সোমবার সন্ধ্যার আগে বাসুদেব বৈদ্য নৌকার মাথার দিকে বসে কাঁকড়া ধরার জন্য সুত বা দোন ফেলার কাজ করছিলেন। তখনই অতর্কিতে তাঁর ওপরে এসে পড়ে প্রাণঘাতী বিপদ।
জীবিকা নির্বাহ করেন নদীর পাড়ে কাঁকড়া ধরে। কিন্তু, পেট চালানোর দায়ে দিয়ে দিতে হল গোটা জীবনটাই। সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার নৌকোয় উঠে পড়ল হোগল বনের রাজা। অকালেই প্রাণ দিতে হল কুলতলির তরুণ মৎস্যজীবীকে। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তরুণের নাম বাসুদেব বৈদ্য, বয়স প্রায় ৩৫ বছর। বৃহস্পতিবার সুন্দরবনের কুলতলি ব্লকের দেউলবাড়ি-দেবীপুর পঞ্চায়েত এলাকার দেউলবাড়ি গ্রাম থেকে একটি নৌকায় চেপে বাসুদেব সহ মোট তিনজন মৎস্যজীবী সুন্দরবনের নদীখাড়িতে কাঁকড়া ধরার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। বেশ কয়েকদিন ধরেই তাঁরা কাঁকড়া ধরার কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে।
সোমবার সন্ধ্যা হওয়ার আগে যখন বাসুদেব বৈদ্য নৌকার মাথার দিকে বসে কাঁকড়া ধরার জন্য সুত বা দোন ফেলার কাজ করছিলেন, তখনই অতর্কিতে তাঁর ওপরে এসে পড়ে প্রাণঘাতী বিপদ। ম্যানগ্রোভের ঝোপের মধ্যে থেকে বেরিয়ে নদীর পাড় ধরে একটি বাঘ অতি সন্তর্পণে উঠে পড়েছিল মৎস্যজীবীদের নৌকোর ওপরে। সেই বাঘটিই বাসুদেবকে সামনে পেয়ে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর ওপর। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ঘাড়ে একটা মারণ কামড় বসিয়ে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে জন্তুটি। সেই সময় নৌকার ভেতরদিকে ছিলেন বাসুদেবের আরও দু’জন সঙ্গী। তাঁরা তড়িঘড়ি লাঠি, বৈঠা নিয়ে বাঘটিকে আঘাত করতে শুরু করেন, তখন বাঘটি বাসুদেবকে ছেড়ে দিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় বাসুদেবকে উদ্ধার করে নৌকায় তুলে নিয়ে গ্রামে নিয়ে আসেন তাঁর সঙ্গীরা।
মোবাইল মারফৎ ঘটনার খবর পেয়ে নদী থেকেই তাঁকে উদ্ধার করতে নৌকো নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন কুলতলির গ্রামের অন্যান্য মৎস্যজীবীরা। কিন্তু, আঘাত অত্যন্ত গুরুতর থাকার দরুন গ্রামে নিয়ে আসার পথেই প্রবল রক্তক্ষরণের জেরে প্রাণ চলে যায় বাসুদেব বৈদ্যর। মঙ্গলবার তাঁর নিথর দেহ নিয়ে নৌকোগুলি গ্রামের জেটিঘাটে ফিরে আসে। মৎস্যজীবীর মৃত্যুর খবর গ্রামে গিয়ে পৌঁছতেই স্থানীয় বাসিন্দারা জেটি ঘাটে ভিড় জমাতে শুরু করেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সমগ্র দেউলবাড়ি গ্রাম মৃত্যু শোকে আচ্ছন্ন। বাসুদেবের অকাল মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কুলতলি থানার পুলিশের পক্ষ থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে, পরিবার সূত্রে জানা গেছে বাসুদেব বৈদ্যরা প্রত্যেকে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। তবে যে এলাকায় কাঁকড়া ধরতে ঢুকেছিলেন সেটি কোর জঙ্গল কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন বন দফতরের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন-
ডেস মোইনেস থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একের পর এক গুলিবর্ষণকাণ্ডে রক্তাক্ত আমেরিকা
৩ দিন পরেই মেঘালয়ে নির্বাচন, তার আগে তৃণমূলের ইস্তাহার প্রকাশ করতে চলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়