সংক্ষিপ্ত
এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করার জন্য দরপত্র জমা নেওয়া হচ্ছিল। সূত্রের খবর এই দরপত্র জমা নেওয়ার কাজ এবার শেষ পর্যায়ে। এয়ার ইন্ডিয়ার কার হাতে যাচ্ছে এটা জানাটা নাকি এখন কিছু সময়ের অপেক্ষা।
এয়ার ইন্ডিয়া কেনার জন্য দরপত্র জমা করলেন অসামরিক বিমান পরিবহণের এক খ্যাতনামা ব্যক্তি অজয় সিং। তাঁর হাত ধরেই জন্ম নিয়েছিল টাটা গ্রুপের অসামরিক বিমান পরিবহণের ব্যবসা। এছাড়াও তিনি স্পাইস জেটের প্রতিষ্ঠাতা। জানা গিয়েছে অজয় সিং বুধবার-ই এয়ার ইন্ডিয়া কেনার জন্য দরপত্র জমা করেছেন। এর সঙ্গে সূত্রের খবর যে সরকার এয়ার ইন্ডিয়া-কে বিক্রি করার জন্য যে দরপত্র জমা করার সময়সীমা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল, তা বুধবার প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। অসামরিক বিমান পরিবহণের কাছে বহু দরপত্র জমা পড়েছে। সরকার এবার কার হাতে এয়ার ইন্ডিয়াকে তুলে দেবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে বলেও একটি সূত্রে খবর। তবে নিশ্চিতভাবেই বুধবার এই দরপত্র জমা করার খেলায় সকলকে অবাক করেছেন অজয় সিং।
টাটা সনস-এর সূত্রেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে অজয় সিং দরপত্র জমা করেছেন। এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির জন্য যে কোয়ালিফায়েড বিডারদের শর্ত রাখা হয়েছে তা মেনেই বুধবার অজয় সিং দরপত্র জমা করেছেন বলে টাটা সনস সূত্রে খবর। সরকার চাইছে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়াকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। এর জন্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে দরপত্র এবং নতুন মালিকের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সেরে ফেলার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে সরকার। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই নিয়ে সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করেছিল। সেই মোতাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে বলেই সরকারি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে।
ভারত সরকারের বিনিয়োগ এবং পাবলিক অ্যাসেট বিভাগ তথা ডিআইপিএএম-এর সচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডে টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ট্যান্সাকশন অ্যাডভাইসারের কাছে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির যাবতীয় দরপত্র জমা পড়ে গিয়েছে। এখন পুরো প্রক্রিয়াটি তার সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সরকারের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে খবর যে এয়ার ইন্ডিয়ার দরপত্র জমা নেওয়া এবং মালিকানাকে নির্বাচন করার সঙ্গে সঙ্গে এখন যে বিষয়টি-র উপরে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে তা হল রিজার্ভ প্রাইস ফিক্সেশন এবং সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স। সরকারের এই সূত্রে জানানো হয়েছে যে একের বেশি দরপত্র জমা পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়াকে কেনার জন্য। তবে এর থেকে বেশি কোনও তথ্য এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয় বলেও এই সূত্রে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অজয় সিং-একটি কনসোরটিয়াম-এর পক্ষ থেকে দরপত্র জমা করেছেন বলেও সরকারের এই সূত্রে দাবি করা হয়েছে। কে কেমন দরপত্র দিয়েছে- এই বিষয়টি পর্যালোচনা করতে এবং দরপত্রের গভীরতা খতিয়ে দেখতে অন্তত ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগবে বলেও সরকারের এই সূত্রে খবর। আর এই সময়ের মধ্য়েই এয়ার ইন্ডিয়ার নতুন মালিকের নাম ঘোষণা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও খবর।
১৯৩২ সালেই টাটা-রা এয়ার ইন্ডিয়া সংস্থার জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর সরকারের হাতে চলে গিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা। সেই সময় টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান জেআরডি টাটা এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন জাতীয়তাবাদের ধূয়ো তুলে সরকার পিছনের দরজা দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানাকে কুক্ষিগত করেছে। সুতরাং, এয়ার ইন্ডিয়াকে তাদের ছাতায় তলায় ফিরে পাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে টাটাদের সামনেও।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আবার এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছিলেন যে, 'আমার এতে প্রবল দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া আর কোনও গতি নেই, কারণ এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি ছিল।' সরকারের হাতে এয়ার ইন্ডিয়ার মালিকানা গেলেও এর পরিচালনের দায়ভার টাটাদের হাতেই রাখা হয়েছিল। জেআরডি টাটার নেতৃত্বে এয়ার ইন্ডিয়া দেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে অসামরিক বিমান পরিষেবায় এক অসামান্য উচ্চতায় পৌঁছয়। বিশ্বের তাবড় তাবড় সব বিমান সংস্থাকে এক কড়া চ্যালেঞ্জের মুখেও ফেলে দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া। এই সংস্থায় কাজ করা কর্মীদের জন্য দ্বার অবারিত করে দিয়েছিল বিশ্বের নামি-দামি সব বিমান সংস্থা। কিন্তু, ১৯৭৭ সালে জনতা সরকার ক্ষমতায় এসে টাটাদের হাত থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এরপর থেকেই পতন শুরু হয় এয়ার ইন্ডিয়ার। ২০০৭ সালে যখন এয়ার ইন্ডিয়ারে ইন্ডিয়ার এয়ারলাইন্সের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় তখন এই সংস্থার আর্থিক ক্ষতির বিশাল অঙ্কটা সামনে আসে। সরকার এরপর থেকেই এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিল। সংস্থার মোট আর্থিক ক্ষতির অঙ্ক ১ লক্ষ কোটি টাকাতে পৌঁছে যায়। এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করতে না পারলে সংস্থাকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না বলেও একটা সময় সরকার তা স্পষ্ট করেছিল।