সংক্ষিপ্ত
- রোগীকে জড়িয়ে 'জাদু কি ঝাপ্পি' দেওয়া সম্ভব নয়
- তাই অবসাদ কাটাতে গান গাইলেন চিকিৎসকরা
- অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ
- সাধুবাদ জানাচ্ছেন বাসিন্দা থেকে রোগীর আত্মীয়রা
এ যেন রিল লাইফ নেমে আসছে রিয়াল লাইফে। বছর কয়েক আগের বলিউডের 'মুন্নাভাই এমবিবিএস' স্মৃতি যেন একবার চোখের সামনে তাজা হয়ে উঠছে। তবে এক্ষেত্রে রোগীকে জড়িয়ে 'জাদু কি ঝাপ্পি' দেওয়া সম্ভব না হলেও, রীতিমতো সেই আবেগকে কাজে লাগিয়ে করোণা আক্রান্ত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই কারীদের মনোবল বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করে এগিয়ে এলো মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন, 'প্লাস্টিক গলে সমস্যা', মেরামতির জন্য আগামী ৪৮ ঘন্টা বন্ধ নিমতলা মহাশ্মশান
কাচের ঘরের বাইরে বড় বড় করে লেখা কোভিড ওয়ার্ড । আর তারই ভিতরে বেডে শুয়ে রয়েছেন অক্সিজেনের নল নিয়ে করোণা আক্রান্তরা। সারাক্ষণ যেন মৃত্যু ভয় ওদেরকে তারা করে চলেছে। আর এরই মধ্যে তাদেরকে চিকিৎসার পাশাপাশি একটু ভিন্ন ধরনের স্বাদ দিতে এগিয়ে এসেছেন হাসপাতালে একদল চিকিৎসক সহ নার্সেরা। এরা কেউই পেশাদার শিল্পী কিংবা অভিনেতা নন।তবে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াইকারী করোনা রোগীদের মনোবল চাঙ্গা করতে কাচের ঘরের বাইরে থেকে দিব্যি মাইক্রোফোন এর মাধ্যমে কখনো 'উই শ্যাল ওভারকাম', 'কখনো বা আমরা করব জয়' ,রবীন্দ্রসঙ্গীতের জীবনমুখী গানের সুরের মধ্যে দিয়ে বন্ধ কাচের ঘরের ভিতরে আওয়াজ পৌঁছে দিচ্ছেন। আর এতেই প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকা ওই একদল মানুষ বেঁচে থাকার নতুন রসদ পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন, বন্ধ শ্মশান, করোনা রোগীর দেহ আগলে ১৬ ঘন্টা করুণাময়ী আবাসনের পরিবার
এমন অভিনব পরিষেবা দিতে পেরে একদিকে যেমন খুশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের সুপার অমিয় বেরা, পাশাপাশি কাঁধে গিটার ঝুলিয়ে মিউজিকে তাল দেওয়া তরুণ চিকিৎসক অনির্বাণ দত্ত থেকে শুরু করে মামুন কবীরেরা। সঙ্গে গলা মিলিয়ে হাসপাতালে নার্স দিদিরাও দিব্যি উচ্ছ্বসিত এই কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পেরে। অন্যদিকে করোণা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার চলার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভারাক্রান্ত মন থেকে আতঙ্ক কাটাতে হাসপাতাল এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন মুর্শিদাবাদ জেলার সর্বস্তরের বাসিন্দা থেকে রোগীর আত্মীয়রা।
এমনই এক করোণা আক্রান্ত রোগীর আত্মীয় শান্তনু দাস (নাম পরিবর্তিত) বলেন," ওই কাচের ঘরের মধ্যে দিনের-পর-দিন আবদ্ধ হয়ে থাকা চরম যন্ত্রণাদায়ক। পরিবার-পরিজনকে দেখতে পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ এরই মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন ভাবনা কে আমরা কুর্নিশ জানাই। কিছুটা হলেও এই প্রচেষ্টা ঐসকল করোনা রোগীদের মনে মারন আতঙ্ক কাটাতে খানিকটা হলেও সাহায্য করবে নিশ্চিত"। আরে যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুপার অমিও বেরা বলেন," সারাক্ষণ কেবল আতঙ্ক আর আতঙ্ক নিয়ে মানুষ স্বাভাবিক থাকতে পারেনা, তাই ঐ সকল কাচের ঘরের মধ্যে থাকা মানুষদের মনের যন্ত্রণা ভয় কে কাটাতে আমরা এই পথ বেছে নিয়েছি"।