনেকে আবার দিনমজুর পরিবারের সদস্য। ফলে শীতের (Winter) সময় সকাল ৯টার আগে তাদের বাড়িতে রান্না (Cooking) বসছে না। এর ফলে ভারী কিছু খেয়ে না এসে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। খালি পেটেই দীর্ঘক্ষণ ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। এর ফলেই ক্লাসে উপস্থিতির হার অনেকটাই কমে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- কেউ শ্বশুরবাড়ি, কেউ কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে, পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরাতে উদ্যোগ শিক্ষকদের
এদিকে শিক্ষা দফতরের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী নবম ও একাদশ শ্রেণির (Class 9 and 10) পড়ুয়াদের স্কুলে ঢুকতে হচ্ছে সকাল সাড়ে ৯টায়। ক্লাস শুরু হচ্ছে ১০টা থেকে। তাদের ছুটি হচ্ছে বিকেল সাড়ে ৩টেয়। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলে ঢুকতে হচ্ছে সাড়ে ১০টায়। তাদের ছুটি হচ্ছে বিকেল সাড়ে ৪টেয়। গ্রামের দিকে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী অনেক দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। নবম ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলে আসার জন্য সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই প্রস্তুত হতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে ছাত্রছাত্রীরা খাবার জল ও টিফিন সঙ্গে করে নিয়েও আসছে। কিন্তু, সকালে ভারী খাবার না খেয়ে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করতে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কাটাখালি পুঠিয়া হাই স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া খাতুন বলে, "শীতের মধ্যে বাড়ি থেকে প্রায় ২০ মিনিট সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে হয়। যে কারণে সকালের দিকে স্কুল আসতে একটু সমস্যা হচ্ছে। মা সকাল ৯টার আগে ভাত রান্না করে দিতে পারছে না। তাই প্রথম ক্লাসে সময়ে যোগ দিতে পারছি না। সময়টা আগের মতো সাড়ে ১০টা থেকে হলেই ভালো হতো।"
আরও পড়ুন- পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে 'দুয়ারে বিধায়ক', সঙ্গে নিলেন শিক্ষকদের
সেখালিপুর হাইস্কুলের প্রথম ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের গড় উপস্থিতির হার ৩০ থেকে ৩৫শতাংশ। নির্দেশিকা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই স্কুলে ঢুকছে সেই আগের সময় সকাল সাড়ে ১০টাতেই। এ প্রসঙ্গে শিক্ষকরা বলছেন, "আমাদের স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীর পরিবার কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। শীতের সময় এত সকালে বেশিরভাগ বাড়িতেই ভাত রান্না হয় না। বারবার বলা সত্ত্বেও তারা সময়ে স্কুলে আসতে পারছে না। স্কুলে মিড ডে মিলেরও ব্যবস্থা নেই। ফলে সমস্যা তো হচ্ছেই।"
এক অভিভাবক মিজানুর শেখ বলেন, "ছেলেকে স্কুলে মাস্ক খুলতে বারণ করছি। কিন্তু, টিফিন খাওয়ার সময় তা খুলতেই হচ্ছে। সকালে ভাতের মতো ভারী খাবার খাইয়ে পাঠানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু, মাঠের কাজ পড়লে এত সকালে ওর মা সবদিন ভাত রান্না করে দিতে পারবে কি না জানি না। আগের মতো সাড়ে ১০টা থেকেই স্কুল খুললে কিছুটা সমস্যার সমাধান হতে পারে।"