সংক্ষিপ্ত

মহাবিশ্বে শিবলিঙ্গের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল? তার নেপথ্যে রয়েছে একটি বিশেষ পৌরাণিক কাহিনী। পুরাণে স্বয়ং ভগবান শিবই এই কাহিনী বর্ণনা করেছেন।

মহাশিবরাত্রিতে ভক্তরা দেবাদিদেব মহাদেবের পূজা করে শিবলিঙ্গের ওপরে জল ঢালেন। এই শিবলিঙ্গের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল? তার নেপথ্যে রয়েছে একটি বিশেষ পৌরাণিক কাহিনী।  পুরাণে স্বয়ং ভগবান শিবই এই কাহিনী বর্ণনা করেছেন। মহর্ষি বেদব্যাস দ্বাপর যুগে শিবপুরাণকে ১৮ টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। শিব শব্দের অর্থ হল পরম কল্যাণকর এবং লিঙ্গ মানে হল, সৃষ্টি। সংস্কৃতে লিঙ্গ মানে প্রতীক। এভাবেই, শিবলিঙ্গের অর্থ হল শিবের প্রতীক।


 

শিবলিঙ্গের ওপর জল ঢালা হয়, তার কারণ – 


সমুদ্র মন্থন ( দুধের মহাসাগর মন্থন ) গল্পে এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে । দেবতা এবং অসুররা যখন জীবনের অমৃত পাওয়ার জন্য দুধের মহাসাগর মন্থন শুরু করেছিলেন, তখন সেখান থেকে প্রথম যে জিনিসটি নির্গত হয়েছিল, তা হল হলাহল বা কালাকুটা, অর্থাৎ, বিষ। অন্য আরেকটি মতে, যেহেতু বাসুকি সাপকে দড়ির মতো ব্যবহার করে সমুদ্র মন্থন করা হয়েছিল, সেজন্য অমৃত বেরিয়ে আসার আগে, বাসুকি সাপের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল বিপুল পরিমাণ বিষ। এটি ছিল একেবারে প্রাণঘাতী গরল। মহাবিশ্বের সমস্ত সৃষ্টিকে নিমেষের মধ্যে ধ্বংস করে দিতে পারত সেই হলাহল। তাই, দেবতা এবং দানবরা মিলে ভগবান শিবকে এটি পান করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বিষ পান করে নিলে মহাবিশ্ব রক্ষা পাবে, এমনই বলা হয়েছিল। 


প্রচণ্ড মারাত্মক বিষ নিজের দেহে ধারণ করার ক্ষমতা ছিল একমাত্র দেবাদিদেব মহাদেবেরই। তিনি সকল দেবতা এবং অসুরদের অনুরোধ মঞ্জুর করলেন এবং সেই বিষ পান করলেন। এই বিষ যদি তাঁর শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ত, তাহলে তা তাঁকে তীব্র কষ্টের যন্ত্রণা দিত। তাই, ভোলানাথকে যন্ত্রণা থেকে বাঁচানোর জন্য দেবী পার্বতী তাঁর গলায় হাত রেখে বিষ শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা রোধ করে দিয়েছিলেন। 

শরীর জুড়ে হলাহল ছড়িয়ে না পড়লেও ভগবান শিবের গলায় থাকার দরুন তা তাঁর গলাকে নীল করে দিয়েছিল এবং সারা দেহে প্রচুর তাপ উৎপন্ন করেছিল। তাই ভগবান বিষ্ণু তাঁর দেহের তাপ কমানোর জন্য দেবতাদের নির্দেশ দেন, যে, সবাই যেন শিবের উপর জল ঢালতে শুরু করেন। 


এই কারণে নীলকণ্ঠের শরীরের তাপ কমাতে এবং তাঁর ব্যথা প্রশমিত করার জন্য, একটি জল পূর্ণ পাত্র সর্বদা শিব লিঙ্গের উপর ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং তার উপরে সারাদিন জুড়ে জল পড়তে থাকে।