সংক্ষিপ্ত
- রাজ চক্রবর্তীর গলায় আক্ষেপের সুর
- কাজ করা হল না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে
- তেমন গল্পই ভেবে ওঠা হল না
- সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট রাজ চক্রবর্তীর
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করা মানে এক অন্যধারার শিক্ষা। যেখানে প্রতিটা ফ্রেমেই সমৃদ্ধ হয়ে থাকেন তারকারা, পরিচালকেরা। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হল না পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর। বয়স হলেও যেভাবে দাপিয়ে অভিনয় করছিলেন সৌমিত্র চট্টোপধ্যায়, তাতে তিনি এভাবে চলে যাবেন, তা কেউ ভাবতেই পারেননি। ঠিক এমনটাই ঘটে পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে।
"সব কল্লোল থেমে গেছে
দেখছি তোমাকে
আমার ই মতন স্থির হয়ে বসে আছ,
চোখে স্তব্ধ হয়ে গেছে সব জলের প্রপাত
বাসনা বালির কেল্লা
ঢেউ এসে মুছে দিয়ে যায়"
(ক্লান্তি - সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)
ভেবেছিলাম ভালো একটা গল্প নিয়ে যাব তোমার কাছে। এখন শুন্যতার ভেতর আর কোন শব্দ নেই ,ছবি নেই। ইউক্যালিপটাসের বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ জলপ্রপাতের ধারে দাড়াবে বলে। প্রলয় করার সময় গেছিলাম তোমার কাছে।তখন সময় হল না তোমার ,তারপর ভেবেছি কতবার ,কবে কাজ করে পুর্ন হব, হৃদ্ধ হব। হয় নি। সেরকম গল্প ভাবতে পারি নি ,সেরকম চরিত্র দিতে পারি নি যা অপু, ফেলুদা ,শ্যাম, ময়ূর বাহন অথবা খিদ্দার মত অমোঘ হবে।
তাই সে স্বপ্ন অধরা থেকে গেল । নাটকের মঞ্চে তোমার উপস্থিতি যেন খোলা তলোয়ার ,শাণিত, তীক্ষ্ণ। টিকটিকি, নীলকন্ঠ ,ফেরা, রাজকুমার ,নামজীবন একের পর এক নাট্য অভিঘাতে ভাবিয়েছে আমাদের। এমন কি ঘটক বিদায় এর অসাধারন সেই মনোলোগ এখনো কানে ভাসছে।
অসুস্থ ছিলে বেশ কিছুদিন ধরে, খবর নিচ্ছিলাম কিন্তু ভয় পাচ্ছিলাম । কিছুদিন আগে বাবাকে হারিয়েছি ,তাই কেউ হসপিটালে গেলে আতঙ্কিত হই। মন বলছিল যে ফেলুদা আবার ঘুরে দাঁড়াবে,মৃত্যু কে মগন লাল এর মত দেয়ালে দাড় করিয়ে ফেলু মিত্তিরের সার্কাস দেখিয়ে দেবে একবার। হল না। আসলে অন্য এক সময় তোমাকে ডাকছিল। তুমি সেখানে গেলে।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে জানালেন খবর টা। যেতে বললেন ।কতটা পথ কি ভাবে গেলাম জানি না। শুধু দেখলাম কত মানুষ কত গুণগ্রাহী চোখের জলে ,কবিতায় গানে তোমাকে শেষ শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানালেন।
আজীবন এই আক্ষেপ থেকে যাবে যে কাজ করা হল না। ভালো থেকো তুমি।তোমার কবিতার ভাষায় বলি " এখন ঢেউ এর সামনে এসে বসতেই আমি দেখলাম আমি নিঃস্ব।"
প্রণাম।
রাজ চক্রবর্তী এক স্ক্রিপ্টের খোঁজেই ছিলেন, যা দিয়ে তিনি ফ্রেমে বুনতে পারেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু সেই আক্ষেপ থেকেই গেল, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষযাত্রার সব ব্যবস্থাই করেছিলেন তিনি রবিবার। সোমবার সকালেই সামনে এলো তাঁর আবেগঘন পোস্ট।