এই পুজোয় শুধু পুরুষরা আসেন। মহিলারা আজও মারাম বুরু পুজোর আয়োজন থেকে আচার অনুষ্ঠান কোনো কিছুতেই অংশ গ্রহণ করতে পারেন না।
সে প্রায় দুশ বছর আগেকার কথা। মারাম বুরু পুজোর শুরু তখন থেকে। পুরুলিয়ার (Purulia) একান্ত নিজস্ব এই ঐতিহ্যবাহী পুজো বাংলার সংস্কৃতির (Bengali Culture) গভীরতার অন্যতম প্রতীক। শুনশান জঙ্গলের মাঝে মারাম বুরু পাহাড় পুজোয় (Maramburu puja) সাদা ধুতি গেঞ্জি পরা ভক্তদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে এলাকা। এই পুজোয় মহিলাদের প্রবেশ নেই। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের নিচে চড়িদা গ্রামের মারামবুরু গ্রাম্য পুজোয় রয়েছে দুশ বছরের ইতিহাস।
পুজো শেষে মাঠে বসে প্রসাদ হিসেবে পাত পেড়ে খাওয়ানো হয় লাড্ডু। আজও চড়িদা গ্রামের গ্রাম্য পুজোয় সাদা ধুতি গেঞ্জি পরা পুরুষদের ভিড়ে তৈরি হলো এক অন্য পরিবেশ। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের চড়িদা গ্রামের অদূরে জঙ্গলের মধ্যে গ্রাম্য পূজায় সাদা গেঞ্জি ধুতি পরে জমে উঠলো ভক্তদের ভিড়।অযোধ্যা পাহাড়ের নিচেই চড়িদা গ্রাম। যা ছৌ মুখোশ গ্রাম বলে পর্যটনের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। এই চড়িদা গ্রাম ছাড়াও আসে পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ "মারাম বুরু" অর্থাৎ" বড় পাথরের"পুজো করেন।
প্রকৃতির এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতে পারেন না মহিলারা। বিষয়টি নিয়ে চড়িদা গ্রামের জয়দেব রায় ও দুঃখহরণ পালরা জানান। এটা আমাদের গ্রাম্য পূজা। মারাম বুরু, মারাম বুরু যার অর্থ বড়ো পাথর। এই পুজো প্রায় ২০০ বৎসরের পুরোনো। প্রথমে পাহাড়ের ওপর হত পুজো। হতো নাচনি নাচ। সেই সময় নাকি এক নাচনি তার সাজ সামগ্রী সহ আয়না চিরুনি ভুলে আসেন। সেই সাজ সামগ্রী নিতে পাহাড়ের ওপরে গেলে আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেই নাচনি সেদিন থেকে কোথায় বেপাত্তা হয়ে গেল আজও জানা যায়নি।
তখন থেকেই ঠিক করা হয়, আর পাহাড়ের ওপর নয়। পাহাড়ের নিচেই হবে মারাম বুরু বা বড়ো পাথরের পুজো। পরের দিন দেখা যায় পাহাড়ের উপরের সেই বড় পাথর নিচে চলে এসেছে। সেই সময় থেকেই আজও তিথি মেনে আজকের দিনেই হয় মারাম বুরুর পুজো। এই পুজো ব্রাহ্মণ দিয়ে নয়, গ্রামের নাইয়ারা করেন। পুজোতে মিঠাই ও মানত পূরণ করতে লাগে মাটির হাতি ঘোড়া।
মারাম বুরুর পুজো খুবই জাগ্রত বলে বিশ্বাস করেন এলাকার মানুষ। এই পূজায় শুধু পুরুষরা আসেন। মহিলারা আজও মারাম বুরু পুজোর আয়োজন থেকে আচার অনুষ্ঠান কোনো কিছুতেই অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। ২০০ বছর আগেও যা নিয়ম ছিল আজ ২০০ বছর পরেও মারাম বুরু পুজোয় সেই নিয়মেই লাগু রয়েছে। মারামবুরু পুজোয় মহিলাদের অচ্ছুত আজও বলবৎ।