
হুগলির গুপ্তিপাড়ায় পুলিশের চোখের সামনেই লুট হল জগন্নাথের খাদ্য ভান্ডার! খাবার ভর্তি মালসা বুকে আগলে এলাকা ছাড়তে পারবেই বাঁচন ভক্তগণ। এমনই অবস্থা। ভোগ লুঠ করতে অন্নভোগ লাগল গায়ে-পায়ে। কিন্তু এটাই নাকি প্রচীন রীতি। হুগলির গুপ্তিপাড়া বড়বাজার জগন্নাথদেবের মাসির বাড়িতে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশ আর জনতা। অপর দিকে, দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে চলল লুঠপাটের চেষ্টা। শুধু মাত্র উল্টো রথের আগের দিন গুপ্তিপাড়াতে এই দৃশ্য দেখা যায়। প্রায় শতাধিক স্থানীয় মানুষ এই দিনে জগন্নাথের প্রসাদ লুট করতে আসরে নামেন। যতক্ষন না ভোগের মালসা দখলে আসে ততক্ষণ চলে লড়াই। ভোগের মালসা নিয়েই ভক্তরা বাড়ির পথে এগিয়ে যান।
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন রথযাত্রা হল গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা। মাহেশের রথের মতো এই রথযাত্রাও খুব বিখ্যাত। এখানে উল্টো রথের আগের দিন প্রথা মেনে ভান্ডার লুঠ হয়, যা আজও চলে আসছে। ৮০০ ভোগের মালসা নিমিষে লুট হয়ে যায়। ভোগের প্রসাদ পান উপস্থিত ভক্তরাও। উল্টো রথের আগের দিন এই ভান্ডার লুট প্রথা চালু রয়েছে গুপ্তিপাড়ায়।
গুপ্তিপাড়ার ২৮৬ বছরের প্রাচীন রথের বৈশিষ্ট্য হল এই ভান্ডার লুট। যার পিছনে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। পুরাণে কথিত রয়েছে, দ্বিতীয়ায় রথে চেপে মাসির বাড়ি আসেন প্রভু জগন্নাথ। বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও বাড়িতে না ফেরায় লক্ষ্মীদেবী দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তিনি জগন্নাথকে ফেরাতে দূত পাঠান। এদিকে বহু অনুনয়-বিনয়েও মাসির বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি নন জগন্নাথ। দেবী লক্ষী নিজে চেষ্টা করলেও সফল হন না। উল্টো রথের আগের দিন জমিদার বৃন্দাবন চন্দ্র ও কৃষ্ণচন্দ্র দুজনেই এই বিষয়ে জানতে পারেন। ভালো খাবার না পেয়ে যাতে বাধ্য হয়ে জগন্নাথ মাসির বাড়ির ত্যাগ করেন সেই কারণেই তারা লেঠেল নিয়ে গুপ্তিপাড়া মাসির বাড়িতে লুটপাট চালান। শোনা যায়, তখন থেকেই গুপ্তিপাড়ায় উল্টো রথের আগের দিন ভান্ডার লুট প্রথা চালু রয়েছে।
ভান্ডার লুট দেখতে হাজির হন হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি ক্রাইম অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্র। তিনি বলেন, “বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই লুট চলে আসছে। নিরাপত্তার কোন খামতি রাখা হয়নি। ড্রোন ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছিল।” তবে পুলিশ যে ভান্ডার লুট আটকাতে পারেনি সেই নিয়ে উত্তর দিতে পারেননি তিনি!