ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আঁকা শিখিয়ে সামান্য রোজগার করেন ভারতের রৌপ্য পদকজয়ী দৌড়বীর। সরকারি সাহায্যের আশায় এখনও দিন গোনেন অশীতিপর মা।
জয়নগর -মজিলপুর পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের রায়পাড়ায় থাকেন পুলক রায়। তাঁর প্রথম এবং প্রধান পরিচয় হল, তিনি ভারতের প্যারা-অলিম্পিক জয়ী খেলোয়াড়। ছোটবেলা থেকেই মানসিক বিকাশের সমস্যায় জর্জরিত তিনি এবং তাঁর দিদি সিতুল রায়। দুই ছেলেমেয়ের মানসিক অবস্থা দেখে তাঁদের খেলাধুলোয় ব্যস্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মা ও বাবা।
-
ছোটবেলা থেকেই ভালো দৌড়তে পারতেন দুই ভাই-বোন। পাড়ার মাঠে স্থানীয় কোচের কাছে শুরু করেছিলেন প্রশিক্ষণ। সেখান থেকে প্রতিযোগিতার পরিধি ক্রমশ বাড়তে বাড়তে কলকাতার একটি ক্লাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান তাঁরা। জেলা ও রাজ্য স্তরে মানসিক প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পর পর আসতে থাকে সফলতা। প্রচুর পদক জয় করতে করতে পুলক জাতীয় স্তরেও নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে সমর্থ হন। দিদি খেলেছিলেন রাজ্য স্তর পর্যন্ত।
-
জাতীয় স্তরে পর পর সোনা জিতে ২০১১ সালে গ্রিসের এথেন্সে আয়োজিত মানসিক প্রতিবন্ধীদের স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সে যাওয়ার সুযোগ পান। সেই অলিম্পিকে ৮০০ মিটার ও ১৫০০ মিটার দৌড়ে রুপো জয় করেছিলেন তিনি। সেই সাফল্য যতখানি আলো এসেছিল, তার বছরকয়েক পর থেকে পুরোটাই অন্ধকার।
-
পুলকের বাবা একটি দোকানে কাজ করতেন, মা গৃহবধূ। আর্থিক সমস্যা সত্ত্বেও মানসিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ছেলেমেয়েকে জয়নগরের বাড়ি থেকে কলকাতায় নিয়মিত প্রশিক্ষণে নিয়ে যেতেন বাবা ও মা। ছেলের সাফল্যের পর দারুণ আনন্দ পেয়েছিলেন তাঁর মা দুর্গা রায়। তিনি বলেন, জিতে আসার পরে কয়েকদিন খুব হইহই হয়েছিল। কলকাতায় ডেকে সম্মানও দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রীরাও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় পুরসভার তরফে ৫ হাজার টাকার আর্থিক সাহায্য ছাড়া আর বিশেষ কিছুই পাননি তাঁরা।
-
খেলাধুলোয় সাফল্য পেলে চাকরি পাওয়া যায় বলে শুনেছেন তাঁরা। কিন্তু, কোথায় চাকরি? ছেলেবেলায় খেলাধুলোর পাশাপাশি আঁকা শিখেছিলেন পুলক। সেই আঁকার পারদর্শীতা সম্বল করে এখন তিনি পাড়ার অঙ্কন-শিক্ষক। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আঁকা শিখিয়ে সামান্য রোজগার করেন ভারতের রৌপ্য পদকজয়ী দৌড়বীর। সরকারি সাহায্যের আশায় এখনও দিন গোনেন অশীতিপর মা।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।