ছেলের মারে রীতিমত জখম মা। মায়ের অপরাধার সিপিএম-এর মিছিলে সামিল হওয়ায়। যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ছেলে। অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে পুলিশ।
গ্রামে সিপিএম-এর পদযাত্রার আয়োজন নিয়ে ছিল বেশ উচ্ছাস। স্বাভাবিকভাবেই আবেগ বাঁধ মানেনি বৃদ্ধা শিখা লেটের। লালঝান্ডার প্রতি তাঁর দীর্ঘদিনের ভালবাসা। তাই হাতে তুলে নিয়েছিলেন লালঝান্ডা। গোটা পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন একরাশ আনন্দ নিয়ে। এই ছিল হতদরিদ্র মহিলার 'অপরাধ'। তারই খেসারতে বেধড়ক মার খেয়ে কোমরে, পায়ে গুরুতর জখম নিয়ে হয়েছেন শয্যাশায়ী প্রৌঢ়া। অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন বৃদ্ধা। তবে তাঁকে মারধার করায় মূল অভিযুক্ত কিন্তু অন্য কেউ নয়, তাঁরা নিজের গর্ভের সন্তান- ছেলে। যদিও ছেলের আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তা হল ছেলে তৃণমূল নেতা আর স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য।
শুনলে চমকে যেতে হয়। নিজের ছেলেই তার মায়ের উপর করেছে এমন পাশবিক আচরণ। কারণ ছেলে গাঁয়ের মাতব্বর। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা নিয়েই ছেলের বিরুদ্ধে মা দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশের। অভিযোগ জানিয়েছেন আহত মা।
শনিবার দুপুরের বীরভূমের মাড়্গ্রাম থানার দুনিগ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামের ঘটনা। সেখানেই গত বৃহস্পতিবার হয়েছিল লালঝান্ডার 'চোর তাড়াও, গ্রাম জাগাও' পদযাত্রা। ওই পদযাত্রায় স্বামী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে সামিল হয়েছিলেন শিখা লেট। শিখা লেটের বড় ছেলে বিধান লেটের তাতে রীতিমত গেরে যায়। কারণ সে যে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। স্থানীয়দের অভিযোগ পঞ্চায়েত হল লুঠের আখড়া। আর লেই লুঠের বখরা পায় বিধানও। তাই পরিবারের সদস্যদা সিপিএম-এর পঞ্চায়েত দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিছিলে সামিল হওয়ায় স্বভাবতই তার মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়। পঞ্চায়েতের চুরির প্রতিবাদে হওয়া পদযাত্রায় সামিল হয়েছেন তারই ঘরের লোকেরা মানতে পারেননি বিধান লেট। বৃহস্পতিবার থেকে রাগপুষে রেখেছিল বিধান।
শনিবার দুপুরে মাকে আচমকা মারধর শুরু করে সে। মদ্যপ অবস্থায় এই মারধর করেছে বলেই অভিযোগ মায়ের। ছেলের হাতে মার খাওয়ার পর যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মাড়্গ্রাম থানায় হাজির হন শিখা লেট। সঙ্গে পান গাঁয়ের অনেককেই। থানায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বৃদ্ধা বলেন, ''লালঝান্ডার মিছিল হচ্ছে দেখে আনন্দ হয়েছিল খুব। তাই মিছিলে চলে গিয়েছিলাম। এরজন্যই আমার বড় ছেলে আমার গলা টিপে ধরে , লাথি মারে। তারপর তুলে আছাড় মারে।আমার কোমড়, পায়ে খুব যন্ত্রনা করছে। আমি দাঁড়াতে পারছি না। সোজা হতে পারছি না।' বৃদ্ধা আরও বলেন, 'ছেলে আমার সঙ্গে থাকে না। আমাকে দেখেও না। আমার তিন বিঘা সম্পত্তিও নিয়ে নিয়েছে আগেই।' মাকে নিয়ে থানায় যাওয়া বৃদ্ধার ছোট ছেলে শ্রীধন লেট যিনি নিজেও সামিল হয়েছিলেন পদযাত্রায়। তিনি বলেন, 'দাদা তৃণমূলের দুনিগ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। খুব দাপট দেখায়। মাকে দেখে না। বের করে দিয়েছে। মা আমার কাছেই থাকে। কষ্ট করেই মা ও অসুস্থ বাবাকে নিয়েই আমাদের সংসার চালাতে হয়। এদিন দুপুরে হঠাৎ আমার ছোট ছোট দুই ছেলে এসে মাকে মারার খবর দেয়। আমি ছুটে গিয়ে দেখি এই কান্ড।'
আক্রান্ত বৃদ্ধাকে নিয়ে থানায় ছুটে আসেন সকলে। যেহেতু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে টালবাহানা করে পুলিশ বলে অভিযোগ। শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় বৃদ্ধাকে। থানা থেকেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বসোয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে শিখা লেটের। সিপিএম নেতা সঞ্জীব বর্মন বলেন, 'ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত থেকে ব্লক, মহকুমা পর্যন্ত প্রতিবাদ হবে। তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।' অভিযুক্ত তৃণমূল সদস্য বিধান লেটের দাবি, 'সিপিএম-তৃণমূলের কোনও ব্যাপারই নয়। আমার বউয়ের সঙ্গে অশান্তি হচ্ছিল মায়ের। আমি দুজনকেই বকাবকি করে চুপ করতে বলি। তারপর হয়ত মা ঘরে ঢুকতে গিয়ে পড়ে গিয়েছে। মা মিছিল করেছে আমি জানিই না।' জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, 'অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। '
আরও পড়ুনঃ
বব বিশ্বাসেই থেমে থাকতে রাজি নন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, জানালেন তাঁর স্বপ্নের চরিত্রের কথা
সোমবার-ই নার্কো টেস্ট হবে শ্রদ্ধার 'খুনি প্রেমিক' আফতাবের, মঙ্গলবার শেষ পুলিশ হেফাজতের দিন
১২ বছরের মেয়ে মা হল কলকাতার হাসতালে, দিল্লিতে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার নাবালিকা