সংক্ষিপ্ত
- কেএলও লিডার জীবন সিংহের শক্ত ঘাঁটি কুমার গ্রাম
- এবার বিধানসভায় সেই কেন্দ্রে বিজেপির পতাকা ছেয়ে গিয়েছে
- এই কেন্দ্রে লড়াই ঘাশফুলের সঙ্গে পদ্ম ফুলের
- ২ মে জানা যাবে কার দখলে গেল কুমার গ্রাম
শমিকা মাইতিঃ উন্নয়নের প্রশ্নে মিলেমিশে গিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও জাতীয়তাবাদ। বিচ্ছিন্নতাবাদী কামতাপুর আন্দোলনের ডাক দিয়ে নব্বইয়ের দশকে উত্তরবঙ্গকে অশান্ত করে তুলেছিলেন যিনি, সেই জীবন সিংহের কুমারগ্রামে এখন সার দিয়ে জাতীয়তাবাদের গেরুয়া পতাকা। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লক ও আলিপুরদুয়ার ব্লকের ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত কুমারগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রটিতে বহু দিন ধরে ক্ষমতায় ছিল আরএসপি (রেভোলিউশনরি সোশালিস্ট পার্টি)। ২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে তৃণমূল ঝড়ের সময়েও ৪০.৮৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তারা। ২০১৬ সালে অবশ্য তৃণমূল ৩৭.২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এই কেন্দ্রটি দখল করে। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় উত্তরবঙ্গের অন্যান্য এলাকার মতো এখানেও গেরুয়া ঝড় ওঠে। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জন বরিয়া এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৫২.৭৭ শতাংশ ভোট পান। অথচ, জন বরিয়ার প্রতিপক্ষ তৃণমূলের দশরথ তিরকে কুমারগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই তিন বার জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। তখন অবশ্য বাম রাজনীতি (আরএসপি) করতেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ 'পথে বসা অনুশীলন করছেন মমতা', শাস্তি পাওয়ার পরও অদম্য রাহুল সিনহা
২০২১-এর বিধানসভা ভোটে এসটি প্রার্থী সংরক্ষিত এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী লিও কুজুর। তিনি আবার ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে লড়েছিলেন। বিজেপি প্রার্থী মনোজ ওরাও প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে বলছেন, নিজের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তিনি। গেরুয়া পতাকায় মোড়া কুমারগ্রামে গেলে তাঁর সেই দাবি নিয়ে কোনও সংশয় থাকবে না। কামতাপুরি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি কুমারগ্রাম গোলাবারুদ ভুলে এখন আপাতশান্ত। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, আসামের কোকরাঝাড়, বনগাইগাঁও, ধুবরি, গোপালপাড়া, বিহারের কিসানগঞ্জ, এবং নেপালের ঝাপা জেলা নিয়ে পৃথক কামতাপুরী রাজ্য গঠনের ডাক দিয়ে নব্বইয়ের দশকে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) প্রতিষ্ঠা করেন জীবন সিংহ। তাঁর পিতৃদত্ত নাম তমির দাস। বাড়ি আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রামের মধ্য হলদিবাড়ি গ্রামে। খুন-অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে কেএলও একসময় গোটা উত্তরবঙ্গে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছিল। জীবনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, বোমা বিস্ফোরণ, খুন, অপহরণ তোলাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে। ২০০৩ সালে ভূটানে সেনা অভিযানের পর কেএলও-র প্রায় সব নেতা ধরা দিলেও জীবন উধাও হন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, নেপালের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঘাঁটি গেড়েছিলেন জীবন-সহ কেএলও-র কয়েকজন। পরে সেখান থেকে উত্তর-পূর্বের একটি দেশে শিবির করে ঘাঁটি গাড়েন তাঁরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-১৩ সালের পর ঝিমিয়ে পড়া কেএলও নতুন ভাবে সংগঠন গড়ার চেষ্টা শুরু করেছে। এর জন্য আলফা, নাগা জঙ্গি, এনএসসিএন, এনবিএফবি, এনএসসিএন (খাপলং) গোষ্ঠীর তৈরি ইউনাইটেড ফ্রন্টে সামিল হয়েছে কেএলও। তারপর থেকে জীবনকে বাংলাদেশ, নেপাল এবং মায়নমার সীমান্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে বলে খবর রয়েছে রাজ্য পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের কাছে। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে মাওবাদী ও কেএলও জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করে মূলস্রোতে ফিরে আসার ডাক দেন। সেই মতো বেশ কিছু প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি সরকারি হোমগার্ডের চাকরিও পেয়েছেন।
আরও পড়ুনঃকমিশনকে ফাঁকি দিয়ে প্রচারই করলেন মমতা, কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালেন সুজন.
আরও পড়ুনঃগেরুয়া শিবিরের লক্ষ্যে বাংলা, এই জয় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ বিজেপির কাছে
এদিকে, রাজ্য সরকারের দাবি মেনে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্র। ২০১৫ সালে একবার রটে যায় মায়ানমার সীমান্তে সেনা অভিযানে কেএলও প্রধানের মৃত্যু হয়েছে। যদিও সেই রটনা ভুয়ো বলে পরে জানা যায়। ২০১৭ সালে জীবনের স্ত্রী ভারতী অসুস্থ অবস্থায় শিলিগুড়ির একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সেখানেই মারা যান কুমারগ্রামের মেয়ে ভারতী। তাঁদের দুই মেয়ে এখন বড় হচ্ছে ভারতীর বাপের বাড়িতে। জীবন সিংহের পরিবারের লোকেরা বিজেপি সমর্থক। তাঁর দাদা সমীর দাসের কথায়, ‘এদিকে সব বিজেপি।’ এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তৃণমূল সরকারের ডাকে অনেক কেএলও জঙ্গি সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এলেও সকলের চাকরি হয়নি এখনও। বাম আমলে যেমন এই এলাকার উন্নয়নে কোনও কাজ হয়নি, তেমনই তৃণমূল আমলেও কাজ হয়নি। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির উপরে তাই শেষ বাজি ধরেছে কুমারগ্রাম।