- Home
- Business News
- Other Business
- Calcutta Stock Exchange: কেতন পারেখ তখন যেন রাহু, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লেনদেন স্তব্ধ! বন্ধ হচ্ছে কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ?
Calcutta Stock Exchange: কেতন পারেখ তখন যেন রাহু, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লেনদেন স্তব্ধ! বন্ধ হচ্ছে কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জ?
Calcutta Stock Exchange:

য়ার বাজারে লেনদেন হয় কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে
একটা সময় ছিল, যখন বড় হলঘরে শুধু হইচই। একাধিক সংস্থার শেয়ার কেনাবেচা করছেন ব্রোকাররা। কেউ একদিকে দাম বলছেন এবং অন্যদিকে কেউ বিক্রি করছেন। আবার কেউ সেটা কিনে ফেলছেন। তবে সেটা কয়েক বছর কয়েক আগের ঘটনা। বর্তমানে অবশ্য সেই সবকিছুর কোনও দরকার নেই। কারণ, শেয়ার বাজারে লেনদেন হয় কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে।
বর্তমানে এই জায়গাটির নাম রয়্যাল এক্সচেঞ্জ
সেই ১৯০৮ সাল। কলকাতায় প্রথম তৈরি হয় ‘দি ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড’ বা সিএসই। কয়েকজন ব্রোকার মিলে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তবে সেই সময়, দেশ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। ঔপনিবেশিক প্রেক্ষাপটে কলকাতার স্টক মার্কেট তৈরি হলেও, ব্রিটিশ আধিপত্য কিন্তু কখনওই সিএসই-র কাজে সেইভাবে হস্তক্ষেপ করত না। ১৯০৮ সালে, আনুষ্ঠানিকভাবে মোট ১৫৭ জন ব্রোকারকে নিয়ে ২, চায়না বাজার স্ট্রিটে শুরু হয় কলকাতার স্টক এক্সচেঞ্জের পথচলা। বর্তমানে এই জায়গাটির নাম রয়্যাল এক্সচেঞ্জ।
কোনও বিনিয়োগ এবং লেনদেন হচ্ছে না এখানে
এরপর ১৯২৩ সালে, আইনি স্বীকৃতি পায় সংস্থাটি এবং ১৯৫৬ সালের সিকিউরিটিজ় কন্ট্রাক্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী, এই কোম্পানিটি স্টক এক্সচেঞ্জ সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের স্থায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। বেসরকারি হলেও এই সংস্থা ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রকের একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেইসঙ্গে, এটি সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একটা সময় বাজার কাঁপাত সিএসই। লেনদেনের হিসেবে একবার তা ছাপিয়ে যায় বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকেও। ভারতের অনেক সংস্থা বিনিয়োগ করত সিএসই-র মাধ্যমে। কিন্তু বিগত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে, কোনও বিনিয়োগ এবং লেনদেন হচ্ছে না এখানে।
সিএসই-তে চার হাজারের বেশি সংস্থার নাম তালিকাভুক্ত ছিল
তার কারণ, পশ্চিমবঙ্গ এক সময়, ব্যবসার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল। চা, কয়লা এবং পাটের রমরমা বাজারে, মূলত এই তিনটি সামগ্রী বিক্রির সংস্থারাও নিজেদের বাজারদর বৃদ্ধি করতে সিএসই মারফত শেয়ার কেনাবেচা করেছে প্রতিনিয়ত। এরপর ১৯৯৭ সালে, ‘ওপেন আউটক্রাই সিস্টেম’-এর বদল আনার পর, শুরু হয় সি-স্টার বা সিএসই স্ক্রিন বেসড ট্রেডিং অ্যান্ড রিপোর্টিং , এই পদ্ধতিতে শেয়ার কেনাবেচার কাজ চলে থাকে। অর্থাৎ, আগে ব্রোকাররা নিজে উপস্থিত থেকে শেয়ার কেনাবেচা করতেন। পরে, কম্পিউটারের মাধ্যমে রেজিস্টার করে শেয়ার কেনাবেচা চালু হয়। জানা যায়, ২০০৫ সাল পর্যন্ত, সিএসই-তে চার হাজারের বেশি সংস্থার নাম তালিকাভুক্ত ছিল।
কেতন বরাবর ছোট এবং মাঝারি সংস্থাগুলিকে টার্গেট করতেন
তবে ২০০০ সালে, এক ব্রোকারের জালিয়াতি প্রায় ডুবিয়ে দেয় সিএসই-কে। এককালে শেয়ার বাজারের বড় প্লেয়ার ছিলেন কেতন পারেখ। তিনি দেখতে একেবারে সোজাসাপটা ছিলেন। দেখে বোঝা যেত না। কারণ, তাঁর কোনও বিলাসবহুল জীবনযাত্রাও ছিল না। সেই মানুষটিই কিনা ১২০ কোটি টাকার জালিয়াতি করেছিলেন। এই কেতন পারেখ আবার হাত পাকিয়েছিলেন হর্ষদ মেহতার কাছ থেকে। সেই হর্ষদ, যিনি শেয়ার বাজারে জালিয়াতির আরেক পাণ্ডা ছিলেন। কেতন বরাবর ছোট এবং মাঝারি সংস্থাগুলিকে টার্গেট করতেন। তাঁর এই নিশানা শেয়ার বাজারে ‘কে ১০’ নামে পরিচিত ছিল। প্রযুক্তি, যোগাযোগ এবং বিনোদন জগতের সংস্থার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে শেয়ার কিনে নিতেন কেতন।
বড় অঙ্কের জালিয়াতি করেছেন কেতন পারেখ
কিছু ছোট ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিতেন কেতন। যেমন মাধবপুর মার্চেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ছাড়াও আরও বেশ কিছু ছোট ব্যাঙ্কের থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেন তিনি। এমনকি, কয়েকজন প্রোমোটারের কাছ থেকেও টাকা ধার করেন তিনি। কেতন সুযোগ বুঝে তৈরি করে নিতেন ভুয়ো পে অর্ডার। তবে বেশিদিন সেই দুর্নীতি চলেনি। প্রচুর টাকার বিনিময়ে সেই স্টকগুলির শেয়ার কেনার জেরে, একটা সময়ের পর বাজারে ঐ স্টকগুলির চাহিদা কমে যায়। যে চড়া দামে স্টক কিনেছিলেন, তার চেয়ে অনেক কম টাকায় সেগুলি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি। এরপরেই কেতন অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন। এমনকি, ঋণও সেইভাবে শোধ করতে পারেননি। এমন অবস্থা নজরে আসে সেবির। তারপরেই জানা যায় যে, ‘কে ১০’ এবং পে অর্ডার পদ্ধতির মাধ্যমে শেয়ার বাজারে বড় অঙ্কের জালিয়াতি করেছেন কেতন পারেখ।
সেবি-র বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়?
এর পরই সেবির তরফ থেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সিএসই-র উপর। তবে তারপর আবার ঘুরে দাঁড়ালেও, ২০১৩ সালে বেনিয়মের অভিযোগে সিএসই-তে লেনদেন বন্ধ করে দেয় সেবি। সেই কারণে, পাল্টা সিএসই-র তরফ থেকে সেবি-র বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালে, সিএসই তাদের মামলা উল্টে প্রত্যাহার করে নেয়।
তাহলে কি সত্যিই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিএসই?
তবে শুধুমাত্র কেতনের দুর্নীতিই নয়! সূত্রের খবর, সিএসই-তে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব ছিল এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল তারা। তাছাড়া একাধিক বড় সংস্থা তাদের হেড কোয়ার্টার কলকাতা থেকে মুম্বইতে স্থানান্তরিত করে। গত ২০১৩ সাল থেকে পুরোপুরি লেনদেন বন্ধ রয়েছে সিএসই-তে। কোনও সংস্থার নামও নেই এখানে। তাহলে কি সত্যিই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিএসই? সূত্রের খবর, সেবি-র সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে সিএসই।
Disclaimer: বাজারে বিনিয়োগ একটি ঝুঁকিসাপেক্ষ বিষয়। তাই বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।