সংক্ষিপ্ত

বাঙালি গৃহিণীরা নিজের সন্তান এর মঙ্গল কামনায় নীরোগ সুস্থ জীবন কামনা করে এই ব্রত পালন করেন। বাঙালির বিশেষ উৎসব নববর্ষ। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পালন করা হয় নীল ষষ্ঠী বা নীল পূজা।

 

নীলপূজা বা নীলষষ্ঠী হল বাংলার হিন্দুসমাজের এক লৌকিক উৎসব, যা মূলত শিব-দুর্গার বিবাহ বা শিবের বিয়ে নামে পরিচিত। বাঙালি গৃহিণীরা নিজের সন্তান এর মঙ্গল কামনায় নীরোগ সুস্থ জীবন কামনা করে এই ব্রত পালন করেন। এছাড়া বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। এক উৎসবের শেষ তো আরেক উৎসবের সূচণা। ঠিক একই রকম ভাবে সামনেই বাঙালির বিশেষ উৎসব নববর্ষ। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পালন করা হয় নীল ষষ্ঠী বা নীল পূজা।

নীল ষষ্ঠী ২০২৩ নির্ঘন্ট-

এই বছর নীল ষষ্ঠী বা নীল পূজা ইংরেজির নীল পুজা বা নীল ষষ্ঠী ২৯ চৈত্র ১৪২৯, ইংরেজির ১৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার ২০২৩ পালিত হবে।

নীল উৎসবের সূচণার পৌরানিক কাহিনি-

কাহিনি অনুসারে, দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর শিবজায়া সতী পুনরায় সুন্দরী কন্যারূপে নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে আবির্ভূত হন। রাজা তাকে নিজ কন্যারূপে লালন-পালন করে শিবের সঙ্গে বিয়ে দেন। বাসর ঘরে নীলাবতী শিবকে মোহিত করেন এবং পরে মক্ষিপারূপ ধরে ফুলের সঙ্গে জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। রাজা-রাণীও শোকে প্রাণবিসর্জন দেন। নীলপূজা শিব ও নীলাবতীরই বিবাহ-অনুষ্ঠানের স্মারক।

নদিয়া জেলার নবদ্বীপের গাজন উৎসবের একটি অংশ হিসাবে বাসন্তী পুজোর দশমীর ভোরে শিবের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। নীল বা নীলকণ্ঠ মহাদেব শিবের অপর নাম। সেই নীল বা শিবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে উপলক্ষ্যে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান সংঘটিত হয়।

নীল ষষ্ঠীর উৎসবের বিশেষত্ব-

সন্তানের মঙ্গল কামনায় হিন্দু নারীরা সারাদিন উপবাস রেখে সন্তানের আয়ু বৃদ্ধির কামনায় 'নীল ষষ্ঠী'র ব্রত করে। নীলপূজার পর সন্ধ্যাবেলায় শিবমন্দিরে বাতি দিয়ে জলগ্রহণ করে।

নিম বা বেল কাঠ থেকে নীলের মূর্তি তৈরি হয়। চৈত্রসংক্রান্তির বেশ আগেই নীলকে মণ্ডপ থেকে নিচে নামানো হয়। নীলপূজার আগের দিন অধিবাস, অধিক রাত্রে হয় হাজরা পূজা অর্থাৎ বিয়ে উপলক্ষে সকল দেবতাকে আমন্ত্রণ করা।

হাজরা পূজায় শিবের চেলা বা ভূত-প্রেতের দেবতাকে পোড়া শোল মাছের ভোগ দেওয়া হয়। পরদিন নীলপূজার সময় নীলকে গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে নতুন লালশালু কাপড় পরিয়ে অন্ততপক্ষে সাতটি বাড়িতে নীলকে ঘোরানো হয়।

নীলপূজা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, হাওড়ায় এছাড়া বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, বরিশাল এবং ত্রিপুরায় বাঙালি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

নীলের গানকে বলা হয় অষ্টক গান। ঐদিন সন্ধ্যাবেলায় সন্তানবতী হিন্দু রমণীরা সন্তানের কল্যাণার্থে প্রদীপ জ্বালিয়ে শিবপূজা করে সারাদিনের উপবাস ভঙ্গ করেন।

সাধারণত চৈত্রসংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন নীলপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নীল সন্ন্যাসীরা ও শিব-দুর্গার সঙেরা পূজার সময়ে নীলকে সুসজ্জিত করে গীতিবাদ্য সহযোগে বাড়ি বাড়ি ঘোরান এবং ভিক্ষা সংগ্রহ করেন।