ঝালদা হত্যাকাণ্ডে ফের কাঠগড়ায় পুলিশ। এমনিতেই এই হত্যাকাণ্ডে বারবার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল। এবার তপন কান্দু হত্যায় প্রত্যক্ষদর্শীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার এলাকাজুড়ে উত্তেজনা তৈরি করেছে।
ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে এলাকা জুড়ে চলছে ১২ ঘণ্টার বনধ। আর এমন পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার সকালে উদ্ধার হল তপন কান্দু হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ঝুলন্ত দেহ। সেই সঙ্গে মৃতদেহের পাশ থেকে মিলেছে সুইসাইড নোট। এখানে এমন কিছু কথা লেখা রয়েছে যার জেরে ফের ঝালদা থানার বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছে। তপন কান্দু হত্যায় ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষে-র জড়িত থাকা নিয়ে সরব কংগ্রেস। কিন্তু পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে রাজ্য পুলিশ বারবারই আইসি-কে নির্দোষ বলে দাবি করে এসেছে। এমনকী পুলিশের এহেন অবস্থানে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। তপন কান্দু হত্যা তদন্তে পুলিশে ভূমিকা নিয়ে আদালত খুশি নয় তাও পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে তপন কান্দু হত্যার তদন্তভার গিয়েছে সিবিআই-এর হাতে। এহেন এক পরিস্থিতিতে খুনের প্রত্যক্ষদর্শী এবং খুন হওয়া কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর বন্ধু নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঝালদা পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেস বেআইনিভাবে পুরবোর্ড গঠন করেছে এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বিক্ষোভে নামে কংগ্রেস। এই মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন খুন হওয়া কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা। যিনি নিজেও এবার ঝালদা পুরসভার একটি ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছেন। অভিযোগ, এই মিছিলকে পুলিশ আটকানোর চেষ্টা করে। এমনকী, পূর্ণিমা কান্দুর শ্লীলতাহানিও করা হয় বলে অভিযোগ। এই শ্লীলতাহানিতেও নাম জড়ায় ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষের। এরে জেরে বুধবার ১২ ঘণ্টার ঝালদা বনধের ডাক দেয় কংগ্রেস। সকালে রাস্তায় নেমে যখন পূর্ণিমা কান্দুরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তখনই মেলে নিরঞ্জন বৈষ্ণবের দেহ উদ্ধারের খবর।
নিরঞ্জন বৈষ্ণব পেশায় ছিলেন গৃহশিক্ষক। তাপন কান্দুর ঘণিষ্ট বন্ধু হিসাবেই লোকে তাঁকে চেনে। যেদিন তপন কান্দু সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে খুন হন সেখানে উপস্থিত ছিলেন নিরঞ্জন। ফলে এই হত্যা মামলায় তাঁর বয়ান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, সুইসাইড নোটে নিরঞ্জন বৈষ্ণব অভিযোগ করেছেন যে তাঁকে বারবার থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হচ্ছে। এই চাপ নিতে পারছেন না বলেও সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন। নিরঞ্জন বৈষ্ণব ছিলেন এক নির্ভেজাল মানুষ। এলাকায় এমনই পরিচয় তাঁর ছিল বলে জানিয়েছে প্রতিবেশীরা। তিনি যে কোনও দিন থানার চৌকাঠ পার হননি, সে কথাও সুইসাইড নোটে উল্লেখ করে গিয়েছেন।
নিরঞ্জন বৈষ্ণবের দেহ উদ্ধারের পর থেকে সরকার এবং পুলিশের বিরুদ্ধে আরও বেশি করে সরব কংগ্রেস। এমনকী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের পরিবারও এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করেছে। নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ভাইপো দীপক বৈষ্ণবও এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। তপন কান্দুর স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুও প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছেন, বারবার এই হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকী পুরো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে ঝালদা পুরসভার পুরবোর্ড গঠনের যোগ রয়েছে সে কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু, পুলিশ তাতে কোনও কর্ণপাতই করেনি। নিরঞ্জনের দেহ উদ্ধার আরও একবার তপনহত্যায় পুলিশের ভূমিকায় আরও বড় প্রশ্ন তৈরি করল বলেই মনে করছেন পূর্ণিমা। সিবিআই-এর তদন্তে সমস্ত তথ্য সামনে আসবে বলেও মনে করছেন তিনি।
আরও পড়ুন| 'তৃণমূলে আসতেই হবে', ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনে সিবিআই তদন্তে নামার আগেই ভাইরাল অডিও
আরও পড়ুন|'খুনিরা ধরা না পড়লে নোটিশে সই নয়', ঝালদা পৌরসভার বোর্ড গঠনের আগে বার্তা তপন কান্দুর স্ত্রী-র
আরও পড়ুন| ঝালদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট, পুলিশ সুপারের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন আদালতের