সংক্ষিপ্ত

করোনা মহামারির পরীক্ষায় ফেল করছে বিশ্ব, এমনই মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। কোথায় ভুল হচ্ছে মানব জাতির, কী বললেন হু-প্রধান? 

করোনা মহামারির পরীক্ষায় হারতে বসেছে পৃথিবী। জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্সে ফের বিদ্যুত গতিতে করোনা মহামারি ছড়াতে শুরু করতেই এমন মন্তব্য করলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইসুস। এই বিষয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘেব্রেইসুস ফের সমস্ত মানবজাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এই ক্ষুদ্রাদিক্ষুদ্র শত্রুকে পরাস্ত করতে প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য।

গত দেড় বছর ধরে গোটা বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা। যখনই মানুষ ভেবেছে, অন্ধকারময় দিন শেষ, তখনই এই মারাত্মক ভাইরাসটি মানব জাতিকে ফের পঙ্গু করে রাখার নতুন নতুন পথ খুঁজে নিয়েছে। গত দেড় বছরের মধ্যে আমাদের হাতে এসেছে ভ্য়াকসিন, উন্নত হয়েছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। কিন্তু, তারপরও করোনাকে ঠেকানো যায়নি।

অর্থনৈতিক সমস্যা, বৈশ্বিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের চাপে পড়ে ভারতের মতো অনেক দেশই কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধকে শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। নির্বাচন, বাণিজ্য, খেলাধুলা, ধর্মীয় সমাবেশ - গত দেড় বছরে এই সবগুলিই সুপার-স্প্রেডার ইভেন্ট হিসাবে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও, মহামারির মধ্যেই দুঃসাহস দেখিয়ে এইসব  কর্মকাণ্ড চলছেই। সরকারের শিথিলতা ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্য়েও। অনেকেই, নিজেদের সাবধানতা, সতর্কতার মাত্রা কমিয়ে ফেলছেন। কেউ কেউ জেনেশুনেও ভাইরাসের বিপদকে অস্বীকার করতে চাইছেন।

আর এর ফল কী হয়েছে? সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি রূপ বদলে বদলে এখন এতগুলি বিভিন্ন রূপ তৈরি করেছে, যে টিকা পুরো ডোজ নিয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যাচ্ছে না। তাঁরাও নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেই ঘেব্রেইসুস বলেছেন, 'মহামারী একটি পরীক্ষা, যাতে ফেল করছে পৃথিবী। ৪ কোটিরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও অনেকেরই সেই পরিণতি হবে। ইতিমধ্যেই এই বছরের মৃত্যুর সংখ্যা, গত বছরের সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। সংক্রমণের ঝুঁকি সবজায়গায় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় শেষ হওয়া সম্ভব নয়। কেউ যদি মনে করেন মহামারির শেষ হয়েছে, তাহলে সে মূর্খের স্বর্গে বাস করছে'।

আরও পড়ুন - ৬৭ % ভারতীয়ের দেহেই করোনার অ্যান্টিবডি, ইতিমধ্যেই সংক্রমিত কত শিশু, জানালো সেরো-সমীক্ষা

আরও পড়ুন - কেন কমিয়ে দেখানো হয়েছে কোভিড-মৃত্যু, টিকার ঘাটতিই বা কতটা - কী জানালেন মনসুখ

আরও পড়ুন - ফের করোনার হাইজাম্প, একদিনে ৪০ শতাংশ বাড়ল নতুন সংক্রমণ - এটা কি তৃতীয় তরঙ্গের পদধ্বনি

ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি র মতো দেশগুলি রেকর্ড সংখ্যায় ভ্যাকসিন তৈরি করছে। কিন্তু, সেইসব টিকার সরবরাহ এতই অনিয়মিত যে কয়েকটি দেশ প্রায় তাদের সমগ্র জনসংখ্যাকে টিকা দিয়ে দিয়েছে, আবার কোনও কোনও দেশে টিকাকরণ বলতে গেলে শুরুই করা যায়নি। এই বৈষম্যকেই বিদ্ধ করেছেন ঘেব্রেইসুস। তিনি জানিয়েছেন, এখনুও পর্যন্ত করোনার যা টিকা তৈরি হয়েছে, তার ৭৫ শতাংশই পেয়েছে মাত্র ১০টি দেশ। যাদের হাতে অর্থ আছে, তাদের দেশ আনলকের পথে হাঁটছে, যাদের নেই, তারা লকডাউন করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু এতে করে কোনও লাভ হচ্ছে না। এই মহামারিকে হু প্রধান তুলনা করেছেন নরকের আগুনের সঙ্গে। বলেছেন, 'একদিকে জল ছিটিয়ে লাভ নেই, অন্যদিকে আগুন জ্বলতেই থাকবে'।