লতিফের গাড়ির চালক নূর হোসেনকে আটক করে দফায় দফায় জেরা করছে পুলিশ। তাঁর বয়ানেই বোঝা গেছে যে, দুপুর প্রায় আড়াইটে থেকে সন্ধ্যা প্রায় ৬টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে আবদুল লতিফ, রাজু ঝা এবং ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে কোনও বিষয়ে বিস্তারিত মিটিং হয়েছিল।
দুর্গাপুরে কয়লা পাচার থেকে শুরু করে আরও কোন কোন দুর্নীতি-জগতের সাথে জড়িয়েছিলেন শক্তিগড় শুটআউটকাণ্ডে নিহত রাজেশ ওরফে রাজু ঝা? এই প্রশ্নেরই জট খুলছে বর্ধমানের গুলিকাণ্ডে অক্ষত ড্রাইভার নূর হোসেনকে আটক করে জেরা করার পর। রাজু ঝা বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হলেও ঘটনার দিন তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ আবদুল লতিফের গাড়িতেই সামনের সিটে বসে আসছিলেন তিনি। অনুব্রত মণ্ডল-ঘনিষ্ঠ আবদুল লতিফও ওই ঘটনার দিন একই গাড়িতে আসছিলেন বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন গাড়িচালক নূর। পুলিশ সূত্রে প্রকাশ হল তাঁর লিখিত বয়ান।
WB 48D/7032 নম্বরের সাদা রঙের SUV গাড়িটির মালিক আবদুল লতিফ, দীর্ঘদিন ধরেই গরুপাচার কাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে তাঁকে খুঁজছে সিবিআই। শনিবার ইলামবাজারে সকাল ৮টা নাগাদ তাঁর কাছে এসে ডিউটিতে যোগ দেয় চালক নূর হোসেন। ‘শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে আমার নিয়োগকর্তা তথা সাদা ফরচুনারের মালিক আব্দুল লতিফকে নিয়ে ইলামবাজার থেকে যাত্রা শুরু করি। লতিফের নির্দেশে দুর্গাপুরের ভিরিঙ্গি মোড় থেকে ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে গাড়িতে তুলেছিলাম। আমাকে দুর্গাপুর শহরের ফরচুন হোটেলে থামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে লতিফ এবং ব্রতীন দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে চলে যান।’
পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে যে, ইলামবাজার থেকে ফরচুন হোটেল পর্যন্ত আসতে সময় লাগতে পারে খুব বেশি হলে ১ ঘণ্টা, তার মানে, আবদুল এবং ব্রতীন, দুজনেই ওই হোটেলে ঢুকেছিলেন দুপুর ২টো বেজে ৪০ মিনিট নাগাদ। এরপর নূরের বয়ান অনুযায়ী, ‘সন্ধ্যা ৬টা ১০ নাগাদ আবদুল এবং ব্রতীন দুজনে রাজু ঝা-কে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন এবং আমাকে কলকাতার দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দিতে বলা হয়।’ এর থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে যে, দুপুর প্রায় আড়াইটে থেকে সন্ধ্যা প্রায় ৬টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে আবদুল লতিফ, রাজু ঝা এবং ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে কোনও বিষয়ে বিস্তারিত মিটিং হয়েছিল। কী বিষয়ে এই ৩ জনের মধ্যে মিটিং হতে পারে, সেই নিয়েই এখন তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।
এর মধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজে লক্ষ করা গেছে যে, আততায়ীদের ঝাড়খণ্ড থেকে নিয়ে আসার জন্য শনিবার ঝাড়খণ্ড সীমানার কাছে গিয়েছিল বিশেষ নীল গাড়িটি। ইডি সোমবার রাজু ঝা-কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডেকে পাঠাতেই শনিবার তাঁকে গুলি করে দেওয়া হয়। ড্রাইভার নূর জানিয়েছেন যে, শনিবার সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টা নাগাদ রাজুই তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে একটু দাঁড়াতে। তখন রাজু ছাড়া বাকি প্রত্যেকে গাড়ি থেকে নেমে ঝালমুড়ি কিনতে গিয়েছিলেন। ঝালমুড়ি কিনে গাড়ির দিকে ফেরার সময় ব্রতীন চালক নূরকে নির্দেশ দেন ১ প্যাকেট পান মশলা কিনে আনার জন্য। পান মশলা কিনে ফেরার সময় নূর দেখতে পান যে, ৩ জন দুষ্কৃতী তাঁদের গাড়ির দিকে গুলি করছে, ব্রতীন গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাঁর হাত থেকে রক্ত পড়ছে। এই সময়ের মধ্যে লতিফ কোথায় পালিয়ে গেলেন, তা নূর দেখতে পাননি। নূর সবাইকে চিৎকার করে ডাকার আগেই দুষ্কৃতীরা নীল গাড়িটায় করে পালিয়ে যায়। তাহলে কি গাড়িটির ওই জায়গায় দাঁড়ানো প্রসঙ্গে আততায়ীরা আগে থেকে নিশ্চিত ছিল না? রাজ্য সড়কের ওপর ফাঁকা জায়গা থেকে লতিফ হঠাৎ করে কীভাবে গায়েব হয়ে গেলেন? রাজুর সঙ্গে ব্রতীনের গুলি লাগলেও অক্ষত রয়ে গেলেন আবদুল লতিফ! এই প্রত্যেকটি বিষয় ব্যাপকভাবে জট পাকিয়েছে রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। বহু ‘মিসিং লিঙ্ক’ নিয়েই এখন চিন্তায় পড়েছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন-
চলন্ত ট্রেনে মা-বাবা সহ শিশুর গায়ে আগুন, কেরলের হিংসার ঘটনায় মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরি স্টেশন থেকে গ্রেফতার যুবক
Sikkim News: যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বরফের পুরু চাদর ভেদ করে সিকিমে চলছে উদ্ধারকাজ, বাংলার ২ পর্যটকের মৃত্যু
বঙ্গে দাঙ্গা লাগানোর দায়ে সুমিত সাউকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, ‘তৃণমূল বিজেপি উভয়ের জন্যই কাজ করত’, বলছেন তাঁর মা