সংক্ষিপ্ত
- নীল বাড়ির লড়াইতে সামিল লকেট
- বিজেপির প্রথম সারির নেত্রী তিনি
- সাংসদ হয়েও বিধায়ক হওয়ার লড়াইয়ে
- দলীয় কোন্দল সামনে তিনি এখন জয়ের লক্ষ্যে
তাপস দাস, প্রতিনিধি,
পুরোহিত ভাতার ঘোষণায় ভারতীয় জনতা পার্টির যে নেত্রীর খুশি হবার কথা ছিল, তিনি তেমন কিছু ব্যক্ত করেছেন বলে জানা যায় না। তাঁর বাবা ও ঠাকুর্দা ছিলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের পুরোহিত। আর তিনি এবার প্রার্থী হয়েছেন হুগলি জেলার চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। বর্তমানে তিনি হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদও বটে।
লকেটকে প্রার্থী পদ দেওয়া নিয়ে যা শোরগোল হয়েছে, তা বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। লকেটকেও। তাঁর নাম ঘোষণার পর রাজনীতি ছেড়ে দেবার কথা ঘোষণা করেছেন একজন নেতা, ভাঙচুর হয়েছে স্থানীয় দলীয় দফতর, এমনকী হেস্টিংসের পার্টি অফিসে বিক্ষোভকারীরাও লকেট প্রসঙ্গ তুলেছেন। পরিস্থিতি এমনই হয়েছিল যে নাম ঘোষণার পর, বেশ কয়েকদিন নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের দিকে পা-ই বাড়াননি লকেট।
লকেট চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৭৪ সালে। দক্ষিণেশ্বরের পুরোহিত বাড়িতে জম্মগ্রহণের পরেও তাঁর মা তাঁকে নিয়ে যান নাচ শেখাতে। লকেট ভারত নাট্যম, কথাকলি, মণিপুরী নৃত্যে দক্ষতালাভ করেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মমতাশংকরের ব্যালে ট্রুপের সঙ্গে বিদেশেও যান তিনি।
২০০২ সালে তাঁর রুপোলি পর্দার জগতে প্রবেশ, ২০২০ সালেও সিনেমা করেছেন তিনি। রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি ছিল তৃণমূলের সঙ্গে, তবে ২০১৫ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি ময়ূরেশ্বর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন, কিন্তু হেরে যান। তবে এ পরাজয় দলের কাছে তাঁর দর কমায়নি। ২০১৭ সালে রূপা গাঙ্গুলিকে সরিয়ে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী করা হয়। পরে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন অগ্নিমিত্রা পাল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি হুগলি লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং রত্না দে-কে বিপুল পরিমাণ ভোটে হারান। তিনি ৪০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন।
এবারে বিজেপি যেসব সাংসদকে প্রার্থী করেছে, তার অন্যতম বাবুল সুপ্রিয় ও লকেট চট্টোপাধ্যায়। দুজনেই বিনোদন ও সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে যুক্ত। লকেট যেমন রাজ্য নেতৃত্বের প্রিয় পাত্রী, তেমনই বাবুল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্লু আইড বয়। লকেটকে নিয়ে প্রভূত অভিযোগ উঠেছে বিজেপিতে। হুগলিতে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে টিকিট দেওয়ার পিছনে তিনিই রয়েছেন বলে বিজেপির বিক্ষুব্ধ অংশের অভিযোগ। সমস্ত বিক্ষোভ কাটিয়ে, বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে নিয়ে বা তাদের পরোয়া না করে, যে কোনও ভাবেই হোক চুঁচুড়া দখল রাখতে চাইবেন লকেট। তবে সাংসদ হবার কারণেই, ওই লোকসভার কোনও বিধানসভাতেই ফল খারাপ হলে তার দায় যে নিজের ওপরেই পড়বে, সে কথাও ভালই বুঝছেন এই অভিনেত্রী। আপাতত তিনি দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটছেন। নিচে বিক্ষোভের আঘুন জ্বলছে, আপাতত তা ধিকিধিকি দেখালেও যে কোনও সময়ে দপ করে জ্বলে উঠতে পারে।