সংক্ষিপ্ত

এক সময় দেশের ২৪টি গাড়িতে এই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত। তাই এটিকে 'জাতীয় ডিজেল ইঞ্জিন' বলা হত। এই ইঞ্জিনের গুরুত্ব বিবেচনা করলে এটিকে গাড়ির ঈশ্বর বলাও ভুল হবে না। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ইঞ্জিনের যাত্রা এবং কেন এটি ভারতে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

ককালের গাড়ির 'ঈশ্বর' ছিল এই ইঞ্জিন, আজ অবধি অন্য কোনও ইঞ্জিন এত সম্মান পায়নি
বর্তমানে ভারতে ডিজেল ইঞ্জিন সহ একটি হ্যাচব্যাক আপনার হাতে গোনা যাবে। তবে একসময় ছিল যখন ছোট ডিজেল গাড়িগুলি ভারতে খুব জনপ্রিয় ছিল। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এই গাড়িগুলির বেশিরভাগেই একই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছিল। ইতালীয় সংস্থা ফিয়াটের ১.৩ লিটার মাল্টিজেট ডিজেল ইঞ্জিনের গল্পই এখানে বলছি।  এক সময় ২৪টি গাড়িতে এই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত। তাই এটিকে দেশের 'জাতীয় ডিজেল ইঞ্জিন' বলা হত। এই ইঞ্জিনের গুরুত্ব বিবেচনা করলে এটিকে গাড়ির ঈশ্বর বলাও ভুল হবে না। 

ফিয়াটের ১.৩ লিটার মাল্টিজেট ডিজেল ইঞ্জিন ভারতীয় অটোমোবাইল বাজারে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য পরিচিত। ভারতীয় রাস্তায় দীর্ঘ ও সফল যাত্রার জন্য এই ইঞ্জিনটি ছিল অসাধারণ। ২০০০ সালে ভারতে চালু হওয়া ফিয়াট ১.৩ লিটার মাল্টিজেট ডিজেল ইঞ্জিন  তার দুর্দান্ত মাইলেজ, শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচের কারণে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই ইঞ্জিনটি ভারতীয় অটোমোবাইল শিল্পে বিপ্লব ঘটায় এবং অনেক নামী গাড়ি নির্মাতাদের পছন্দের ইঞ্জিন হয়ে ওঠে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ইঞ্জিনের যাত্রা এবং কেন এটি ভারতে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

ইঞ্জিনের উৎপত্তি
১.৩ লিটার মাল্টিজেট ইঞ্জিনটি ২০০০ সালে ভারতে প্রথম ফিয়াট চালু করেছিল, তবে এটি কেবল ফিয়াট গাড়িতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। টাটা, মারুতি সুজুকির মতো নামী ভারতীয় সংস্থাগুলি এবং প্রিমিয়ারের মতো কিংবদন্তি সংস্থার গাড়িতেও এই ইঞ্জিন স্থান পেয়েছিল। টাটার জনপ্রিয় গাড়ি যেমন টাটা ইন্ডিকা, টাটা ইন্ডিগো এবং মারুতির সেরা বিক্রিত গাড়ি যেমন সুইফ্ট, ডিজায়ার, রিটজ - এই সমস্ত গাড়িতেই এই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত। একই সময়ে, শেভ্রলেট তাদের ভারতীয় মডেলগুলিতেও এই ইঞ্জিন ব্যবহার করেছিল। মোটকথা, সেই সময়ে ২৪টি মডেলে এই ইঞ্জিন ব্যবহার করা হত। মারুতি তাদের ২৫ শতাংশ মডেলে এই ইঞ্জিন ব্যবহার করেছিল।

চমৎকার মাইলেজ এবং পারফরম্যান্স
১.৩ লিটার মাল্টিজেট ইঞ্জিনটি তার দুর্দান্ত মাইলেজ এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য পরিচিত ছিল। সাধারণত, এই ইঞ্জিন সহ গাড়িগুলি প্রতি লিটারে ২০ থেকে ২৪ কিলোমিটার মাইলেজ দিত। সেই সময়ে ভারতীয় বাজারে এটি ছিল একটি বড় আকর্ষণ। এর কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং দীর্ঘমেয়াদী নির্ভরযোগ্যতা এটিকে অনেক ক্রেতার কাছে প্রথম পছন্দ করে তুলেছিল।

BS4 থেকে BS6 যাত্রা এবং চ্যালেঞ্জ
২০১৭ সালে, ভারত সরকার BS4 নির্গমন মান প্রয়োগ করে, যার পরেও এই ইঞ্জিন তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তবে, ২০২০ সালে BS6 নির্গমন মান কার্যকর হওয়ার পর, ফিয়াট এই ইঞ্জিনটি আপডেট না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফিয়াট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর, মারুতিও BS6 মান অনুসারে এই ইঞ্জিনটি আপডেট না করার সিদ্ধান্ত নেয়। BS6 ম্যান্ডেট অনুসারে এই ইঞ্জিনটি আপডেট করা খুব ব্যয়বহুল হত, যা এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ ছিল।

যাত্রা শেষ হয়েছিল এই সময়ে
BS6 মান কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে ভারতীয় বাজারে ফিয়াট ১.৩ লিটার মাল্টিজেট ইঞ্জিনের যাত্রা শেষ হয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ফিয়াট ঘোষণা করেছিল যে তারা এই ইঞ্জিনটি বন্ধ করবে, তবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শেষ  ফিয়াট ১.৩ লিটার মাল্টিজেট ডিজেল ইঞ্জিনটি বাজারে আসে। এর সাথে সাথে মারুতি, টাটার মতো সংস্থাগুলিও এই ইঞ্জিন ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। BS6 মানের পরে এর যুগ শেষ হয়ে যায়।  তবে পুরানো অনেক গাড়িতেই এর ঐতিহ্য এখনও বেঁচে আছে।  বিভিন্ন সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসা ৯,৬০,৭১৯ টি গাড়িতে এখনও এই মাল্টিজেট ডিজেল ইঞ্জিনই শক্তি যোগাচ্ছে। যাই হোক না কেন, এই ইঞ্জিনটি সেই সময়ে ভারতীয় অটোমোবাইল শিল্পকে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছিল এবং ডিজেল গাড়ির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছিল - এই নামেই এটি সবসময় মনে রাখা হবে। 

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।