সংক্ষিপ্ত
পুরাণ অনুসারে, শিবের সঙ্গে নন্দীর পূজা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন এমন নিয়ম প্রচলিত রয়েছে, জেনে নিন।
মহা শিবরাত্রির দিন মহাদেবের ভক্তরা শিবর্চন, রুদ্রাভিষেক, মন্ত্র জপ, উপবাস প্রভৃতি পালন করেন। এই নিয়মের মাধ্যমে পুণ্য অর্জিত হয় এবং সকল মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। তবে, মহাদেবের পূজার সময় তাঁর সহচর নন্দীর পূজা করার রীতি রয়েছে। এই নন্দী হলেন ভোলানাথের ষাঁড়। প্রত্যেক শিব মন্দিরে ষাঁড়ের মূর্তি দেখা যায়। এমন নিয়ম ভক্তদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে কেন, তার নেপথ্যে রয়েছে একটি পুরা-কাহিনী।
-
শিবপুরাণ অনুসারে, মা পার্বতী একবার ভগবান শিবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হে দেবাদিদেব মহাদেব! আপনি কখন আপনার ভক্তদের ইচ্ছা পূরণ করেন?’ তখন ভগবান শিব তাঁকে বলেছিলেন, ‘প্রথমে গণপতির পূজা না করলে কোনও পূজাই সম্পূর্ণ হয় না। ভক্তরা আমার সঙ্গে আপনার ও কার্তিকের পূজা করেন, কিন্তু আমার প্রিয় বাহন নন্দীকে পূজা করেন না, এটা আমার ভালো লাগে না। আমার আশীর্বাদ পেতে হলে নন্দীর পূজাও করতে হবে।’
-
শিব ও পার্বতীর এই কথোপকথন অনুসারে, পূর্ণ ফল লাভের জন্য ভক্তদের শিব পূজার সঙ্গে শিবের প্রিয় নন্দীরকেও পূজা করতে হয়। নন্দীকে লোকভাষায় একই অর্থে ষাঁড় বলা হয়। বিখ্যাত সংস্কৃত পৌরাণিক গ্রন্থে বৃষ রাশির অর্থ ষাঁড় এবং ধর্ম -ও ষাঁড়, তাই বৃষ হল ধর্মের প্রতীক এবং শিব ধর্মের বাহনে চড়ে সারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেন বলে বিশ্বাস করা হয়। শুধু তাই নয়, অন্ন, দুধ, ঘি ও বৃষ্টিকে বিশ্ব সৃষ্টির পুষ্টি উপাদান মনে করা হয়, বৃষ রাশিকে এই সব কিছুরই প্রতীক বলা হয়, তাই নন্দীর পূজাকে ধর্মের পূজা বলে মনে করা হয়।
ভারতীয় উৎসবের মূল উদ্দেশ্য হল ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা। ষাঁড়কে সবুজ ঘাস বা শস্যাদি খাওয়ানো এবং মন্দিরে নন্দীর পূজা করা একই বলে বিশ্বাস করা হয়। বিষ্ণু ধর্মোত্তর পুরাণে নন্দীকে তিন চোখ বিশিষ্ট ত্রিশূল ধারক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, মৎস্য পুরাণে মহর্ষি ভৃগু ও নন্দীর মধ্যে দ্বন্দ্বের বর্ণনা রয়েছে, নন্দীকে শিব সবসময় নিজের কাছে রাখেন, এই কারণে শিবকে নন্দীশ্বরও বলা হয়।
-
মহাভারতে নন্দীকে বৃষভধ্বজ বলা হয়েছে, পুরাণে নন্দীকে একটি অতুলনীয় শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, নন্দী শিবের সঙ্গে একই পদে বিশিষ্ট, তাই শিব যেখানেই আছেন, সেখানেই নন্দী আছেন। বিশ্বাস অনুসারে, নন্দী শিবের দ্বাররক্ষক এবং শিবের আট মহাশক্তির গুরু। পুরাণে বলা হয়েছে যে, প্রজাপতি ব্রহ্মা ভগবান শিবকে এই নন্দী ষাঁড় দিয়েছিলেন, তাই শিবের পূজার সময় নন্দীকে প্রণাম করা এবং ফুল ইত্যাদি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। আজও শিব মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বারে নন্দী ষাঁড়ের মূর্তি রয়েছে। ভক্তরা শিবের পাশাপাশি নন্দীর মূর্তির ওপরেও জল এবং দুধ ঢেলে পূজা করেন।