সংক্ষিপ্ত
- দিলীপ কুমারের ৯৮ তম জন্মদিন
- এই বিশেষ দিনে কী না হলেই নয়
- প্রতিবছর জন্ম দিনে কার হাতের বিরিয়ানি খান তিনি
- এবছরও যার ব্যতিক্রম হল না
তপন মল্লিক, কলকাতা- তখনও ভারতীয় সিনেমায় হিন্দি ফিল্ম দুনিয়া বলিউড নামে পরিচিত হয়নি। বোম্বে টকিজের দেবিকা রানী ঘোষণা করলেন, খুব শিগগিরই তিনি এক পাঠান যুবককে নিয়ে ছবি শুরু করছেন। কিন্তু পাঠান যুবকের নাম বদল করতে হবে। এই প্রস্তাবে যুবকটির সায় না থাকলেও সেটাই ঘটে। কুমুদলাল কাঞ্জিলাল গঙ্গোপাধ্যায় যেমন অশোক কুমার নামেই পরিচিত ইউসুফ খানকেও সবাই চেনে দিলীপ কুমার বলে।
অশোক কুমারের পর হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে বড় তারকা তিনি। তিনি বলিউডের ট্র্যাজেডি কিং। হিন্দি ছবিতে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য দিলীপ কুমারের কোনও বিকল্প ছিল না। হিন্দি সিনেমার স্বর্ণালী যুগের নায়িকা নার্গিস, মধুবালা, নিম্মি, বৈজয়ন্তীমালা, মীনা কুমারী, ওয়াহিদা রেহমান- সবাই দিলীপ কুমারের সঙ্গে অভিনয় করার জন্য মুখিয়ে থাকতেন।
হিন্দি সিনেমার ইতিহাসের আলোচিত ছবির একটি হল কমরুদ্দিন আসিফের মুঘল-ই-আজম। সম্রাট জাহাঙ্গীর ওরফে প্রিন্স সেলিমের চরিত্রে দিলীপ কুমার দুর্দান্ত অভিনয়ের পর বৃটিশ পরিচালক ডেভিড লিয়েন তাঁকে লরেন্স অব অ্যারাবিয়া ছবিতে শেরিফ আলীর চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দিলীপ কুমার তা ফিরিয়ে দেন।
দিলীপ কুমারের প্রথম ছবির নাম ছিল ‘জোয়ার ভাটা’। ব্যক্তি দিলীপ কুমারের জীবনেও ছিল বহু জোয়ার ভাটা। ‘নদীয়া কে পাড়’, ‘শবনম’ ছবি তৈরির সময় দিলীপ কুমারের সঙ্গে কামিনী কুশলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। ছবি হিট হলেও দিলীপকুমারকে খালি হাতে ফিরিয়েছিলেন কামিনী। ভাঙা মন নিয়ে সেলিম আশ্রয় পেয়েছিলেন আনারকলির কাছে। কিন্তু সেই প্রেমও পরিণতি পায় না।
মধুবালার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সম্পর্কের বেড়াজাল নিজেকে বেশ কিছুকাল দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন দিলীপ কুমার। কিন্তু মুঘল-ই-আজম দেখার পর থেকেই দিলীপ কুমারের উপর অমোঘ আকর্ষণ ছিল সায়রা বানুর। আর সেই কারণেই দিলীপ কুমারের অর্ধেক বয়স হওয়া সত্ত্বেও সায়রা বানু তাঁর গলায় মালা পরান। প্রসঙ্গত, ৪৪ বছর বয়সী দিলীপ কুমারের সঙ্গে ওই সময় গাঁটছড়া বাঁধেন বছর বাইশের সায়রা বানু।
আরও পড়ুনঃ কোয়েল থেকে নুসরত, প্রিয় তারকার এই লুক কি দেখেছেন, রইল টলিউডের হটস্টারের মেকআপ ছাড়া ছবি
একসময় রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে সায়রার প্রেম ছিল। সেই প্রেম মান্যতা পায়নি, রাজেন্দ্র কুমার বিবাহিত ছিলেন বলে। সায়রার মা নসিম চেয়েছিলেন দিলীপ কুমারের সঙ্গেই তাঁর মেয়ের বিয়ে হোক। তখন তাঁরা দুজনে বেশ কয়েকটি হিট ছবি দিয়েছেন। মধুবালার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর বৈজন্তিমালার সঙ্গেও দিলীপ কুমারের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে জানা যায়।
সায়রার সঙ্গে বিয়ের পরও হায়দরাবাদের আসমা শাহিবার নামে এক মহিলর সঙ্গে দিলীপ কুমারের সম্পর্ক গডে় ওঠে। ১৬ বছর সায়রাকে বিয়ে করে নিঃসন্তান ছিলেন দিলীপ। সে কারণে ইনাকি সায়রা বানুকে বিচ্ছেদ দিয়ে তিনি আসমার সঙ্গে ঘর বাঁধেন। তবে সায়রাকে নাকি ডিভোর্স দেওয়ার কোনও ইচ্ছে দিলীপের ছিল না। কিন্তু দু’বছরের মধ্যেই আসমার সঙ্গে দিলীপ কুমারের দুরত্ব বাড়তে শুরু করে। আসমা তাঁকে ঠকাচ্ছেন, এই অভিযোগেই দূরে সরে যান দিলীপ। ফের সায়রা বানুর সঙ্গে দিলীপ কুমারের বিয়ে হয়।
সায়রার আগে ও পরে একাধিক অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল হিন্দি ছবির সর্বকালের সেরা অভিনেতা দিলীপ কুমারের। কিন্তু সেইসব অভিনেত্রীকে ছাপিয়ে আজও দিলীপ কুমারের জীবনে একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছেন সায়রাবানু। দিলীপ সাবকে এক মহিরুহের মতো ছায়া দিয়ে আদর যত্নে আগলে রেখেছেন তিনি। বলিউড তারকারা অভিনয় জীবনের পাশাপাশি বরাবরই ব্যক্তিজীবনের নানা আলোচনায় মুখরিত হয়েছেন। তাদের প্রেম, বিয়ে, দাম্পত্য জীবন নিয়েও শীরোনামে উঠে এসেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন দিলীপ কুমার-সায়রা বানু জুটি।
আজ বলিউডের ট্র্যাজেডি কিং ৯৮ বছরে বছরে পা রাখলেন। অভিনেতার শারীরিক অসুস্থতার কারণে সাদামাটাভাবে জন্মদিন পালন করবেন স্ত্রী সায়রা বানু। কোনো পার্টি বা অনুষ্ঠান নয়। ঘরোয়াভাবে দিলীপ কুমারের জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে। তবে দিলীপ কুমারের জন্য তিনি বিরিয়ানি করেছেন। বিরিয়ানি দিলীপ সাবের সবচেয়ে প্রিয় এবং অবশ্যই তা সায়রার হাতে তৈরি। এমনিতে তিনি এখন হালকা খাবার খান। তবে জন্মদিনে তাঁর বিরিয়ানি চাই।
তিনি কোনো দিনই পার্টি, হইহুল্লোড় পছন্দ করতেন না। একসময় জোর করেই তাঁর জন্মদিনে পার্টি হত। আজ কেবল তার প্রিয় শিল্পীদের গান- ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান, মেহেদী হাসান, নুসরাত ফতেহ আলী খান প্রমুখ। ধ্রুপদি সংগীত, গজল এবং ইনস্ট্রুমেন্টাল তাঁর দারুণ পছন্দ। তাঁর। জন্মদিনে তাঁর পছন্দের কোনো গান বাজালে খুব খুশি হন। তাই বরাবরের মতো এবারও বিরিয়ানির সঙ্গে থাকবে পছন্দের শিল্পীদের গান।