সংক্ষিপ্ত

  • সরকারি চাকরি ছেড়ে সৃজনশীলতার দিকে ঝোঁক
  • সেই খিদেই সিদ্ধার্থ মণ্ডলকে এনে ফেলে টলিউডে
  • 'রেফার' করার লোক ছিল না কেউ
  • নিজের জোরে ও পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর সাহায্যে আজ অন্যতম সহকারী পরিচালক থেকে অভিনেতা হয়ে উঠেছেন 

জীবনের ওঠা-পড়া, 'রিজেকশন', নিজের ক্ষমতায় টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করা, তারপর ক্রমাগত এগিয়ে চলা। প্রতিটি ভিন্ন অনুভূতি। তবে এই বিভিন্ন অনুভূতি গুলি বাঁধা এক সুতোর টানে। সেই সুতোই হল মনের জোর, আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই পুরুলিয়ার এক ছোট্ট গ্রামের ছেলে সিদ্ধার্থ মণ্ডল টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক কাজ করে চলেছেন, আগে সহকারী পরিচালক হিসাবে তো এখন অভিনেতা হিসাবে। নিজের যাত্রার সুখ, দুঃখ সবটা ভাগ করে নিলেন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি অদ্রিকা দাসের সঙ্গে। খোলাখুলি আলোচনা করলেন সমস্ত নিজের কঠিন সময়গুলি থেকে শুরু করে আজকের দিনের কথা। সরকারি চাকরি ছেড়ে কীভাবে এলেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে। স্বজনপোষণ নিয়েও মুখ খুললেন সিদ্ধার্থ মণ্ডল।  

 

Click and drag to move

 

অদ্রিকাঃ কাশীপুর থেকে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি? সরকারি 'সিকিওরড' চাকরি ছেড়ে টলিউডে আসার যাত্রাটা মোটেই সহজ ছিল না। এই অভিজ্ঞতার ব্যাপারে যদি কিছু বলেন  
সিদ্ধার্থঃ সরকারি চাকরির আগে আমার অনেক ওঠা-পড়া গিয়েছে। একটা ছোট্ট জায়গায় আমার বড় হয়ে ওঠা। কাশীপুরে আমার জন্ম। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে ওঠার মধ্যে কখনই এই ফিল্মি কেরিয়ার কিংবা স্পোর্টস কেরিয়ারের মত পরিবেশ থাকে না। সেখান থেকে উঠে আসাটা কঠিন ছিল। সরকারি চাকরিটা সেই সময় সিকিওরড না হলেও এখন হয়তো হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমি বহু আগেই ছেড়ে দিয়ে এসেছিলাম। যেখানেই কাজ করুন না কেন, আপানাকে একটা লক্ষ্য বেছে নিতেই হবে। কালো ঘোড়ার মত। একটাই দিকে আমার দৃষ্টি থাকবে। সঙ্গে লাগে প্ল্যানিং। এভাবেই কাশীপুর থেকে টলিউডের লম্বা রাস্তা হেঁটে এসেছি।

অদ্রিকাঃ সৃজনশীলতার প্রতি আপনার সর্বদাই একটা ঝোঁক ছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে ঢোকার আগে পড়াশোনার জন্য বিনোদন জগতের বিষয় কোনও সচেতন থাকতে পারেননি। সেই গ্যাপটা কীভাবে পূরণ করলেন?
সিদ্ধার্থঃ পুরুলিয়ায় পলিটেকনিকে পড়াশোনা করতাম। হোস্টেলে থাকতাম। তখন না ছিল ইন্টারনেটের যুগ আর না ছিল হাতে হাতে স্মার্টফোন। হোস্টেলে কেবল টিভি ছিল। সেখানেই একটা অডিশনের বিজ্ঞাপন দেখি। সেই অডিশন দিতে ইচ্ছুক হলেও ছিল ঝামেলা। শীতকালে পাঁচিল টপকে স্টেশনে আসা। তবে হ্যাঁ সচেতন খুব একটা থাকতে পারিনি। অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়। তখন পরিবারও চায়নি এই পেশায় আসি। তবে খিদে কখনও আটকানো যায় না। আমার মাথায় ছিল কলকাতায় আসতেই হবে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার ইচ্ছা সবসময়ই ছিল। মাঝে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের কনস্টেবলের চাকরির জন্যও লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম।      

 

Click and drag to move

 

অদ্রিকাঃ মা-বাবার সমর্থনটা আজ কতটা রয়েছে? কীভাবে তাঁদের চিন্তাভাবনায় বদল আনলেন?
সিদ্ধার্থঃ পরিবার এখন আমায় ভীষণভাবে সমর্থন করে। সব শেষে গিয়ে কিন্তু আপনার ভাল থাকাটাই গুরুত্ব পায়। গাড়ি, বাড়ি, সকলেই চায়। তবে ভাল থাকাটাই আসলে প্রয়োজন। আপনার হাঁটা, চলার মধ্যেই তা প্রকাশ পায়। যা আমার মধ্যে প্রকাশ পায়। আমার জীবনে সবচেয়ে বড় সমালোচক হলেন মা, বাবাই। এখন ওনারা আমার ছবি দেখে আমায় বোঝান কোনটা ভাল লাগল, কোনটা খারাপ লাগল। তাঁরা এখন সামলোচনা করে চলেছেন বলেই আমি আরও মন দিয়ে কাজ করতে পারছি। 

 

Click and drag to move

 

অদ্রিকাঃ ইন্ডাস্ট্রির সাপোর্ট কতখানি ছিল? 
সিদ্ধার্থঃ  প্রথম প্রথম ইন্ডাস্ট্রির সাপোর্ট ছিল না। আমায় রেফার করার মত কেউ ছিল না। বা এর কাছে গেলে ভাল হয়, ওই পরিচালকের কাছে গেলে কাজ শিখব। এভাবে বোঝানোর কেউ ছিল না। প্রথমদিকটা ভীষণ কঠিন কেটেছে। স্ট্রাগল শব্দটা যে এতটা কঠিন বুঝিনি। তবে পরবর্তীকালে বুঝি প্রতিভাই শেষকথা বলে। তবে কে সমর্থন করবে বা করবে না সেটা ভাবিনি। কাজ করব সেটা ভেবেই এগিয়েছে। 

অদ্রিকাঃ রাজ চক্রবর্তীকে নিজের মেন্টর হিসাবে পেয়েছিলেন। সেই বিষয় যদি কিছু বলেন।
সিদ্ধার্থঃ রাজ চক্রবর্তীকে আমি মাস্টার হিসাবে মানি। শিক্ষক চাইলেই একজন ছাত্রকে পরিবর্তন করতে পারে। রাজ দা'র একটা ভীষণ বড় ব্যাপার হল ক্রমাগত মানুষকে অনুপ্রেরণা করে যান। আমায় প্রতিনিয়ত বলে গিয়েছে আমি এটা পারব, এটা আমায় করতেই হবে। একমাত্র আমিই পারব। রাজ দা আমায় প্রথম 'নায়িকা' তে নোটিস করেন। যদি আমায় নোটিসই না করত তাহলে আমার পক্ষে এই রাস্তায় হাঁটাই সম্ভব ছিল না। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই সাহায্য করেছে তবে রাজ দা আমার মাস্টারমশাই। উনি আমার শিক্ষক। রাজ দা'র সঙ্গে যখন সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছি তখন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আমায় কাজ শিখিয়েছেন। তুমি যদি বল এটা পারবে না, তবুও তোমাকেই দিয়েই সেটা করাবে। নতুন প্রতিভাকে নিয়ে দারুণ কাজ করে চলেছেন তিনি। 

 

Click and drag to move

 

অদ্রিকাঃ আপনার আগামী কাজ কি রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে নাকি কোনও আলাদা প্রজেক্টে নিয়ে আসবেন?
সিদ্ধার্থঃ না! আলাদা করে কিছু নয় তবে 'ডিটেক্টিভ' বলে একটা জয়দীপ দা'র সঙ্গে কাজ করা হয়ে গিয়েছে। তারপর আরও একটা হল হইচই-র 'বন্য প্রেমের গল্প ২'র কাজ চলছে। তবে কোভিড পরিস্থিতির জন্য অনেক কাজ আটকে, অনেক কাজ বাতিল হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে রাজ দা'র সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে তো অবশ্যই করব। ওটা তো আমার পরিবার। সাত-আট বছর কাটিয়েছি ওখানে।  

অদ্রিকাঃ নেপোটিজন অর্থাৎ এই স্বজনপোষণ নিয়ে বলিউড থেকে টলিউড তোলপাড় হয়ে উঠেছে? এ বিষয় আপনার কী মতামত?
সিদ্ধার্থঃ দেখুন, নেপোটিজম শুরু হয় বাড়ি থেকে। শব্দটা শুধু ইন্ডাস্ট্রিতেই নয় প্রত্যেক জায়গায় রয়েছে। পরিবার থেকেই শুরু হয়। আমার জেঠু, আমার ভাই, এভাবেই শুরু হয় স্বজনপোষণ। চেনা কাউকে দেখলে সিট ছেড়ে দিয়ে বলা এই তুই বস। এটাও স্বজনপোষণ। তবে একটা ফিল্মের হিট এবং ফ্লপ প্রতিভা, অভিনয়, মেকিং, পরিচালনা, চিত্রনাট্যের উপরই নির্ভর করে। শেষ কথা বলবে পারফরমেন্স। অনেক ছবিই তো প্রতি বছর মুক্তি পায়। কারও ছেলে বা মেয়ে হওয়ার জন্য কোনও ছবি হিট হতে পারে না। কত ছবিই তো ফ্লপ করে। শব্দটা ভীষণ নেগেটিভ।

 

Click and drag to move