সংক্ষিপ্ত

সরকারি বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি বা ঘুষের কারবার রুখতে জুরি মেলা ভার জিরো রুপি নোটের। নোটটি দেখতে ৫০ টাকার নোটের মত। তামিলনাড়ুর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা,পঞ্চম পিলার এই নোট তৈরি করেছিল। 

আমরা যখন কারেন্সি নোটের কথা ভাবি, তখন প্রথম যে জিনিসটি আমাদের মাথায় আসে তা হল ১০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার নোট। কিন্তু শূন্য টাকার নোটের(Zero rupee Note) কথা কি কখনও শুনেছেন বা দেখেছেন? আসলে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতে শূন্য টাকার নোট রয়েছে। শুনে একটু অবাক লাগলেও এটাই যে সত্যি। শুন্য়ের যে কি মাহাত্য, তা কিন্তু আমরা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের চেক বুক বা অন্যান্য জরুরি অনেকক্ষেত্রে উপলোব্ধি করে থাকি। ফের সময় এসেছে জিরোর মাহাত্ম্য বোঝার। কথায় বলে না, জিরো থেকেই শুরু। সত্যিই জিরোকে হাতিয়ার করেই দুর্নীতি রুখতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন এক বিশেষ ব্যক্তি। প্রসঙ্গত, যাঁরা ঘুষ নেন তাঁদের লজ্জায় ফেলতেই এই ধরনের নোট তৈরি করা হয়েছিল(to curb corruption Of Indian market)। উল্লেখ্য, এই নোট মোটেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নয়। এটি ঘুষ দেওয়া ও নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রচারের হাতিয়ার হিসাবে তৈরি করেছিল দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা,পঞ্চম পিলার (Pancham Piller)। লোক ঠকানোর নোট হলেও এ কিন্তু আদতে লোক ঠাকানো নয়। একে বলা হয় জিরো রুপি নোট অর্থাৎ এটি এমন একটি নোট, যা সম্পূর্ণ মূল্যহীন। ২০০৭ সালে পঞ্চম পিলার নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রথম এই নোট বাজারে আনে। সরকারি বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি বা ঘুষ দেওয়া-নেওয়া বন্ধ করার জন্যই এমন পদক্ষেপ নিয়েছিল সংস্থাটি। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এই নোট নিয়ে রীতিমত প্রচার চালায় পঞ্চম পিলার নামক সংস্থাটি। এই শূন্য রুপির নোটগুলি হুবুহু  ৫০ টাকার নোটের মতোই দেখতে।

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার পরিচালক সতীন্দর মোহন ভগত (Satinder Mohan Bhagat) এই ধারণাটি তৈরি করেছিলেন। এই ধরনের নোটের উদ্দেশ্য হল যারা অবলীলায় ঘুষ নেন তাঁদের মনে করিয়া দেওয়া যে, ঘুষের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লজ্জিত করা বা ভয় দেখানো এবং যেকোনওভাবে ঘুষের কারবার রোধ করা। তাই, যখনই কিছু কর্মকর্তা ঘুষ চেয়েছেন, তখনই নাগরিকরা এই শূন্য টাকার নোট দিতে সাহস করেছেন।তামিলনাড়ুতে সদর দফতর, এনজিও হিন্দি, তেলেগু, কন্নড় এবং মালায়লাম সহ বিভিন্ন ভাষায় লক্ষ লক্ষ নোট ছাপিয়েছে। এছাড়াও, এর স্বেচ্ছাসেবকরা সচেতনতার জন্য রেলস্টেশন, বাস স্টেশন এবং বাজারের মতো সর্বজনীন স্থানে নোটগুলি বিতরণ করে। তাদের লক্ষ্য দুর্নীতি নির্মূল করা। নোটে বলা হয়েছে, কেউ ঘুষ দাবি করলে নোটটি দিয়ে মামলার প্রতিবেদন দিতে হবে। এনজিওর এই দুর্নীতি বিরোধী কৌশলটি সম্প্রতি ঘুষের শিকার অন্যান্য দেশ যেমন ইয়েমেন, ঘানা, বেনিন, মেক্সিকো এবং নেপাল দ্বারা চেষ্টা করেছে।  

আরও পড়ুন-Rail: কোভিড বর্ষে বাড়ল আয়ের পরিমাণ, পূর্ব রেলের স্ক্র্যাপ বিক্রিতে পার করল ২০০ কোটির গণ্ডী

আরও পড়ুন-RBI Fines-দুই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ,পিএনবি ও আইসিআইসিআই-কে আর্থিক জরিমানা আরবিআই-য়ের

আরও পড়ুন-Loan Fraud Case: আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনেই লোনের ফাঁদ, সল্টলেকে টাকা খুইয়ে পথে বসলেন বহু মানুষ

পঞ্চাশ টাকার নোটের উপরের দিকে যেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া লেখা থাকে, সেই জায়গায় জিরো রুপি নোটে লেখা এলিমিনেট করাপশন অ্যাট অল লেভেল অর্থাৎ সর্বস্তর থেকে দুর্নীতি দূর করুন। তবে যাতে আইনত কোনও ভুল না থাকে, তাই এই নোটে কোথাও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-এর উল্লেখ নেই। জানা গিয়েছে, এই নোটের ভাবনা প্রথম মাথায় আসে সতীন্দ্রমোহন ভগবত নামে পদার্থবিদ্যার এক শিক্ষকের। তিনি মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে যে পরিমাণ দুর্নীতি তার প্রতিবাদ করতেই ২০০১ সালে জিরো রুপি নোট-এর কথা প্রথম বলেন তিনি। তাঁর ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে সময় লেগেছে প্রায় ৬ বছর। প্রসঙ্গত ৬ বছর পর পঞ্চম পিলার তাঁর ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত অন্তত ২৫ লাখ জিরো রুপি নোট দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে সংস্থাটি।