টুইটারে একের পর এক কটাক্ষের তীর। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনায় অমিতাভ বচ্চনের বক্তব্যকে ঘিরে তৃণমূল বনাম বিজেপি তরজা তুঙ্গে।
নিজেকে যথা সম্ভব রাজনৈতিক আলোচনা থেকে দূরে রাখতেই পছন্দ করেন ভারতীয় সিনেমার ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’। নিজের হয়ে গুনগান করা তো দূর অস্ত, নিজের স্ত্রীয়ের রাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গেও তিনি মুখ খোলেননি কোনও দিন। ১৫ ডিসেম্বর কলকাতায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনায় সেই অমিতাভ বচ্চনই ছিলেন প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু, তাঁর বক্তব্য ঘিরেই এবার গোল বাঁধল এবং সেই জল গড়িয়ে গেল বেশ দূর অবদি।
'টানা তিন বছর কলকাতায় আসতে পারিনি, তাই অনেক কষ্ট হয়েছে। মমতাদি, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, আবার আমাকে এখানে নিমন্ত্রণ করার জন্য।' ২৮তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে এই বলেই নিজের বক্তব্য শুরু করেন 'বিগ বি'। তিনি বলেন, 'কলকাতা আমার বাড়ির মতো, আমি আপনাদের জামাইবাবু, জীবনভর জামাই-ই থাকব।'
এরপর অমিতাভ বচ্চন বলেন, ‘১৯৫২ সালে সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট সেন্সরশিপের কাঠামো নির্ধারণ করে, যেটি এখনও পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড (সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন) দ্বারা। কিন্তু, এখনও উপস্থিত পুরুষ ও মহিলারা, মঞ্চে থাকা আমার সহকর্মীরা আমার সঙ্গে একমত হবেন যে আজকাল নাগরিক স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।’ বলা বাহুল্য, সম্প্রতি ভারতে সেন্সরশিপ বা চলচ্চিত্র ব্যান করে দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে সরব হন অমিতাভ। 'নাগরিক স্বাধীনতা' এবং 'মত প্রকাশের স্বাধীনতা'-র কথাও উঠে এল তাঁর বক্তব্যে। আর, এই বক্তব্যটি নিয়েই শুরু হয়ে গেল জোর রাজনৈতিক চর্চা।
বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে তাঁর এই বক্তব্যটিকে হাতিয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন , “এটা পেরেক দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করা হল। ধন্যবাদ শ্রী বচ্চন, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার শিকারদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।”
বিজেপি আইটি সেলের প্রধান এবং পশ্চিমবঙ্গের সহ-ইনচার্জ অমিত মালব্য অমিতাভের বক্তব্য টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে লিখেছেন, “অমিতাভ বচ্চনের কথাগুলি এর চেয়ে বেশি যথাযথ হতে পারে না, কারণ তা কলকাতায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে বলা হয়েছে। এটা হল এক অত্যাচারীর সামনে আয়না ধরার মতো ঘটনা, যাঁর নেতৃত্বে সারা ভারত নির্বাচন-পরবর্তীকালীন সর্বোচ্চ রক্তক্ষয়ী হিংসার সাক্ষী থেকেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়েছেন।”
অমিত মালব্যর এই টুইটটি আবার রিটুইট করে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান লিখেছেন, “এক অত্যাচারী শাসকের প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করা, সাংবাদিকদের আটক করা এবং সত্য কথা বলার জন্য সাধারণ মানুষকে শাস্তি দেওয়া। বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আটকে দেওয়ার অর্থ ঠিক এটাই। বিজেপির শাসনকালেই এই সবকিছু ঘটছে আর শ্রী অমিত মালব্য অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ব্যস্ত।”
আরেকদিকে, সাংসদ মহুয়া মৈত্র টুইট করে লিখেছেন, “ইসসস! বিজেপি যদি একটা বুদ্ধিসম্পন্ন ট্রোলার ভাড়া করতে পারত মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। বচ্চন জি হলেন বাংলার ‘জামাই’। তিনি তাঁর দ্বিতীয় বাড়ির মাটিকে চেনেন। তিনি জানেন, এই জায়গায় স্বাধীনতা এবং সাহসীদের বাস। তাই তিনি কিফের মঞ্চকেই বেছে নিয়েছেন বিজেপির শিল্পকলায় বয়কট ও নিষেধাজ্ঞা জারি করার স্বভাবের নিন্দার জন্য।’
অর্থাৎ, কেন্দ্রের শাসকদল যখন উঠেপড়ে লেগেছে রাজ্যের শাসকদলকে দোষী করার জন্য, তখন বঙ্গের শাসক শিবিরের পক্ষ থেকেও একে একে সাংসদরা সরব হয়ে উঠছেন কেন্দ্রের ‘স্বেচ্ছাচারিতা’-র দিকে আঙুল তুলে।
আরও পড়ুন-
শুক্রবার রাতেই কলকাতায় অমিত শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বঙ্গে চলছে বড়দিনের প্রতীক্ষা, তবে সপ্তাহের শেষের দিকে তাপমাত্রার পারদ নিম্নমুখী হলেও জাঁকিয়ে শীত এখনও অধরা
হোয়াটসঅ্যাপের ডেটা লিক হয়নি, হ্যাকারের জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে ব্যবহারকারীদের এবার নিশ্চিন্ত করল অ্যাপ কর্তৃপক্ষ