
রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধন পর্বে আরও কড়া নজরদারি শুরু করল মুখ্য নির্বাচনী দফতর। সারা রাজ্যে মোট ৮০,৬৮১টি বুথের মধ্যে ২,২০৮টি বুথে একটি ‘Uncollectible Form’ ও ফেরত আসেনি । এই অস্বাভাবিক পরিসংখ্যান দেখে চমকে উঠেছে সিইও দফতর। সংশ্লিষ্ট সমস্ত বুথের DEO ও ERO–দের কাছে জরুরি ভিত্তিতে রিপোর্ট তলব করেছে অফিস। মঙ্গলবারের মধ্যেই সেই রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ফর্ম শূন্য বুথ দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। রয়েছে ৭৬০টি। এর পরে রয়েছে পুরুলিয়া (২২৮), মুর্শিদাবাদ (২২৬), মালদহ (২১৬) ও নদিয়া (১৩০)। শুধু তাই নয়, ৫৪২টি বুথ থেকে মাত্র ১টি করে ফর্ম, ৪২০টি বুথ থেকে ২টি করে, এবং ৩৭২টি বুথ থেকে ৩টি করে ‘Uncollectible Form’ সংগ্রহ হয়েছে। সিইও দফতরের মতে, এত কম ফর্ম ফেরত আসা বিষয়টি অত্যন্ত সন্দেহজনক বলে জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর।
রাজ্যের ভোটার তালিকা ডিজিটাইজেশনের হার নানা জায়গায় বড় রকমের অমিল দেখাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। উত্তর কলকাতায় ফর্ম ডিজিটাইজেশন ৭০.৬২% Uncollectable Form ১৯.১২%।
দক্ষিণ কলকাতায় ডিজিটাইজেশন - ৭৩.১৯% Uncollectable Form - ১৯.৩৮%।
ডিজিটাইজেশন উত্তর ২৪ পরগনায়—৮৮.২৫% Uncollectable Form— ৭%।
বসিরহাট উত্তরে ডিজিটাইজেশন—৯৬.০৫% Uncollectable Form— ৩.৭%।
ডিজিটাইজেশন ভাটপাড়ায়—৭৪.০৯%।
Uncollectable Form ব্যারাকপুরে—১৫.৬২%।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ ভোটার তালিকা নিবিড় সমীক্ষায় ৪৩ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে খসড়া তালিকা থেকে । এর মধ্যে মৃত ভোটার : ২১ লক্ষ ৪৫ হাজার। মোট অমিল নাম : ৪৩ লক্ষ এর মধ্যে—অনুপস্থিত ভোটার : ৫ লক্ষ ৫৩ হাজার ।স্থানান্তরিত : ১৫ লক্ষ ১৩ হাজার। ভুয়ো বা ডুপ্লিকেট ভোটারের সংখ্যা : ৯৮,৬০০। এই হিসেব সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এর বেশি স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি কমিশন।
এসব পরিস্থিতির মধ্যেই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ পিছিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্ভুল তালিকা প্রস্তুতের স্বার্থে সব জেলা–জুড়ে আরও কড়া স্ক্রুটিনির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে নিযুক্ত পর্যবেক্ষকরা কড়া নজর রাখছেন । পাশাপশি রাজ্যে এলেন কমিশনের তিন উচ্চপদস্থ আধিকারিক । প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিসি পাত্র, সেক্রেটারি সৌম্যজিৎ ঘোষ ও আন্ডার সেক্রেটারি বিভর আগরওয়াল সোমবার কলকাতায় পৌঁছেছেন। তাঁরা প্রতিদিন SIR-এর অগ্রগতি ও গরমিল–সংক্রান্ত রিপোর্ট রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও দিল্লির সদর দফতরে পাঠাবেন।
সোমবার জারি করা সিইও দফতরের নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে— ০ থেকে ২০টি Uncollectible Form থাকা বুথগুলোকে বিশেষ নজরে রাখতে হবে। ০ থেকে ১০টি ফর্ম ফেরত আসা বুথের সংখ্যা ৭,৮৪৪টি। ০ থেকে ২০ ধরা হলে এই সংখ্যা আরও বাড়ছে—এগুলোই এখন নজরদারির মূল ক্ষেত্র।
১) অনুপস্থিত ভোটারের হয়ে পরিবারের কেউ সই করলে BLO–কে ফোন বা বাড়ি গিয়ে যাচাই করতেই হবে। ২) BLO অ্যাপে ফর্ম এন্ট্রির ভুল থাকলে ‘Rollback/Correction’ ব্যবহার করে ঠিক করতে হবে। ৩) ২০২৪ লোকসভা ও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে ‘Sensitive’ বুথগুলিকে অগ্রাধিকারে স্ক্রুটিনি করতে হবে। ৪) ম্যাপিং ৫০% বা তার বেশি—এমন বুথে বিশেষ নজরদারি। ৫) মৃত ভোটারদের তথ্য—জন্ম-মৃত্যু ও রেশন কার্ড তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে যাচাই করতে হবে।
সিইও দফতরের বাড়তি নজর : যেসব তথ্য ফের যাচাই বাধ্যতামূলক
৬০+ বয়সী ভোটারদের ২০০২ অনুযায়ী তথ্য রি–চেক।
২০২৫ লিস্টে অভিভাবকের নাম বনাম BLO ম্যাপিংয়ে থাকা অভিভাবকের নাম—ম্যাচ না হলে পুনরায় যাচাই। ২০০২ সালের লিস্টে অভিভাবক–সন্তানের নামে যদি বয়সের ব্যবধান ৪৫ বছরের বেশি বা ১৮ বছরের কম—তাহলে সেটিও খতিয়ে দেখা বাধ্যতামূলক।