সংক্ষিপ্ত
ভারতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাব রয়েছে
প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মী
প্রয়োজনীয় পিপিই কিট নেই হাসপাতালে
২২ লক্ষ কিটের অর্ডার দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে গোটা ভারতে আজ ঘরে ঢুকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে গেটের বাইরে। এই অবস্থায় দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য দিন রাত এক করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা। কিন্তু করোনার মত মারাত্মক ছোঁয়াচে জীবানুর সঙ্গে লড়াই করার মত প্রয়োজনীয় সামগ্রী আজ বাড়ন্ত দেশে। সোমবার প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, দেশেক বিভিন্ন হাসপাকালে ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট রয়েছে। এখনও ২১ লক্ষ পিপিই অর্ডাল দেওয়া রয়েছে। যা আগামী চৌঠা এপ্রিল হাতে পেতে পারে ভারত।
কিন্তু প্রয়োজনী নিরাপত্তার সামগ্রী হাতে না থাকায় একাধিক জায়গায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসতে শুরু করেছে। রাজধানী দিল্লিতেই চিকিৎসা করার সময় ৬জন চিকিৎসক, নার্স সহ ১৪ জন স্বাস্থ্য কর্মী আক্রান্ত হয়েছে। একই ছবি রাজস্থান, কর্নাটক, উত্তর প্রদেশ, বিহার কেরলে। দিল্লির এক মহল্লা ক্লিনিকের চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় স্বেচ্ছাবন্দি থাকতে হয়েছে প্রায় ১ হাজার মানুষকে। রাজস্থানেও চিকিৎসক সংক্রমিত হওয়ায় গোটা আইসিইউ ইউনিটকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠান হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব থাকায় সন্দেহভাজন চিকিৎসকদেরই কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।এই পরিস্থিতিতেও দেশে প্রায় ১ হাজার করোনা আক্রান্ত মানুষকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনঃ করোনা থেকে বাঁচতে অ্যান্টি-ম্যালেয়ার ওষুধ, তাতেই কি মৃত্যু অসমের চিকিৎসকের
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না পেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা রেইন কোর্ট আর মোটবাইকের হেলমেটকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। এখও পর্যন্ত প্রায় ২৪ জন চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। এই অবস্থায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে রীতিমত সাফল্যও পেয়েছেন ভারতের চিকিৎসকরা। কারণ কেরলে বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত দম্পতিকে তাঁরা সুস্থ করে বাড়ি পাঠাতে পেরেছেন। স্বামীর হয় ৯৩ আর স্ত্রী ৮৮।
করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসকাই যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তবে তা রীতিমত অশনী সংকেত। কারণ এই দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা রীতিমত বেহাল। সদ্যোপ্রকাশিত তথ্য অনুযায়ীয় এই দেশে প্রায় দেড় হাজার মানুষের জন্য একজন চিকিৎসক রয়েছেন। দেশে সবমিলিয়ে চিকিৎসকের সংখ্যা ১১ লক্ষ ৫৯ হাজার। ২০১৯ সালে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে নথিভুক্ত অ্যালোপেথিক চিকিৎসকের সংখ্যা ১,১৫৪,৬৮৬। আর সরকারি হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ৭,৩৯,০২৪টি। হিসেব অনুযায়ী ভারতে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৬ লক্ষ কম চিকিৎসক রয়েছে। ২০ লক্ষ কম নার্স রয়েছে দেশে। আর স্বাস্থ্য কর্মীদের সংখ্যাও নেই পর্যাপ্ত। তাই অবিলম্বে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় কিট সরবরাহ করা উচিৎ বলেই মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পরিস্থিতি মোকিবিলায় আগেই কেন্দ্রীয় সরকার চিকিৎক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য অতিরিক্ত ৫০ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার কথা ঘোষণা করেছে।
শুধুমাত্র সরকারই যে চিকিৎসকদের প্রতি উদাসীন তা নয়। কারণ সাধারণ মানুষেও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বাড়ি ছাড়া করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এই সময় যা খুবই অমানবিকতার পরিচয় বলেই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ নিজের জীবন বিপন্ন করেই ওঁরা চিকিৎসা করছেন আমাদের।