দীর্ঘদিন ধরে সাপ ধরতেন তিনি। মাঝেমধ্যেই ডাক আসত বন দফতর থেকেও। সেই সাপের কামড়েই শেষ পর্যন্ত প্রাণ গেল প্রবীণ সর্প বিশারদ অনুপ ঘোষের। গত বৃহস্পতিবার হালিশহরের হাজিনগরে একটি বাড়িতে সাপ ধরতে গিয়ে চন্দ্রবোড়ার ছোবলে আহত হয়েছিলেন অনুপবাবু।
ব্যারাকপুরের নাপিতপাড়ার বাসিন্দা অনুপ ব্রিটানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন। কিন্তু বরাবরই পশুপ্রেমী হিসেবে এলাকায় নাম ছিল তাঁর। বিশেষত সর্প বিশারদ হিসেবে যথেষ্টই পরিচিত ছিলেন তিনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপ, হনুমান, পেঁচার মতো পশুপাখিদের উদ্ধাপ করে বন দফতরের হাতে তুলে দিতেন অনুপবাবু। সাপ ধরার জন্য প্রায়শই তাঁকে ডেকে নিয়ে যেত বন দফতর।
আরও পড়ুন- ভালোবাসায় চরম সর্বনাশ, পোষা পাইথনের আদরে প্রাণ গেল সুন্দরীর
অনুপবাবুর এক প্রতিবেশী জানান, গত বৃহস্পতিবার হালিশহরের হাজিনগরে একটি বাড়ির থেকে সাপ ধরার জন্য তাঁকে ডেকে নিয়ে যান বন দফতরের কর্মীরা। একটি বাড়ির টালির চালের মধ্যে তিনটি চন্দ্রবোড়া সাপ লুকিয়ে ছিল বলে জানা গিয়েছে। ওই প্রতিবেশীর বয়ান অনুযায়ী, প্রথম দু'টি সাপকে ধরে ব্যাগে ভরে ফেলেন অনুপবাবু। কিন্তু তৃতীয় সাপটিকে ধরে ব্যাগে ভরার সময়ই আচমকা সেটি বেরিয়ে এসে তাঁর শরীরে ছোবল মারে।
আহত অনুপবাবুকে সঙ্গে সঙ্গে নৈহাটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু রবিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, কমে যায় রক্তচাপ। কল্যাণীর হাসপাতাল থেকে অনুপবাবুকে কলকাতায় রেফার করা হয়। কিন্তু সরকারি কাজে গিয়ে আহত হলেও কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেডের অভাবে তাঁকে ভর্তি করা যায়নি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে অনুপবাবুকে ব্যারাকপুরের বি এন বোস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
অনুপবাবু যে সংস্থায় চাকরি করতেন, সেই ব্রিটানিয়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অবস্থাও ভাল ছিল না। ফলে আর্থিক দিক দিয়েও খুব একটা স্বচ্ছল ছিল না অনুপবাবুর পরিবার। তার মধ্যেও সাপ নিয়ে সচেতনতায় বিভিন্ন জায়গায় কর্মশালা এবং প্রদর্শনী করতেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সেই সাপের কামড়েই প্রাণ গেল তাঁর। এই অবস্থায় প্রতিবেশীদের দাবি, অনুপবাবুর ছেলের সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হোক। স্থানীয় বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য হওয়ার পাশাপাশি সিপিএমেরও সদস্য ছিলেন প্রয়াত এই সর্প বিশারদ।