পুলিশ সূত্রে খবর, লকডাউন চলাকালীন গৃহবধূ সুপ্রিয়া দত্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই আসক্ত হয়ে পড়েন। সেই আসক্তিই তাঁর কাল হল।
ডাকাতির পর খুনের কাণ্ড ঘুরেফিরে বদলে গেল অন্য পর্যায়ে। রায়গঞ্জের গৃহবধূ খুনের পেছনে তাঁর ব্যাঙ্কে যাওয়া বা লকার থেকে গয়না নিয়ে আসার কারণে যে প্রাথমিক সন্দেহ করেছিলেন পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা, সেই সন্দেহ আমূল ঘুরে গিয়ে তৈরি হল এক নতুন ধোঁয়াশা। উত্তর দিনাজপুর জেলার জেলা পরিষদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী সুপ্রিয়া দত্তকে গলা কেটে খুন করেন কোনও এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। খুন হওয়ার আগে তিনি বিয়েবাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা বা গয়না আনতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তাঁর স্বামী, সেখান থেকে ফিরেই তিনি বাড়িতে ঢুকেছিলেন এবং আর বের হননি বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলত, স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ করা হয়েছিল যে তাঁর গয়না হাতানোর জন্য তাঁকে খুন করা হয়েছে এবং খুন করেছে কোনও পরিচিত ব্যক্তিই। কিন্তু, আদতে ঘটনা তা নয়।
রায়গঞ্জে গৃহবধূ খুনের ঘটনায় এবার ১ অভিযুক্তকে চিহ্নিত করল পুলিশ। তদন্তের মাধ্যমে জানা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া মারফত ধৃত যুবকের সঙ্গে গৃহবধূ সুপ্রিয়া দত্তর পরিচয় হয়েছিল। পরিচয় থেকে বেড়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠতাও তৈরি হয় বলে ধারণা। তবে সম্প্রতি সুপ্রিয়া তাঁর পরকীয়া সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। এই আক্রোশের কারণেই ওই যুবক এই মহিলাকে খুন করেছে বলে পুলিশের অনুমান। তদন্ত করে বের করা গেছে ওই যুবকের ঠিকানাও। কিন্তু, অভিযুক্তকে এখনও পর্যন্ত ধরা যায়নি। আপাতত তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, রবিবার সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য দিয়েছেন পুলিশ সুপার সানা আখতার।
রায়গঞ্জের রবীন্দ্রপল্লীর বাড়িতে নিজের স্বামী ও ছেলের সঙ্গে থাকতেন সুপ্রিয়া দত্ত। শুক্রবার ভর সন্ধ্যায় তাঁর ছেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখতে পান বিছানার ওপরে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছে সুপ্রিয়ার নিথর দেহ। পাড়ার লোকজনকে খবর দেওয়ার পর পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিহতের বাড়ির সংলগ্ন এলাকার সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। দেখা যায়, ওইদিন বিকেলের দিকে এক অচেনা যুবক ওই মহিলার বাড়িতে ঢুকেছিলেন, যিনি ওই পাড়ার বাসিন্দা বা মৃতের কোনও আত্মীয় নন। তাঁর পিঠে একটি ব্যাগ ছিল বলে দেখা গেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই যুবক একটি সরকারি বাসে করে মৃত মহিলার বাড়িতে এসেছিলেন। সুপ্রিয়া দত্তের স্কুল-পড়ুয়া ছেলেও এই যুবককে চিহ্নিত করতে পেরেছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, লকডাউন চলাকালীন গৃহবধূ সুপ্রিয়া দত্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই আসক্ত হয়ে পড়েন। সেই সুবাদে ওই অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের সঙ্গে অনলাইনে তাঁর পরিচয় হয়। তারপর দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। মাঝে মাঝেই ওই যুবক রায়গঞ্জের বাড়িতে যাতায়াত করত বলে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন নিহত মহিলার নাবালক ছেলে। পুলিশের কাছে তাঁর দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর মা খুবই সক্রিয় থাকতেন এবং ফোনে কোনও অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে ফিসফিস করে কথাও বলতেন। এই বয়ান ঘিরেই শিলমোহর পাচ্ছে মৃতার পরকীয়ার বিষয়টি। পুলিশের সন্দেহ, গত কয়েকদিন ধরে ওই মহিলার সঙ্গে যুবকের মনোমালিন্য চলছিল। সেই কারণেই পরকীয়া থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিলেন তিনি। প্রেম ভেঙে যাওয়ার আক্রোশে তাঁকে গলা কেটে খুন করে দেওয়া হয় বলে মনে করছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই সোশ্যাল মিডিয়ার ‘বন্ধু’ আদতে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের চ্যাংরাবান্ধা এলাকার বাসিন্দা।
আরও পড়ুন-
ইস্তানবুলে হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বড়সড় পুলিশি সাফল্য, পাকড়াও করা হল ১ ব্যক্তিকে
নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ শুরু হল শীতের কাঁপুনি দিয়ে, এক ধাক্কায় ২ ডিগ্রি পারদ পতন
ভগবানপুরে বিজেপির মিছিলে চলল গুলি, বোমাবাজির জেরে ছত্রভঙ্গ সম্পূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি