কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, এই প্রভাবশালীদের সঙ্গে রাজনীতির সক্রিয় যোগাযোগ রয়েছে। শুধু তাইই নয়, এরা অনেকেই বেআইনিভাবে কয়লা, গরু এবং বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে দাবি করেছে ইডি।
বঙ্গ রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে লটারি। শাসক গোষ্ঠীর নেতাদের দুর্নীতির সঙ্গে লটারি যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা নিয়ে একাধিকবার সংবাদমাধ্যমের সামনে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এরপর প্রকাশ্যে আসে গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর মেয়ে সহ অন্যান্য বহু ঘনিষ্ঠদের লটারি জয়ের কথা। লটারি জিতে একেকজন যে বিপুল অঙ্কের টাকা জিতেছিলেন, তার প্রমাণও দাখিল করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কিন্তু, এই লটারি কাণ্ডে শুধু যে অনুব্রত মণ্ডলের নাম নেই, এই বিষয়টি আবার নাড়া দিল তদন্তের গতিপথে।
সূত্রের খবর, এলাকায় ‘প্রভাবশালী’ বলে পরিচিত প্রায় ১২ জন ব্যক্তি গত কয়েক বছরে নির্দিষ্ট একটি কোম্পানির লটারি জিতেছেন বেশ কয়েকবার। তবে, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই লটারিতে জেতা টাকার অঙ্ক এক কোটির নীচে। এই কারণে কখনও তাঁদের কারুর ছবি সহ বিজ্ঞাপন কোথাও প্রকাশিত হয়নি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, এই প্রভাবশালীদের সঙ্গে রাজনীতির সক্রিয় যোগাযোগ রয়েছে। শুধু তাইই নয়, এরা অনেকেই বেআইনিভাবে কয়লা, গরু এবং বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে দাবি করেছে ইডি। বিষয়টি নজরে আসতেই এবার এই প্রভাবশালীদের ব্যাঙ্কের নথি পরীক্ষা করে দেখার কাজ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
গরুপাচার মামলার তদন্তে নেমে ইডির অফিসাররা জানতে পারেন, নির্দিষ্ট একটি লটারি কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। প্রথমে লটারি জেতেন কোনও একজন সাধারণ গ্রাহক, তাঁর নামেই ধার্য হয় পুরষ্কার মূল্য। কিন্তু সেই প্রাপকের কাছ থেকে জোর করে তাঁর টিকিটটি নিয়ে নিতেন প্রভাবশালীরা। এরপর সেই নম্বর পাঠিয়ে দেওয়া হত সংশ্লিষ্ট লটারি সংস্থার কর্তাদের কাছে। বিষয়টি সম্পর্কে বিশদে জানতে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয় ওই লটারি সংস্থার এক কর্মীকে। তিনিই সমস্ত তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিভিন্ন সময় বারবার লটারি জিতেছেন। শুধুমাত্র বীরভূম নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও এরকম বহু ব্যক্তিরা আছেন। কেউ কেউ আবার জেতা টিকিট দিয়েছেন নিজের আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠদের। কালো টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আসল প্রাপকের কাছে। আর পুরস্কারের টাকা জমা পড়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয়দের অ্যাকাউন্টে। এই টাকার অঙ্ক মোটামুটি থেকেছে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষের মধ্যে। অনেকবারই তাঁরা এই অঙ্কের লটারি জিতেছেন। এতে লাভ হয়েছে দুদিক থেকেই। প্রথমত, কোটি টাকার লটারি না মেলায় এঁদের কারুর নাম খ্যাত হয়নি, খবরের কাগজে ছবিও বেরোয়নি। দ্বিতীয়ত, বারবার লটারি জিতে নিয়ে বিপুল পরিমাণ কালো টাকাকে ঘুরপথে সাদাও করা হয়ে গিয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র মারফৎ ইডি জানতে পেরেছে, যেসমস্ত ব্যক্তি ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার মধ্যে লটারি জিতেছেন, তাঁদের খোঁজ করতেন প্রভাবশালীরা। খোঁজ মেলার পর তাঁদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হতো নগদ টাকার থলি। ওই টাকা দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে টিকিট নিয়ে নেওয়া হতো। এরপর টিকিটের নম্বরটি লটারি সংস্থার আধিকারিকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হত। এভাবেই কালো টাকা সাদা হয়ে যেত।
আরও পড়ুন-
শরীর থেকে খুলে উড়িয়ে দেওয়া হিজাব কি এবার নড়িয়ে দিল ইরান প্রশাসনের গদি? হিজাব আইন ‘ভেবে দেখছি’, বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল
পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবি নিয়ে ফের আন্দোলনে কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড ফোরাম, উত্তরবঙ্গে ১২ ঘণ্টা ধরে রেল অবরোধ
ভূপতিনগরের বিস্ফোরণস্থলে বিজেপি, বম্ব স্কোয়াডের কর্তাদের সামনেই হুড়মুড় করে তাড়া করলেন তৃণমূল সমর্থকরা