সংক্ষিপ্ত

বুধবার ওমিক্রন (Omicron Variant) পৌঁছে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal)। এই ভেরিয়েন্টকে হালকা ভাবে নিলে অবস্থা হবে ব্রিটেনের (Britain) মতো। 
 

বুধবার ওমিক্রন (Omicron Variant) পৌঁছে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। আবু ধাবি (Abu Dhabi) থেকে হায়দরাবাদ (Hyderabad) হয়ে, রাজ্যে ফেরা এক ৭ বছরের বালক, করোনার এই নতুন ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত বলে সনাক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মনে করা হচ্ছে, ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট, ডেল্টার (Delta Variant) মতো প্রাণঘাতী নয়। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত, একজন ওমিক্রন আক্রান্তেরই মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে, কয়েকজনকে মাত্র হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্তরা উপসর্গহীন। তাই, অনেকেই এই ভেরিয়েন্টকে বেশ হালকা ভাবে নিচ্ছেন। পর্যাপ্ত সতর্কতা নিচ্ছেন না। এটা হলে কিন্তু সমস্যায় পড়তে হবে। যেরকম দেখা যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বড়দিনের সময়, অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর, সেই দেশে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে সম্ভবত বিচ্ছিন্নতায় কাটাতে হবে। 

মঙ্গলবার, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভাকে কোভিড-১৯ (COVID-19) সংক্রান্ত আপডেট দেওয়ার সময়, ইংল্যান্ডের চিফ মেডিকেল অফিসার প্রফেসর ক্রিস হুইটি (Professor Chris Whitty) ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট নিয়ে চরম সতর্কতা জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, কোভিড--১৯'এর এই নতুন ভেরিয়েন্টটি অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ছড়িয়ে পড়ছে। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দফতরের অনুমান, যে গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বরের তুলনায়, এই বছর ক্রিসমাসে সম্ভবত চারগুণ বেশি মানুষকে বিচ্ছিন্নতায় থাকতে হবে। ২০২০ সালের ক্রিসমাসে, ব্রিটেনের বেশিরভাগ অংশেই পারিবারিক মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দেশজুড়ে জারি ছিল জাতীয় লকডাউন।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বর্তমানে সেই দেশে ওমিক্রনের জন্য প্রতি দুইদিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। ১৪ ডিসেম্বর সেই দেশে ৪,৭০০ টিরও বেশি ওমিক্রন কেস সনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের দাবি এই হারে চলতে থাকলে, ক্রিসমাসের আগে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ওমিক্রনের আক্রান্ত হবেন এবং তাদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে। অনেকেই অবশ্য, মনে করছেন,সরকারি হিসাবের থেকে, সেই দেশে ওমিক্রন আক্রান্তে প্রকৃত সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। সরকারের এই গাণিতিক মডেল নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। 

ব্রিটেনের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ওমিক্রনকে হালকাভাবে নেওয়া অত্যন্ত ভুল হবে। মহামারি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এটা ঠিক যে, নভেল করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের থেকে ওমিক্রণ ভেরিয়েন্ট কম ভয়ঙ্কর। তা সত্ত্বেও, এই ভেরিয়েন্টটির সংক্রামক ক্ষমতা এতটাই বেশি, যে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ পড়তে পারে। ব্রিটেন ইতিমধ্যেই হাসপাতালে রোগীদের জায়গা দিতে পারবে কিনা, তাই নিয়ে ভয় পাচ্ছে। সরকারী মডেল অনুযায়ী সেই দেশে করোনা মহামারির  দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় যতজন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেই সংখ্যাও আসন্ন দিনে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলি এবং কেয়ার হোমগুলি থেকে যত বেশি সম্ভব রোগীকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুধুমাত্র লন্ডন শহরেই ওমিক্রনের কারণে কোভিড সংক্রমণের হার দুই সপ্তাহের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও ৫০ শতাংশ বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে যেখানে ব্রিটেনে সারা দেশে দিনে ৯০ জন কোভিড রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছিল, এখন সেখানে গড়ে ১৪০ জনকে ভর্তি করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মঙ্গলবারই ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে ফের লকডাউন বা কঠোর কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ জারি করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, এই বিধিনিষেধ আট সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

ওমিক্রনে মৃত্যুর সংখ্যা, এখনও অবধি ওই একজনই। তবেমহামারি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনার কোনও ভেরিয়েন্টে গুরুতর অসুস্থতা শুরু হতে একটু সময় লাগে। ফলে, এক মাস পর থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। রাজ্যে একবার পৌঁছে যাওয়ার পর, সংক্রমণ ছড়াতে কিন্তু বেশি সময় লাগবে না। তাই সতর্ক থাকুন।