অফিসে আসাটাই যেন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ক্যানিং ডিভিশনাল অফিসের কর্মীদের কাছে। এ আতঙ্ক সাপের আতঙ্ক। আর সেই আতঙ্কের জেরেই প্রতিদিন অফিসে ঢুকতে কার্যত ভয় পাচ্ছেন কর্মীরা। কেউ কেউ তো অফিসে না আসার জন্য ছুটির আবেদনও করে বসেছেন। আর যাঁরা অফিসে আসছেন, তাঁরা বেশিরভাগ সময়েই চেয়ারের উপর পা তুলে বসে কাজ করছেন। পাছে সাপ এসে কামড়ে দেয়!
ক্যানিং স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠের একপাশে জেলা পরিষদের আর্থিক আনুকূল্যে বছর বারো আগে তৈরি হয়েছিল তিনতলা একটি ভবন। মূলত মার্কেট কমপ্লেক্সের জন্য এটি তৈরি হলেও বাস্তবে তা হয়নি। এই ভবনের তৃতীয় তলে রয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির ক্যানিং ডিভিশনাল অফিসটি। দ্বিতীয় তলে মহকুমা শাসকের গোডাউন ও পূর্ত দফতরের একটি অফিস থাকলেও তা বেশিরভাগ সময়েই বন্ধ থাকে। একতলায় আগে ক্যানিং মহকুমা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স থাকলেও বেশ কয়েকমাস হলো তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে গোটা বাড়িটিতে এখন রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার অফিসটিই একমাত্র চালু রয়েছে।
আরও পড়ুন- ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছে বিষধর সাপ, ভাইরাল হল ভিডিও
আরও পড়ুন- সাপ ধরতে বন দফতরের ভরসা, চন্দ্রবোড়ার ছোবলে মৃত্যু সর্প বিশারদের
কর্মীদের অভিযোগ, গত দু' তিনমাস ধরে এই বাড়িতেই সাপের আনাগোানা বেড়েছে। বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে দাঁড়াশ, কেউটে, চন্দ্রবোড়া, কালাচের মতো বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর ও বিষহীন সাপ। বুলবুলের পর গত কয়েকদিনে সাপের উপদ্রব যেন আরও বেড়েছে। কখনও অফিসে ওঠানামার সিঁড়িতে তো কখনো অফিসের ভিতরে দেখা মিলছে সাপের। অফিসে কাজের সময় যখন তখন সাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কর্মীদের। আর এতেই কার্যত নাভিশ্বাস উঠেছে অফিসের জনা তিরিশেক কর্মীর। সাপের ভয়ে দিনের বেশিরভাগ সময়েই চেয়ারের উপর পা তুলে বসে কাজ করছেন দফতরের কর্মীরা। সন্ধের পর থেকে এই সাপের আনাগোনা আরও বাড়ে বলে অভিযোগ কর্মীদের। তাই সন্ধ্যা নামার আগেই অফিসের কাজ সেরে বেড়িয়ে পড়তে চান সকলেই। কিন্তু বুলবুলে ক্যানিং মহকুমায় বিদ্যুত দফতরের পরিকাঠামোর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে কর্মীদের। আর যত রাত বাড়ছে ততই সাপের কামড় খাওয়ার আতঙ্ক গ্রাস করছে কর্মীদের।
কর্মীদের অভিযোগ, বিষয়টি ইতিমধ্যেই উচ্চস্তরে জানানো হয়েছে। বন দফতর থেকে এসে যাতে সাপ ধরার বন্দোবস্ত করা হয়, সেই অনুরোধও করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কাজের কাজ হয়নি।
সৃঞ্জয় রায় চৌধুরী নামে এক কর্মী বললেন, 'ঘরের মধ্যে সাপ ঘুরছে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গেলেও সাপ দেখছি। কাজ করতে করতে অন্যমনস্ক হয়ে পায়ে কিছু ঠেকলেও চমকে উঠছি, এই বুঝি সাপে কামড়ালো। মনের মধ্যে সাপের আতঙ্ক এতটাই চেপে বসেছে। গোটা অফিসটাই সাপের আড্ডাখানা হয়ে উঠেছে।'
কর্মীদের অভিযোগ, অফিস এবং গোটা বাড়িটির মধ্যে প্রচুর ইঁদুর রয়েছে। আর সেগুলিকে খাওয়ার লোভেই ওই অফিসের মধ্যে সাপ ঢুকছে। অফিসের আশপাশের চত্বরও আবর্জনায় ভর্তি। সিঁড়িতে নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। ফলে সাপের ভয়ে কার্যত দিশেহারা অবস্থা সরকারি কর্মীদের। অফিসের চারপাশ পরিষ্কারের কাজ শুরু হলেও সাপের উপদ্রব এখনও কমেনি। আপাতত তাই সাপে কাটার ভয় মাথায় নিয়েই বুলবুলের ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করছেন বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা।