প্রতিদিন শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতেন তিনি। পুলকার দুর্ঘটনায় জখম ঋষভ সিংয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই শনিবার এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে চোখের জল বাঁধ মানল না সাংসদেরও। দুর্ঘটনার জন্য পুলকারের চালককেই দায়ী করেছেন তিনি।
১৪ ফ্রেরুয়ারি, ভ্যালেন্টাইস ডে-এর সকালে হুগলি পোলবার ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি পুলকার। অভিশপ্ত সেই পুলকারে ছিল ঋষভ সিং-সহ ১৭ জন পড়ুয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পোলবার কামদেবপুরে দিল্লি রোডে পুলকারটি সামনে আচমকাই ইউটার্ন করে একটি লরি। এরপরই নিয়ন্ত্রণ হারান পুলকারের চালক। লরিটিকে ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে নয়ানজুলিতে উল্টে যায় পুলকারটি। আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালে। বাকীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পায় ঋষভ সিং, দিব্যাংশ ভগত অমরজিং সাহা নামে তিন পড়ুয়া। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার গ্রিন করিডর তৈরি করে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হয় ঋষভ ও দিব্যাংশকে।
আরও পড়ুন: ব্যর্থ হল সব চেষ্টা, পোলবার পুলকার দুর্ঘটনায় আহত ছাত্র ঋষভের মৃত্যু
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ঋষভের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল ফুসফুস, লিভার, এমনকী, কিডনিতেও। পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে চলে গিয়েছে, শুক্রবার রাতেই তা টের পান চিকিৎসকরা। শনিবার ভোরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রটি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরের একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে গিয়েছিল, তাই আর ঋষভকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল চত্বরে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঋষভের বাবা সন্তোষ সিং। তিনি আবার শ্রীরামপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরও বটে। সন্তানহারা বাবার সামনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি শ্রীরামপুরের সাংসদও। কান্নাভেজা গলায় বলেন, ঋষভের চলে যাওয়ার খবর শুনে নিজের বাবা মৃত্যুর থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুর জন্য পুলকার চালকের গাফিলতিকেই দায়ীর করেছেন কল্যাণ। তাঁর আক্ষেপ, 'সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কাদের শেখাব? কেউ শিক্ষা নিতে চায় না। সকলে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে।'
আরও পড়ুন: ব্যর্থ হল সব চেষ্টা, পোলবার পুলকার দুর্ঘটনায় আহত ছাত্র ঋষভের মৃত্যু
উল্লেখ্য, পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় গাড়ির মালিক ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সে নিজে থানায় এসে আত্মসমপর্ণ করে বলে জানা গিয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। ঋষভের মৃত্যুর পর পুলকার মালিকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।