সংক্ষিপ্ত
- ফের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি রাজীব চন্দ্রশেখরের
- এমএসএমই-দের সমস্যা নিয়ে এই চিঠি দিয়েছেন
- রাজীব জানিয়েছেন এটা একটা সুপারিশ পত্র
- বিজেপি সাংসদ রাজীব এমএসএমই নিয়ে লাগাতার কাজ করে চলেছেন
করোনাভাইরাসের ধাক্কা থেকে কীভাবে বাঁচতে পারেন ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোগীরা। বিশেষ করে যে সব মহিলা উদ্যোগপতি এক স্বপ্নকে আধার করে এতে সামিল হয়েছেন, তাঁরা কীভাবে নিজের সংস্থা ও প্রচেষ্টাকে সুরক্ষিত করবেন? এই প্রশ্নকে সামনে নিয়ে ফের এক অভিনব উদ্যোগে সামিল হলেন সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৫০ জন আন্তেপ্রঁণের সঙ্গে বৈঠক করেন শিল্পপতি তথা বিভিন্ন আন্তেপ্রঁণেদের উৎসাহদাতা হিসাবে কাজ করা সাংসদ রাজীব চন্দ্রেশখর। লকডাউন ৪-এর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এক আত্মনির্ভর ভারত গড়ার আহ্বান করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর এই লক্ষ্যে ২০ লক্ষ কোটির টাকারও বেশি এক বিশাল আর্থিক সহায়তামূলক প্যাকেজের ঘোষণা করেছেন। যাতে মূলত অর্থনীতির ৫টি দিককে মূল আলোকপাতে রেখে ৫ দিন ধরে বিষয় ধরে ধরে সেই আর্থিক প্যাকেজে বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ।
নরেন্দ্র মোদীর দেখানের সেই আত্মনির্ভর ভারতে-র একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এমএসএমই বা অতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোগপতির কথা। এমনই ১৫০ জন উদ্যোগপতির সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্স করেন সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর। এদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা উদ্যোগপতি। যারা এমএসএমই ক্ষেত্রে পা রেখেছেন এক বৃহৎ শিল্প সম্ভাবনার ভাবনাকে লালন-পালন করে। করোনাভাইরাসের ধাক্কায় বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে হাহাকার তৈরি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে অতি-ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র শিল্প। রাজীব চন্দ্রশেখর তাই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আত্মনির্ভর ভারত যেমন স্বদেশী এমএসএমই-র উদ্যোগপতিদের সাহস জোগাবে, তেমনি এইসব উদ্যোগপতিদের মধ্যে যারা একটু কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বা নবীন তাঁদেরকে হাত ধরিয়ে এই সঙ্কটের বৈতরণী পার করে দেওয়াটাও আবশ্যিক। কারণ, এতে এই উদ্যোগপতিরা ভবিষ্যতের জন্য এক ভরসা পাবেন এবং তেমনি সঙ্কটের সমস্যাগুলোকেও চিনতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যদি এই উদ্যোগপতিরা নিজেরাই তাঁদের ভাবনাগুলো সামনে মেলে ধরতে পারেন এবং সেইসব ভাবনার সঙ্গে আত্মনির্ভর ভারতের দর্শনকে কীভাবে মেলাবেন তা ধরতে পারেন। এমন এক ভাবনা থেকেই রাজীব চন্দ্রশেখর এক অভিনব ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করেন। যেখানে ১৫০ জন নবীন উদ্যোগপতি বা আন্তেপ্রঁণে যোগ দেন। যার অধিকাংশটাই ছিল মহিলা আন্তেপ্রঁণে।
কেন মহিলা আন্তেপ্রঁণের উপর অধিক গুরুত্ব-
স্বামী বিবেকানন্দের একটি প্রবল জনপ্রিয় উক্তি রয়েছে- আর তাতে তিনি বলেছিলেন সামাজিকভাবে যদি মহিলাদের স্বনির্ভর এবং শক্তিশালী না করা যায় তাহলে মানব সভ্যতার এগোনো সম্ভব নয়। কারণ, মহিলাদের হাতেই ভবিষ্যতের বট-বৃক্ষরা লালিত-পালিত হয়। তাই মহিলারা যদি সামাজিকভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তিশালী হন, তাহলে তাতে মানব সভ্যতার লাভ। সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখরের ধারনাও অনেকটাই তেমন। কারণ তাঁর মতে, মাইক্রো এন্টারপ্রাইজের ২০ শতাংশ রয়েছে মহিলাদের দখলে। ক্ষুদ্র-শিল্পেও রয়েছে ৩ শতাংশ মহিলা উদ্যোগপতির উপস্থিতি। স্মল এন্টারপ্রাইজেও রয়েছে ৫ শতাংশ মহিলা উদ্যোগপতিদের উপস্থিতি। মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজে এটা রয়েছে তিন শতাংশের সামান্য কিছু নিচে। রাজীব জানিয়েছেন, আত্মনির্ভর ভারত-এর দর্শনের আত্মপ্রকাশের পর থেকেই তিনি বহু মহিলা উদ্যোগপতির ই-মেল পাচ্ছিলেন। এইসব ই-মেল থেকে তিনি অনুভব করিছেলেন আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনার সঙ্গে এই মহিলা উদ্যোগপতিদের সংযোগের সেতুটা যাতে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে একটা বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ অতিমহামারি করোনাভাইরাসের ধাক্কায় এইসব উদ্যোগপতিরা অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। অর্থনীতির একটা শ্লথগতি এই আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই যে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে তা থেকে কীভাবে ফায়দা তুলে নিজের ব্যবসাকে চাঙ্গা করার সুযোগ পাচ্ছেন এই উদ্যোগপতিরা তা তুলে ধরাটা দরকার। আর সেই ভাবনা থেকেই রাজীব ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজন করেন, যেখানে যোগ দেন এই সব মহিলা উদ্যোগপতি। পরে এই একটি সুপারিশ পত্র-ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, ক্ষুদ্র ও অতি-ক্ষুদ্র শিল্পমন্ত্রক এবং নারী কল্যাণ মন্ত্রককে পাঠান রাজীব।
কী রয়েছে এই সুপারিশ পত্রে-
১। মহিলা উদ্যোগপতিদের জন্য সামগ্রিক এক পরিকল্পনা- শুধুমাত্র মহিলাদের-কে ভিত্তি করে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি হওয়া উচিত বলে মনে করছেন রাজীব এবং তাদের জন্য আলাদা করে আর্থিক প্যাকেজ বরাদ্দ হোক। এই মহিলা উদ্যোগপতিরা তাঁদের ব্যবসাকে কীভাবে আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবেন তা নিয়ে একটা স্পষ্ট ধারনা তৈরি হওয়াটা দরকার। রাজীব এই সুপারিশ পত্রে জানিয়েছেন, উৎপাদন বজায় রাখা থেকে শুরু করে সংস্থার দফতরের ভাড়া মেটানো এবং কর্মীদের মাইনে দেওয়ার জন্য এই মহিলারা উদ্যোগপতিরা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। যদি, একটা সুনির্দিষ্ট আর্থিক পরিকল্পনা এদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা যায় তাহলে তার ভালো ফল সূদূরপ্রসারী হবে।
২। ইএসআই ও পিএফ জমাতে সময় আরও বাড়ানো- এই সব খাতে অর্থ জমা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন আন্তেপ্রঁণেরা। এই খাতে আরও সময় দেওয়া উচিত বলেই মনে করছেন রাজীব। কারণ, ব্যবসায় প্রতিনিয়ত ক্ষতি হচ্ছে। এহেন অবস্থায় আবশ্যিক ক্ষতি সামলানোর বিষয়ে নজর দেওয়া। কিন্তু, সরকারি নিয়ম মেনে কর্মীদের ইএসআই ও পিএফ মেটানোর বিষয়টি কাঁটার মতো বিঁধছে।
৩। এসএফসি ঋণ প্রদানে একটু সুযোগ বৃদ্ধি- বহু উদ্যোগপতি এসএফসি ঋণ নিয়ে রেখেছেন। এই সঙ্কটকালে সেই ঋণের সুদ প্রদানে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই এসএফসি ঋণ প্রদানের সময় যাতে একটু বাড়ানো যায় এবং কিছু কঠোর নিয়মকে শিথিল করা সম্ভব হয়, তাহলে কিছুটা হলেও অক্সিজেন পাবেন এই উদ্যোগপতিরা।
৪। মাইনে বৃদ্ধির সময়কে পেছানো- সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এপ্রিল থেকেই এমএসএমই-তে মাইনে বৃদ্ধি করতে হয়। ব্যবসায় মন্দার জেরে এটাকে আপাতত একটু পিছনোর দরকার।
৫। মহিলা উদ্যোগপতিদের স্বার্থকে সুক্ষরিত করতে রাজ্য সরকারগুলোকে উৎসাহদান।
৬। মোরাটোরিয়াম পিরিয়ডে বৃদ্ধি- এটাকে ছয়মাস থেকে নয় মাসের মধ্যে করতে পারলো ভালো। বর্তমানে মোরাটোরিয়াম পিরিয়ড তিন মাস। মোরাটোরিয়াম পিরিয়ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটাও নজরে রাখতে হবে যাতে সুদ বা পেনাল্টিতে কোনও বৃদ্ধি না করা হয়।
৭। মাইক্রো এবং স্মল বিজনেস থেকে জিএসটি লোপ করা। এতে উদ্যোগপতিদের উপর অযথা অতিরিক্ত বোঝা বাড়ছে। এই জিএসটি-র চক্করে বহু মহিলা উদ্যোগপতি এবং স্টার্টআপ অনলাইনে জিনিস বিক্রি করতে পারছে না।
৮। গ্রামাঞ্চলে থাকা মহিলা উদ্যোগপতিরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র রুরাল-উইম্যানদের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা তৈরির দরকার আছে। স্থানীয় সরকারও যাতে এই বিষয়ে ভাবনা রেখে বিভিন্ন প্রকল্পে মহিলা উদ্যোগপতিদের সংযুক্ত করে, তা দেখতে হবে।
৯। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসে নিয়ে যেসব উদ্যোগপতি কাজ করছেন তারা কর্মীদের মাইনে দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। কারণ, এই সঙ্কটে তারা যে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাতে মঞ্জুরে অধিকাংশ সময়েই বিলম্ব হচ্ছে। কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সরকার এই সব উদ্যোগপতিদের জন্য যে নিয়ম তৈরি করছে তা ব্যাঙ্কগুলো গ্রাস-রুট লেভেলে মানছে না।
১০। ইক্যুয়িটি ফান্ড সাপোর্ট- মহিলা উদ্যোগপতিদের কাছে এই ধরনের সাপোর্ট আসাটা খুবই দরকরা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায় ইক্যুয়িটি ফান্ডিং-এর সহজ লভ্যতা খুবই একটা কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে দুই ধরনের অ্যাপ্রোচ নেওয়া যেতে পারে- (ক)- এর জন্য দরকার রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক এবং ফান্ডস অফ ফান্ডস বা এফওএফ-এর। যাতে সরকার ক্যাপিটাল দেবে এনআইআইএফ এবং এসআইডিবিআই-এর মাধ্যমে। এরা সেবি-তে রেজিস্ট্রার হওয়া মহিলা পরিচালিত সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করবে। (খ)- ডিপিআইআইটি-তে যে সব মহিলা উদ্যোগপতির স্টার্টআপ নথিভুক্ত রয়েছে তাতে যদি কিছু সুবিধা প্রদান করা যায়। কারণ এরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন।
এই সুপারিশ পত্রের পরিশেষে রাজীব জানিয়েছেন, 'রিবুট ইন্ডিয়া ইকনমি' নামে এই শীর্ষক ভিডিও কনফারেন্সে যে সব মহিলা উদ্যোগপতি যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই চাইছেন আরও বেশি পরিশ্রম করতে এবং অর্থনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ স্বদেশি শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে। কিন্তু, এর জন্য তাঁরা বারংবার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সর্বোত সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের জেরে লকডাউন শুরু হতেই নানাভাবে সক্রিয় হয়েছেন রাজীব চন্দ্রশেখর। কখনও স্বাস্থ্যকর্মীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কখনও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন সুরাহা প্রদানের কথা বলেছেন তিনি। দেশের এমএসএমই-গুলোর সমস্যা নিয়ে ২ মে-ও এমন এক আলোচনামূলক পত্র কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রেরণ করেছিলেন রাজীব চন্দ্রশেখর।