নেতৃত্ব পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhisek Banerjee) হাতে ক্ষমতা যাওয়াটা সময়ের অপেক্ষা। এই অবস্থায় দলীয় বৈঠক ডাকতেই হত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)।
নেতৃত্ব পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC), এমনটাই দলের এক অভ্যন্তরীণ সূত্রের দাবি। অর্থাৎ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হতে চলেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhisek Banerjee) হাতে। আর এই বিষয়টি নিয়েই ঘাসফুস শিবিরে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল ফাটল। অনেক সিনিয়র নেতাই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।
সূত্রপাত বিধানসভা নির্বাচনে
এই ফাটলের সূত্রপাত ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Elections 2021) সময়। প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিতর্ক ও প্রতিবাদ দেখা দিয়েছিল। অনেক সিনিয়র তৃণমূল নেতাই টিকিট থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। তাঁরা হয় সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে অভিযোগ করেছিলেন অথবা দল ছেড়েছিলেন। প্রার্থী বাছাইয়ের নেপথ্যে ছিল প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) আই-প্যাক (I-PAC)। অনেক প্রবীণ নেতাই আই-প্যাককে আক্রমণ করেছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, বেশিরভাগ প্রার্থীই ছিলেন তরুণ তথা টিএমসি যুবার প্রতিনিধি, যার প্রধান ছিলেন অভিষেক। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সেই থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস, জুনিয়র এবং সিনিয়র গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।
অভিষেকের অভিষেক
বিধানসভা নির্বাচন ২০২১-এ ঐতিহাসিক সাফল্য পাওয়ার পর, তৃণমূল কংগ্রেসের ৯৯ শতাংশ যুব নেতারই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকেও, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের প্রতি আনুগত্য বেশি। অভিষেককেই তাঁরা ভবিষ্যতের নেতা হিসাবে মেনে নিয়েছেন। এমনকী, মমতার ঘনিষ্ঠ বৃত্ত থেকে ছিটকে যাওয়া কয়েকজন বর্ষিয়ান নেতাও প্রকাশ্যেই অভিষেককে সমর্থন দিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকেও ভোটের পর তাঁকে স্বীকৃতি দিয়ে, দলের জাতীয় সাধারণ সভাপতি করা হয়েছিল।
আই-প্যাক নিয়ে খুশি নন মমতা
আই-প্যাকের কাজকর্ম নিয়ে মমতা খুব একটা খুশি নন বলেই জানা গিয়েছে। সূত্রটির দাবি, মমতাকে আইপ্যাকের লোকজন বুঝিয়েছিল, উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, মণিপুর, উত্তরাখণ্ডে নির্বাচনে লড়ার মতো জায়গায় যেতে পারে তৃণমূল। শুরুতে গোয়ায় দলের বিরাট কর্মকাণ্ডও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে ধীরে ধীরে নির্বাচনী দৌড়ে বিবর্ণ হয়ে পড়ছে তৃণমূল। উত্তরপ্রদেশে চেষ্টা করেও, শক্তিপুঞ্জ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অখিলেশ যাদবের (Akhilesh Yadav) সঙ্গে হাত মেলাতে হয়েছে। তাই আই-প্যাকের কৌশল মমতা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বর্ষিয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের খুশি করতে পারেনি। তাঁরা মনে করছেন, আই-প্যাক আসলে দলের অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টি করছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে সামনে রেখে দলের মূল নিয়ন্ত্রণ করায়ত্ব করার চেষ্টা করছে।
কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যায়
সম্প্রতি প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Kalyan Banerjee) প্রকাশ্যেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর ডায়মন্ড হারবার মডেল (Diamond Harbour Model) নিয়ে আক্রমণ করেছেন। ২০২১ সালের শেষে, কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গের (Covid Third Wave) মধ্য়েই বড়দিন (Christmas 2021) এবং নববর্ষ (New Year 2022) উদযাপনের জন্য কোভিড বিধি (Covid-19 Restrictions) শিথিল করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় সেই সময়ই আয়োজন করেছিলেন এমপি কাপ (MP Cup) ফুটবল টুর্নামেন্টের। এই নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ বাড়ছিল। মহামারি নিয়ন্ত্রণে মমতা সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে বিজেপির মতো বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। আর সেই সময়ই দিদিকে রক্ষা করতে ভাইপোকে আক্রমণ করেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের হয়ে কল্যানকে আক্রমণ করে পাল্টা দিদির ধমক খেতে হয়েছিল অপরূপা পোদ্দারকে (Aparupa Poddar)।
রাস্তায় সিনিয়র বনাম জুনিয়র
৪টি পুরনিগম এবং ১০৮ টি পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই এই ধিকি ধিকি আগুন একেবারে শিখা হয়ে জ্বলে উঠেছে। প্রকাশ্যে চলে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সিনিয়র বনাম জুনিয়রের দ্বন্দ্ব। ওয়েবসাইটে একরকম প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়ে যায়। তারপর, হস্তক্ষেপ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বদল হয় অনেক প্রার্থীর নাম। অভিষেক শিবির এবং আই-প্যাক তা মানতে নারাজ। এর মধ্যে একদা মমতার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা মদন মিত্রও (Madan Mitra) প্রকাশ্যে সিনিয়র নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। গত কয়েকদিনে যেভাবে তৃণমূলের এই সিনিয়র বনাম জুনিয়র পালা একেবারে রাস্তায় নেমে এসেছে, তাতে দলের শীর্ষ নেতাদের দলীয় বৈঠকে ডাকাটা মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পক্ষে আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। শনিবার বিকালেই সেই বৈঠক। যা কিন্তু, ঘাসফুল শিবিরের ভবিষ্যতের রূপরেখা গড়ে দিতে পারে।