সংক্ষিপ্ত

যুগযুগান্তর ধরে বিশ্বের সমস্ত প্রেমিক-প্রেমিকার মনে আশা জুগিয়ে চলা ভগবান শ্রী কৃষ্ণের এই প্রেম কাহিনীতে এক বিষম বড় বাধা ছিলেন রাধার স্বামী আয়ান ঘোষ। প্রশ্ন ওঠে, কেন শ্রী কৃষ্ণকে ভালোবাসার পরেও আয়ান ঘোষকে বিয়ে করেছিলেন রাধা?

‘থাকতে গৃহে আপন স্বামী – ভাগ্নে প্রেমে মজলো মামী’, এই বলে প্রাচীন কাল থেকে যে পৌরাণিক 'প্রেমিকা'-কে কটাক্ষ করা হয়, সেই রাধারানি আসলে সারা বিশ্বে ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক। শ্রী কৃষ্ণ এবং রাধার প্রেম সমগ্র পৃথিবীতে এক দৃষ্টান্ত। বয়স, সম্পর্ক অথবা দূরত্ব, কোনও দিক থেকেই এই যুগলের প্রেম সমাজের রক্তচক্ষুর কাছে হার মানেনি। পুরাণ-কথা অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ আসলে নারায়ণের অষ্টম অবতার এবং রাধা হলেন লক্ষ্মীর রূপ। যুগযুগান্তর ধরে বিশ্বের সমস্ত প্রেমিক-প্রেমিকার মনে আশা জুগিয়ে চলা ভগবান শ্রী কৃষ্ণের এই প্রেম কাহিনীতে এক বিষম বড় বাধা ছিলেন রাধার স্বামী আয়ান ঘোষ। প্রশ্ন ওঠে, কেন শ্রী কৃষ্ণকে ভালোবাসার পরেও আয়ান ঘোষকে বিয়ে করেছিলেন রাধা? 

-
 

উপকথা অনুযায়ী, আয়ানের আসল নাম অভিমন্যু। গোকুলের কাছে জারত নামে একটি গ্রামে ছিল তাঁর বাস। পেশায় তিনি ছিলেন দুধের ব্যবসায়ী। তার বাবার নাম গোলা, মা জটিলা এবং বোন কুটিলা। সম্পর্কে, কৃষ্ণের পালিকা মা যশোদার তুতো ভাই ছিলেন আয়ান। তাঁর সঙ্গে রাধার বিয়ের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কৃষ্ণের পালক পিতা নন্দ মহারাজ। কালী-ভক্ত আয়ান ঘোষ অধিকাংশ সময়ে পুজো-অর্চনা নিয়েই মেতে থাকতেন। অন্য কোনও বিষয়ে তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল না এবং তিনি ছিলেন নপুংসক, অর্থাৎ, সন্তান জন্ম দেবার কোনও ক্ষমতা তাঁর ছিল না। 


-

পূর্বজন্মে আয়ান বা অভিমন্যু একজন তপস্বী ছিলেন। তাঁর কঠোর তপস্যা ছিল ভগবান বিষ্ণুর দেখা পাওয়ার জন্য। বিষ্ণু তাঁর তপস্যায় মুগ্ধ হয়ে তাকে দর্শন দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের দেখা পেয়ে আয়ান ঘোষ খুবই খুশি হয়েছিলেন। ভগবান তখন তাঁকে একটি বর দিতে চান। বর চাইবার সুযোগ পেয়ে আয়ান ঘোষ বলেন, "আমি আপনার প্রিয়াকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পেতে চাই।" কিন্তু, বিষ্ণু এই বর দিতে মোটেই সম্মত হলেন না। তিনি বললেন, “ তুমি অন্য যে কোনও বর চাও। আমি দেবো।” আয়ান ঘোষ বললেন, “ আমি আর অন্য কোনও বর চাই না।”

-

আয়ানের জেদ দেখে বিষ্ণু অন্তর্হীত হলেন। এরপর থেকে আয়ান ঘোষ নিজের চারপাশে আগুন জ্বেলে আরও কঠোর তপস্যা শুরু করলেন। ভক্তের ডাকে ভগবানকে আবার ফিরে আসতেই হল। ভগবান বিষ্ণু আবার আয়ান ঘোষকে দর্শন দিলেন। এবং বর প্রার্থনা করতে বললেন। সেইবারেও আয়ান ঘোষ একই বর প্রার্থনা করলেন।

বাধ্য হয়ে নারায়ণ বললেন, ‘তথাস্তু’। তার সাথে সাথে তিনি এও বললেন যে, “আয়ান নিজের পরজন্মে রাধা-রূপী লক্ষ্মীকে স্ত্রী হিসেবে পাবেন, কিন্তু সেই জন্মে আয়ান নপুংসক হবেন।”


লক্ষীকে নিয়ে তিনি সংসার করতে পারবেন, কিন্তু কোনও দিন লক্ষ্মীর মন পাবেন না। লক্ষ্মীর মন জুড়ে কেবলই থাকবেন ভগবান বিষ্ণু (অর্থাৎ, তাঁর অবতার শ্রীকৃষ্ণ)। এই বর পেয়ে আয়ান ঘোষ একটুও বিচলিত হলেন না। কারণ, কথিত আছে, তিনি কামবাসনার সঙ্গি হওয়ার জন্য রাধাকে পেতে চাননি, তিনি কেবল নিজের ঘরে পুজো করবেন বলেই রাধাকে স্ত্রী রূপে পেতে চেয়েছিলেন।
 

এই বর অনুযায়ী, আয়ান ঘোষের জীবনে রাধারানী স্ত্রী হয়ে এলেন। কিন্তু, তিনি আয়ানকে বিয়ে করলেও তাঁদের মধ্যে কোনওদিন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। রাধা নিজের মৃত্যু পর্যন্ত কৃষ্ণের প্রেমের মগ্ন ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে আয়ান ঘোষের ভালোবাসার কোনও কাহিনী বর্ণিত নেই। 


-
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।