সংক্ষিপ্ত
প্রত্যেকবারের মত এবারেও বাজেট পেশ করার আগে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবর্ষেও বাজেট পেশ করার আগে শেষ মুহুর্তে ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। মোট ৫ টি বিষয়ের ওপর করা হচ্ছে ইকোনমিক সার্ভে।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে পেশ হতে চলেছে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের ইউনিয়ন বাজেট (Union Budget)। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (Nirmala sitaraman) পেশ করবেন এই বাজেট। প্রত্যেকবারের মত এবারেও বাজেট পেশ করার আগে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবর্ষেও বাজেট পেশ করার আগে শেষ মুহুর্তে ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ইতিমধ্যেই ICRA-র তরফে বলা হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেটে জিডিপি-র গ্রোথ (GDP Growth) ৯.০ শতাংশ পর্যন্ত হওয়া উচিত। ইউনিয়ন বাজেটের আগে ইকোনমিক সার্ভে (Economic Servey) বা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে কাঁটাছেড়া করলে তবেই বোঝা যায়, কোন খাতে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে বা পিছিয়ে পড়া ক্ষেত্রগুলোকে কীভাবে পুনরোজ্জীবিত করতে হবে। কৃষিক্ষেত্র থেকে শিক্ষাক্ষেত্র, শিল্প মহল থেকে বাণিজ্য মহল, অর্থনৈতিক লেনদেন, আমদানি-রফতানি সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ইকোনমিক সার্ভে করা হয়ে থাকে। সেই সব দিক বিচার করেই দিল্লির সংসদে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী ইউনিয়ন বাজেট (Union Budget) পেশ করেন।
জিডিপি
আসন্ন ইউনিয়ন বাজেটে ৫ টি বিষয়ের ওপর ফোকাস করে ইকোনমিক সার্ভে করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে প্রথমে আসা যাক জিডিপি গ্রোথের কথায়। গত বছর ইকোনমিক সার্ভেতে বলা হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবর্ষে জিডিপি গ্রোথ ১১ শতাংশ পর্যন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু দেশে যেভাবে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছিল তার প্রভাব পড়েছিল জিডিপি গ্রোথের ওপর। সেই জন্যই ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে পেশ হতে চলা বাজেটে কেন্দ্র জিডিপি নিয়ে কোনও বড় ঘোষণা করে কিনা সেই দিকেই সকলের নজর থাকবে। সেই সঙ্গে সরকারের আত্মনির্ভর ভারত ন্যাশনাল ইনফারস্ট্রাকচর পাইপলাইন নিয়েও কী বক্তব্য রাখেন সেটাও দেখার।
হেল্থকেয়ার
গত অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০২১-২১ আর্থিক বছরে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় দেশে করোনা পরিস্থিতি অব্যাহত। সেই রকম কঠিন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বিশেষভাবে বিনিয়োগ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকারের তরফে মোট ডিজিপি-র ১.৮ শতাংশ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বরাদ্দ করা হয়েছিল। আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগের আশা রাখছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যুক্ত কর্মীরা। উল্লেখ্য় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেভাবে মানুষের জীবনে আছড়ে পড়ে মৃত্যুমিছিলের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল তা কিন্তু আজ কারোরই অজানা নয়। করোনাকালে যেভাবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভিড় আছড়ে পড়েছিল সেই দিক থেকে বিচার করলে স্বাস্থ্যখাতে অনেকে বেশী বরাদ্দ হওয়া উচিত। আগামী দিনেও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণের হার বাড়ছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্র নিয়ে ইকোনমিক সার্ভ কতটা কার্যকরী হল সেটা বোঝা যাবে ১ ফেব্রুয়ারি। সাইকোকান করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা অলোক শর্মা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে শুধু চিকিৎসারই প্রয়োজন হচ্ছে এমনটা কিন্তু নয়, এই ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন আর ওষুধেরও একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাই বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ইকোনমিক সার্ভের মধ্যে এই দুইয়ের সংযোজন ঘটানো অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন তিনি। স্বাস্থ্যখাতে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর জিএসটি কম করলে মানুষের চাহিদা পূরণও অনেকখানি সহজ হয়।
শিক্ষাক্ষেত্র
২০২০ সালে সরকার ন্যাাশনাল এডুকেশন পলিস বা NEP-এর সঙ্গে পরিচয় করায়। এই পলিসিতে আগামী ২০৩৫ সাল পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার জন্য মোট এনরোলমেন্ট রেশিওর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হবে বলা হয়েছিল। কিন্তু অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে আপাতত স্কুল কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই একটানা দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। তাই ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে সরকার ভার্চুয়াল এডুকেশন ও ভার্চুয়াল ক্লাসের দিকে পড়ুয়াদের মনোসংযোগ বাড়াতে কী পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার।
বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা
২০২১-২২ অর্থবর্ষে কেন্দ্রের তরফে বাজেটে মোট বিনিয়োগের পরিমান ধার্য করা হয়েচিল ১.৭৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুটো পাবলিক সেক্টর ব্যঙ্ক ও একটি পাবলিক সেক্টর ইন্সিওরেন্স সংস্থাকে বেসরকারীকরণ করা হয়েছে। কিন্তু সুত্রের খবর অনুযায়ী, বেসরকারীকরণেরক এই প্রক্রিয়া কিন্তু আজও সম্পন্ন হয় নি। তাই আসন্ন বাজেটে সরকার এই বিষয় কী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সেই বিষয় সকলেরই একটা জানার আগ্রহ রয়েছে। ডিজইনভেস্টমন্ট প্ল্যান বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হল এলআইসি-র আইপিও-র ময়দানে আত্মপ্রকাশ করা।
ফিনটেক
ফিন্যানসিয়াল টেকনোলজি বা ফিনটেক সংস্থাগুলো অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে একেবারে মুখ থুবরে পড়েছে। করোনাকালে এই সংস্থার ব্যবসা একেবারে মুখ থুবরে পড়েছে। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করতে এই ফিনটেক সংস্থার অবদান অনস্বীকার্য। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে কেন্দ্রের ইউনিয়ন বাজেটে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেটাই দেখার।