সংক্ষিপ্ত
- 'বসন্ত বিলাপ'র সেই চারমূর্তি আর নেই
- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ অপর্ণা সেনের
- নিজের পরিচালনায় কীভাবে পেয়েছিলেন অভিনেতাকে
- পুরনো দিনের কথা ভেবে ভেঙে পড়লেন অপর্ণা সেন
শেষ মূর্তিও আর নেই। 'বসন্ত বিলাপ'র ছেলেদের সেই দলের অবসান। লালু, সিধু, গুপ্ত, শ্যাম। একে অপরের হরিহর আত্মা তারা। একে একে নক্ষত্রপতন হয়ে শ্যামও আর নেই। শোকপ্রকাশ করতে গিয়েই অপর্ণা সেন। 'বসন্ত বিলাপ'র পাশাপাশি নিজের পরিচালনায় পাওয়া সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা মনে করেই শোকে ভেঙে পড়লেন অপর্ণা সেন। তাঁর কাছে সৌমিত্র-অপর্ণা জুটি কখনও তেমন বিশেষ জায়গা জুড়ে ছিল না। বিশেষ জায়গা নিয়ে ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মত মানুষকে কাছ থেকে দেখতে পাওয়া।
অপর্ণা সেন জানান, "আমার প্রথম ছবির প্রথম নায়ক। ১৪ বছর বয়সে ওনাকে প্রথম দেখি। তখন ওঁকে কাকা ডাকতাম। পরবর্তীকালে যখন মুখে 'সৌমিত্র' বলে ডাকলেও মনে মনে কাকা হিসেবেও শ্রদ্ধা করতাম। জুটি হিসেবে সফল ছিলাম কিনা এসব নিয়ে কখনও আমরা ভাবিনি। সেই মানসিকতার মানুষ আমরা ছিলাম না। তবে একবার উনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, 'তুমি বড় পরিচালক হয়ে গেলে, আমার খুব মুশকিল হল। আমাদের জুটিটার কী হবে।' উনি আমায় সবসময় খেপিয়ে বলতেন, 'আমি তো ভাল অভিনেতা নই। আমায় কি তোমার ছবিতে নেবে।' আমি বলতাম ওনাকে পরিচালনা করতে গেলে আমাকেও সেই উপযুক্ত পর্যায় যেতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "'পারমিতার একদিন' ওনার জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয়ের মধ্যে একটি। ওনাকে আলাদা করে কিছু বলার প্রয়োজন পড়ত না। ওনার সঙ্গে কোথাও একটা মিল ছিল। ওনার ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল, আমার ছোট বোনও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। আমার মা, বাবার সঙ্গে খুব ভাব ছিল ওনার। আমাকে পাত্তাই দিতেন না তখন। তারপর ধীরে ধীরে বন্ধুস্থানীয় হয়ে উঠি। আমার না বলতে খুব অসুবিধা হচ্ছে, আমার ভিতরটা না শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমি না শেষ অবধি ভেবেছিলাম. . .।"
অসংখ্য স্মৃতিতে গলা কেঁপে উঠল অপর্ণা সেনের গলা। ছবির পাশপাশি সাহিত্য নিয়েও কথা হত। অপর্ণা সেনের চেনা জগতটা যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। একে একে কাছের মানুষদের হারিয়ে ফেলছেন তিনি। এই নিয়ে কথা বলতে গেলেই ভেঙে পড়ছেন তিনি। সত্যিই তো পরিবারের একজন সদস্যের মতই ছিলেন সৌমিত্র তাঁর কাছে। মাথার উপর থেকে যেন একজন গুরুজনের হাতটাই সরে গেল চিরজীবনের মত।