গত কয়েক বছরে একের পর এক ঘটনায় দেখা গিয়েছে ভিন রাজ্য থেকে সুপারি কিলার বা দুষ্কৃতিদের ভাড়া করে এনে অপরাধ সংগঠিত করার প্রণবনতা বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
একের পর এক সোনার দোকানি ডাকাতি, রাহাজানি, প্রকাশ্যে গুলি, লুঠ এবং খুনের ঘটনা। ঝাড়খন্ডে ও পশ্চিমবঙ্গে এই ধরণের ঘটনার হার বাড়ছে। কিন্তু কেন! উত্তর খুঁজতে নেমে পুলিশের মাথায় হাত। এই প্রতিটি অপরাধের যোগ রয়েছে বিহারের সঙ্গে। সম্প্রতি নিট পরীক্ষায় কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসায়, এই অভিযোগে আরও জোরদার সিলমোহর পড়েছে। এখানেই শেষ নয় বেলঘড়িয়ার রথতলায় প্রকাশ্যে এক ব্যবসায়ীর গাড়িতে শ্যুটআউটের ঘটনাতেও হাত রয়েছে সেই বিহারের।
কী চলছে?
পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে একের পর এক সোনার দোকানে লুঠ ও সোনার বদলে ঋণদানকারী সংস্থায় ডাকাতির ঘটনায় নাম জড়িয়েছে সুবোধ গ্যাংয়ের।
কে এই সুবোধ সিং ?
সুবোধ সিং একসময় ব্যারাকপুরে লুঠপাট ও ডাকাতি করত। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ২২ লক্ষ টাকা লুঠ করে তার অপরাধের জগতে পা-রাখা। সেখান থেকে সোনার দোকানে লুঠ ও ব্যবসায়ীদের থেকে তোলাবাজি করা শুরু করে সুবোধ সিং। একটা সময় গ্রেফতারও হয় সে। যদিও, সুবোধ সিংয়ের বাড়বাড়ন্তের পিছনে ব্যারাকপুরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার দায়ী বলে অভিযোগ।
খুনের বরাত নিতেও পিছপা হয় না এরা। আদতে বিহারের নালন্দার বাসিন্দা সুবোধের অপরাধের খড়ি ২০১০ সালে। পরবর্তী সময়ে ব্যারাকপুর, টিটাগড় এলাকায় কাউন্সিলর খুন থেকে শুট আউট যেমন করেছে। তেমনই তোলাবাজি নিয়ে ঝামেলার ঘটনা, সবেতেই নাম জড়িয়েছে সুবোধের। বিহারের বাসিন্দা হলেও সুবোধের বাংলা যোগ বেশ ভালো। তার জেরে একের পর এক অপরাধে জড়িয়েছে সে। পরবর্তী সময়ে গ্রেফতারও হয় সে। বর্তমানে নাকি বিহারের বেউর সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছে এই সুবোধ। জেলে বসেই নিজের গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছে বহাল তবিয়তে।
তবে সুবোধ গ্যাংয়ের অপরাধেই বিহার ক্রাইম ম্যাপ ভরে যাচ্ছে না। তালিকায় রয়েছে আরও নাম। গত কয়েক বছরে একের পর এক ঘটনায় দেখা গিয়েছে ভিন রাজ্য থেকে সুপারি কিলার বা দুষ্কৃতিদের ভাড়া করে এনে অপরাধ সংগঠিত করার প্রণবনতা বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
সম্প্রতি রাণাঘাট ও পুরুলিয়াতে প্রায় একই সময় একটি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। সেই ঘটনাতেও উঠে আসে বিহারের যোগ। একটা সময় ছিল যখন বিহার ঝাডখন্ড সুপারি কুখ্যাত সুপারি কিলারদের অনেক বেশি বাড়বাড়ন্ত ছিল। একজনকে খুন করতে ৫০০০০ থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিত সুপারি কিলার।
এখন সেই কুখাত সুপারি কিলারদের অনেকে হয় জেলবন্দী, না হলে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে ঠিক। তবে সুপারি কিলিং-এর ব্যবসা বন্ধ হয়নি। পুলিস সূত্রের খবর বিহারের গ্রুপগুলো পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ঝাড়খণ্ডে কাজ করে। আবার ঝাড়খণ্ডের গ্যাং বিহার-পশ্চিমবঙ্গে কাজ করে।
পুলিস সূত্রে খবর বিহার এর নালন্দা, বৈশালী, পটনা, গয়াতে ১৫-২০টা গ্যাং রয়েছে। পটনার সুবোধ সিং হোক বা কুখাত মহম্মদ সাহাবুদ্দিন, এখনও জেলে বসে এই র্যাকেট চালায় বলে অভিযোগ। পুলিস সূত্রের খবর, মূলত কনট্রাক্ট কিলিং-এর সঙ্গে যুক্ত লোকেরা শ্যুটার হিসাবে এখন কাজে ব্যবহার করছে অল্প বয়সী যুবকদের। যাদের পুরনো অপরাধের রেকর্ড কম।
একদিকে দারিদ্র অন্যদিকে অল্প সময় টাকা অর্জন করার নেশা থেকে কনট্রাক্ট কিলিং-এর কাজে ঝুঁকছে অল্প বয়সী যুবকরা। এরা মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে একজনকে খুন করতে রাজি হতে যাচ্ছে তারা। এর শেষ কোথায়, উত্তর খুঁজছে সাধারণ মানুষ। তবে সে প্রশ্নের উত্তর শেষ করার দায়িত্ব নেওয়ার সদিচ্ছা আদৌ কি পুলিশ প্রশাসনের রয়েছে?
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।