সংক্ষিপ্ত

কেউ কেউ বলেন, ভগবান শিবের রাগের কারণে, কেউ আবার বলেন, শনিদেবের প্রতি দেবী পার্বতীর ভুলের কারণে… স্নেহের পুত্র গণেশের মাথায় কেন প্রতিষ্ঠিত হল হাতির মস্তক?

জ্ঞান এবং বুদ্ধির দেবতা সিদ্ধিদাতা গণেশ। সারা বিশ্বের মানুষ ভক্তিভরে তাঁর পুজো করে থাকেন। শিব এবং পার্বতীর অত্যন্ত স্নেহের পুত্র রূপে জ্ঞাত এই দেবতার জন্ম এবং জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে বিবিধ কাহিনী প্রচলিত আছে। তারই মধ্যে একটি কাহিনী হল যে, জন্মের সময় শিশু গণেশের মাথা ছিল একেবারে মানুষের মতোই। কিন্তু, বিশেষ কারণবশত তাঁর সেই মাথাটি বাদ চলে যায়। তার জায়গায় বসানো হয় একটি হাতির মাথা। উত্তর দিকে শুয়ে থাকা শিশু হাতির মাথা কেন বসানো হয়েছিল মস্তকহীন গণেশ দেবতার ধড়ে?

শিব পুরাণ অনুযায়ী, 
দেবী পার্বতীর মানস-পুত্র গণেশ। দেবী যখন স্নান করতে যেতেন, তখন দরজায় পাহারা দিতেন এই শক্তিশালী পুত্র। একদিন ভগবান শিব নিজের সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে গৃহে প্রবেশ করতে এলে গণেশ তাঁকে বাধা দেন, কারণ, দেবী পার্বতী তখন ভিতরে স্নান করছিলেন। বাধা পেয়ে মহাদেব প্রচণ্ড রেগে গেলেন, তিনি ভিতরে যাওয়ার জন্য জেদ ধরলে মায়ের বাধ্য পুত্র গণেশ তাঁকে যুদ্ধে আহ্বান করেন। সেই যুদ্ধে নিজের ত্রিশূল দিয়ে গণেশের মাথা কেটে ফেলেন শিব। 

ছেলের নিথর দেহ দেখে পার্বতী একেবারে মহামায়া রূপ ধারণ করেন। সারা বিশ্ব তখন তাঁর রোষানলে। বাঁচার উপায় খুঁজতে স্বর্গে‌র সমস্ত দেবতারা তখন তাঁকে শান্ত করতে এগিয়ে আসেন। মা পার্বতী তখন দুটি শর্ত রাখেন, প্রথম শর্তে, পুনরায় গণেশের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত,  তাঁর পুত্র গণেশ যেন সমস্ত দেবতাদের পুজোর আগে পূজিত হয়। তাঁর দুটি দাবিই মেনে নেওয়া হয়, এরপর দেবতারা ভগবান শিবের কাছে যান। শিব তখন নিজের অনুচরদের জানান যে, উত্তর দিকে মুখ করে আছে, এমন যেকোনও কাউকে দেখতে পেলেই তাঁর মুন্ড যেন নিয়ে আসা হয়। শিবের অনুচররা যেতে যেতে প্রথমেই উত্তর দিকে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকা এক হস্তি শাবককে দেখতে পান। তার মাথাই নিয়ে আসা হয় এবং মস্তকহীন গণেশের দেহে সেই হাতির মাথা লাগিয়ে দিয়েই পুনরায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, 
ভগবান বিষ্ণুর শঙ্খ, চক্র ,গদা এবং পদ্মধারী রূপ দেখে দেবী পার্বতী অবিকল তাঁর মতো একটি সন্তান কামনা করেছিলেন। এই কামনা তিনি ভগবান বিষ্ণুকে জানালে, বিষ্ণু তাঁকে নিজের ইচ্ছেমতো পুত্র সন্তান পাওয়ার বর দান করেন। এরপর পার্বতীর গর্ভে শ্রীবিষ্ণুর মতো একটি সন্তান জন্ম গ্রহন করে। মহা ধুমধাম সহ যখন সেই সন্তানকে সকল দেবদেবী দর্শন করতে এলেন। শনি দেব সেইস্থানে উপস্থিত হয়েও পার্বতীর সন্তানের মুখ দেখতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাঁর ওপর তাঁর স্ত্রীয়ের অভিশাপ ছিল যে, তিনি যার দিকে দৃষ্টি দেবেন, তারই দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে যাবে। 

কিন্তু, এই অভিশাপের কথা দেবী পার্বতীর জানা ছিল না। তিনি বারবার শনি দেবকে অনুরোধ করতে থাকেন পুত্র গণেশকে দেখে আশীর্বাদ করার জন্য। তাঁর অনেক জোরাজুরির পর শনিদেব বাধ্য হয়ে পার্বতীর পুত্রের দিকে দৃষ্টিপাত করেন এবং তৎক্ষণাৎ নবজাতক শিশুর মাথাটি শরীর থেকে ছিন্ন হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে হুলস্থুল পড়ে যায়, মা পার্বতী জ্ঞান হারান। তখন ভগবান বিষ্ণু এক হস্তী শাবকের মাথা নিয়ে এসে পার্বতীর মস্তকহীন সন্তানের দেহে স্থাপন করেন এবং প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন।

আরও পড়ুন- 

PM Modi News: প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মান পেয়ে কেঁদে ফেললেন তামিলনাড়ুর জাল-নির্মাতা, বিশ্বকর্মা যোজনায় অনাবিল মুহূর্ত
Modi Mamata: ইউনেস্কোর ওয়র্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় কবিগুরুর শান্তিনিকেতন, আনন্দ প্রকাশ করলেন মোদী ও মমতা
Weather News: ভাদ্রের প্যাচপ্যাচে গরম থেকে রেহাইয়ের পূর্বাভাস, ঝেঁপে বৃষ্টি হবে কোন কোন জেলায়?