বগটুই, ঝালদা, রানিগঞ্জ, হাঁসখালি, খড়দহ, ফলতা, বাঁশদ্রোণী- আর এই তালিকায় এবার নবসংযোজন ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকের চন্দনেশ্বর এলাকা। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে যেভাবে এক মহিলাকে খুনের হুমকি দিতে দেখা যাচ্ছে এক তৃণমূল নেতাকে তাতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এমনকী কাঠগড়ায় ভাঙড় থানা।
পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ। আর তার জেরেই এক মহিলাকে গুলি করে খুন করার হুমকি দিতে দেখা গেল এক তৃণমূল নেতাকে। ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙর ১ নম্বর ব্লকের চন্দনেশ্বর এলাকায়। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার নাম শাজাহান মোল্লা। তিনি ভাঙর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি। এই ঘটনায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়। আর সেই ভাইরাল ভিডিও-তেই শাজাহান মোল্লাকে অশ্রাব্য ভাষার প্রয়োগ করে খুনের হুমকি দিতে দেখা গিয়েছে। যদিও, ভিডিও-র অডিও তাঁর নয় বলে পাল্টা দাবি করেছেন শাজাহান। সেই সঙ্গে তাঁর আরও দাবি যে এটা কবেকার ভিডিও তা তিনি মনে করতে পারছেন না। কারণ যেদিন এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেদিন তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।
যে মহিলাকে গুলি করে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে, তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, সাড়ে চোদ্দ বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই শাজাহানের সঙ্গে তাঁদের পারিবারিক বিবাদ চলছে। এই জমিতে রয়েছে এক বিশাল আমবাগান। শাজাহান গায়ের জোরে এই জমি দখল করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। তাঁর আরও অভিযোগ, এই জমিতে একটি অবৈতনিক ফ্রি স্কুল চালাতেন তিনি। এই কাজে তাঁর মা-ও সাহায্য করতেন। উদ্দেশ্য ছিল এলাকার দুস্থ পরিবারের ছেলে-মেয়েকে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ দেওয়া। কিন্তু বছর খানেক আগে সেই স্কুল ভেঙে দিয়েছেন শাজাহান মোল্লা। এরপর থেকে তিনি এবং তাঁর মা ওই জমিতে যাওয়ার চেষ্টা করলেই শাজাহান মোল্লা এবং তাঁর লোকজন তাঁদের নিগ্রহ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। ঘাড় ধাক্কা, হাতে এবং শরীরে বাড়ি মারা-তো হয় সেই সঙ্গে কীটনাশক ছিটিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন, বেআইনি অর্থলগ্নির সংস্থার প্রতারণার পর্দা ফাঁস, নাসিক থেকে কলকাতা পুলিশের জালে ১৪
অভিযোগকারিণীর আরও জানিয়েছেন, ৮ এপ্রিল তিনি এবং তাঁর মা ফের বিতর্কিত জমির আমবাগানে গিয়েছিলেন। সেই সময় শাজাহান মোল্লা এবং তাঁর দলবল তাঁদের উপরে চড়াও হয়। রডের বাড়ি মেরে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী মাটিতে পড়ার পরও পায়ে রডের বাড়ি মারা হয় বলে অভিযোগ। গায়ে কীটনাশক ছিটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। এতে হাতে এবং মুখের বিভিন্ন অংশে কীটনাশক পড়ে। আর এই দিনই শাজাহান মোল্লা গুলি করে খুনের হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ। এই ঘটনার সময় শাজাহান মোল্লার সঙ্গে পুলিশ দেহরক্ষীও ছিল। অথচ সেই সব পুলিশকর্মীও নিশ্চুপ দুই মহিলার উপরে হামলার বিরোধিতাও করেননি।
আরও পড়ুন, আজ থেকেই শুরু বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন, বড় লগ্নির আশায় পশ্চিমবঙ্গ
অভিযোগকারিণীর বয়ানে কাঠগড়ায় ভাঙড় থানাও। অভিযোগকারী মহিলা জানিয়েছেন, এরপর তিনি ভাঙড় থানায় শাজাহান মোল্লার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে যান। কিন্তু থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নাকি এফআইআর দায়ের করতে অস্বীকার করেন। সেই পুলিশকর্মী নাকি জানিয়েছিলেন, এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা শাজাহান মোল্লার বিরুদ্ধে কোনওভাবেই এফআইআর দায়ের করা যাবে না বা কোনও অভিযোগ নেওয়া যাবে না। মহিলা জানিয়েছেন শেষমেশ তিনি একটি জেনারেল ডায়েরি করে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন। যদিও, ভাঙড় থানা এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তৃণমূল নেতাদের প্রভাব এবং দলগত প্রভাব স্থানীয় পুলিশের উপরে কতটা তা ঝালদাকাণ্ডে সামনে এসেছে। যেখানে কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দুকে গুলি করে খুনের ঘটনায় ভাইরাল হয়েছে স্থানীয় থানার আইসি-র অডিও ক্লিপ। যেখানে আইসি-কে পরিস্কার বলতে শোনা যাচ্ছে ঝালদা পুরসভার পুরবোর্ড গঠন নিয়ে তপন কান্দুর সঙ্গে দরকষাকষি নিয়ে সওয়াল করতে। যদিও, এই ঘটনায় এখন সিবিআই তদন্ত চলছে। সেই একই রকম ঘটনার সাদৃশ্য যেন ভাঙড় থানার ভূমিকাতেও।
যেখানে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। সেখানে কীভাবে দিনে-দুপুরে একজন মহিলাকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুনের হুমকি- এই নিয়ে ফের একবার প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এই ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন এবং রাজ্য সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নিশানা করেছেন। শাজাহান মোল্লা যখন হুমকি দিয়েছিলেন তখন তাঁর পাশে পুলিশ ছিল তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে এটা হচ্ছেটা কী?এমন প্রশ্নও তুলেছেন সুজন। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষও ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রাকাশ্যে কাউন্সিলার খুন হয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলার এই পরিস্থিতির মধ্যে কত কিছু বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, কেই কি পাগল হয়েছে এমন পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যে কোনও বিনিয়োগ করবে?
আরও পড়ুন, যৌন সঙ্গমের পরেই কি খুন, বীরভূমের কীর্ণাহারে বিধবা মহিলার দেহ উদ্ধার
রাজ্য জুড়েই বারবার সামনে আসছে তৃণমূল নেতাদের দাপট এবং গোষ্ঠীকোন্দল। ফলতাতে এক ইঞ্জিনিয়ার এবং তাঁর স্ত্রীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করেছেন এক তৃণমূল নেতা। সেই ইঞ্জিনিয়ার এখন বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন এবং নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। খড়দহ রহড়ায় রাস্তার উপরেই এক তৃণমূল কর্মীকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও এখন ভাইরাল নেটদুনিয়ায়।