সংক্ষিপ্ত

  • করোনাকালে গোটা বিশ্বই আর্থিক বিপর্যস্ত 
  • মোদী সরকার একাধিক সরকারি সম্পত্তি বিক্রির কথা বলেছে
  • আর্থিক সংসস্থানের জন্য এই পদক্ষেপ 
  • আর্থিক অনিশ্চয়তা রয়েছে আগামী দিনেও 
     

তপন মল্লিক চৌধুরীঃ করোনাকাল থেকেই গোটা দুনিয়া অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততার কথা বলে আসছে। কিন্তু আমাদের দেশের নরেন্দ্র মোদি সরকার বা কেন্দ্রের শাসক দল মানতে রাজি নয় যে এ দেশের আর্থিক অবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বরং তারা আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতীয় অর্থনীতি ৫ লক্ষ কোটি টাকার আয়তনে পৌঁছবে সেই স্বপ্নে বিভোর। এই স্বপ্ন ভারতবাসীর সামনে তুলে ধরতে চাইছেন মোদি। আর শাসকদল তা প্রচার করতে ব্যস্ত। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গেলেযে অর্থনৈতিকভাবে যে সব উদ্যোগ নেওয়া দরকার; তার জন্য যে ট্যাকের জোর দরকার তা কোথায়। উলটে সরকারের কোষাগারের হাল ভাড়ে মা ভবানী। 
শুধু কি তাই? দেশের অর্থনীতির বড়সড় বিপদ সামাল দিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যে উদ্বৃত্ত তহবিল সরকারি ভাষায় কন্টিনজেন্সি রিস্ক বাফার বা সিআরবি সেই টাকা   রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সরকারের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। এরপরও কি মোদির দেখানো দেশের আগামী দিনের সোনায় মোড়া অর্থনীতির স্বপ্নে বিভোর থাকতে হবে নাকি বুঝতে হবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সেই তুলে রাখা টাকা যখন সরকারকে নিতেই হচ্ছে তখন আমরা কতবড় অন্ধকারের দিকে এগিয়ে চলেছি? 


অথচ মোদি সরকার যে কিছুতেই মানবেন না যে দেশের আগামী দিনের অর্থনীতিও অনিশ্চিত এবং সেই অবস্থা কাটতে অনেক সময় লাগবে। অন্যদিকে অর্থনীতির বহু বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন সরকার তার রাজস্ব আদায়ের যে হিসাব পেশ করছেন সেখানেও রয়েছে বড় রকমের গরমিল। সরকার রাজস্ব আদায়ের যে পরিমাণ জানাচ্ছে তার সঙ্গে সরকার যে আর্থিক সমীক্ষা পেশ করছে তাতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। সেই বিরাট অঙ্কের ফাঁক থেকেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তার আপৎকালীন তহবিল থেকে অর্থ তুলে দিচ্ছে মোদি সরকারের হাতে। এবং আশা করছে, এই টাকায় আর্থিক ঘাটতি একটা পর্যায় পর্যন্ত রোধ করে ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করা যাবে।    
তিনি মানুন আর না মানুন আসল চিত্রটা হল আর্থিক বৃদ্ধির হার একটানা নিম্নমূখী, গত প্রায় দেড় বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ধরে তা নামতে নামতে ৬ শতাংশেরও নীচে চলে গিয়েছে। সব সময়েই আশঙ্কা রয়েছে সেটা আরও নীচে নামবে। অর্থনীতির এই চূড়ান্ত বেহাল অবস্থায় কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন সংগঠিত বা অসংগঠিত দুই শিল্পক্ষেত্রের কর্মীরাই। গত কয়েক মাসে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই বেড়েই চলেছে। আর্থিক বৃদ্ধির হার নামলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে টাকার দাম রোজ কমছে। শেয়ার বাজার প্রায় রোজই বড়সড় ধসের আশঙ্কা করেছে। একদিকে বেকারত্বের হার যেমন বেড়েছে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেতন সঙ্কট। মানুষের হাতে টাকার অভাব, বিক্রি কমছে বহু দরকারি পণ্য থেকে শুরু করে গাড়ির। এরপর এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন কে?
এই অবস্থাকে বিপর্যস্ত বা বিরাট বিপর্যয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবা সম্ভব নয়। ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করবেন তা একটু অন্যরকম হবে এমনটাই আশা করা গিয়েছিল। মন্দা পরিস্থিতি পেরতে যে একটু সাহসী ও ইতিবাচক বাজেট দরকার সে কথাই সবাই ভেবেছিল। কিন্তু তিনি বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি দেদার বিক্রি করে দেওয়ার কথা শোনালেন, ব্যাঙ্কের বেসরকারীকরণ নিয়ে বার্তা দিলেন। এও জানালেন, বিলগ্নীকরণের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে সরকার খুব দ্রুত কিছু পদক্ষেপ করবে। জানা গেল, সরকার চাইছে আরও প্রাইভেট সেক্টর ব্যাঙ্ক। প্রসঙ্গত, এদিন দুটি পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক ও একটি ইনশিওরেন্স সংস্থাকে বেসরকারীকরণ করার বার্তা দিয়েছেন সীতারমন। 


স্বভাবতই সরকারের এই ঢালাও বেসরকারিকরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধিরা। করোনা পরিস্থিতিতে নেমে আসা করুণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়াতে বাজেটে দরকার মানবিক অভিমুখ। বাজেটে তা অনুপস্থিত। কেন্দ্রীয় সাধারণ বাজেট ২০২১ কে বিরোধীরা তাই সম্পূর্ণ দিশাহীন ও দেশ বিক্রির উদ্যোগ বলে কটাক্ষ করেছেন। তারা বলেছেন, বাজেটের লক্ষ্য হলো দেশকে বিক্রি করা। তাদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই সরকার রেল বিক্রি করে দিয়েছে, এবার বিমানবন্দর নৌবন্দর বিক্রি করছে।
বাজেটে অর্থমন্ত্রী পরিকাঠামোর উন্নয়নের প্রসঙ্গ জোর দিয়ে বলেছেন। পরিকাঠামো উন্নয়ন খরচটা অত্যন্ত জরুরী, কারণ, উন্নত পরিকাঠামো না থাকলে বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে না। বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে না। যে কারণে সরকার ১২ লক্ষ কোটি টাকা ধার করে পরিকাঠামোয় ঢালছে। তা বলে দেদার সরকারি সম্পত্তি বিক্রি, তাতে লাভ কতটা হবে? গোটা দুনিয়াজুড়েই তো অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। টাকা পয়সার টানামানি তো সবারই। বিশ্ববাজারে এই সময় ভাল দাম দেবে সেই ক্রেতা কোথায় পাওয়া যাবে। কোনও ক্রেতার হাতেও তো বেশি টাকা নেই। ফলে, কেউই বেশি দাম দিতে পারবেন না।