সংক্ষিপ্ত
নভেল করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই সকলের অগোচরেই বাড়ছে আরও বড় বিপদ। তিব্বতের মালভূমির হিমবাহগগুলির গলে যাওয়া বরফে মিলল একেবারে অচেনা অন্তত ২৮টি ভাইরাস।
গোটা বিশ্ব যখন নভেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করতে ব্যস্ত, তখন সকলের অগোচরেই বাড়ছে আরও বড় বিপদ। মাইক্রোবায়োম জার্নালের সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র অনুযায়ী প্রায় ১৫,০০০ বছর ধরে তিব্বতের মালভূমির হিমবাহগগুলির বরফের মধ্যে দিব্বি টিকে আছে বেশ কিছু ভাইরাস, যেগুলির অধিকাংশই আমাদের অজানা। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটের কারণে ১৯৭০ সাল থেকে গত ৫০ বছরে এই অঞ্চলের প্রায় এক চতুর্থাংশ বরফ গলে গিয়েছে। কাজই মানব সভ্যতায় এই ভাইরাসগুলির এসে পড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আমমেরিকার ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা, তিব্বত মালভূমি অঞ্চলের হিমবাহগুলির জমাট বরফের দুটি 'আইসকোর'নমুনা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। সেই নমুনাদুটি থেকে তারা ৩৩টি ভাইরাসের জেনেটিক কোড পেয়েছিলেন। আর এর মধ্যে মাত্র চারটি বিজ্ঞানীরা আগে থেকে চিনতেন। বাকি অন্তত ২৮ টি ভাইরাসের জেনেটিক কোড, সম্পূর্ণ অজানা।
গবেষক ঝি-পিং ঝং বলেছেন, এই হিমবাহগুলি ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছিল। ফলে ধুলিকণা এবং গ্যাসের পাশাপাশি অনেক ভাইরাসও হিমবাহগুলির বরফে আকে গিয়েছে। পশ্চিম চিনের এই হিমবাহগুলিতে এখনও পর্যন্ত ভালভাবে কোনও গবেষণা করা হয়নি। তাই তাঁরা অতীতে থেকে বর্তমান সময়ে পরিবেশ পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে শতাব্দী ও সহস্রাব্দ ধরে কীভাবে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াগুলি বিবর্তিত হয়েছে, তা বুঝতেই এই গবেষণা চালিয়েছিলেন। তবে, সমপরিমাণ হিমায়িত মাটি বা সমুদ্রের জলে যত পরিমাণ ভাইরাস থাকে, তার তুলনায় হিমবাহের বরফে ভাইরাসের ঘনত্ব বেশ কম ছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
গবেষকদের অনুমান, বরফের নমুনায় পাওয়া এই ভাইরাসগুলির প্রায় অর্ধেকই বেঁচে আছে স্রেফ বরফের উপস্থিতির কারণেই। আরেক গবেষক তথা ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক মাথি সালিভান জানিয়েছেন, ভাইরাসগুলির জিনে এমন চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, যা তাদেরকে হিমশীতল পরিবেশেও কোনও জীবিত কোষকে সংক্রমিত করতে সহায়তা করে। এই জেনেটিক স্বাক্ষরের জন্য়ই তারা ওই চরম অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে।
আরও পড়ুন - নয়া আতঙ্কের নাম নোরোভাইরাস, করোনা-মাঙ্কি বি-র সঙ্গেই এবার 'ভমিটিং বাগ'এর প্রাদুর্ভাব
আরও পড়ুন - ২০০০০ বছর আগেই এসেছিল করোনা মহামারি, মানব DNA-গবেষণায় পাওয়া গেল তার ছাপ, দেখুন
আরও পড়ুন - কখনই শেষ হবে না কোভিড-১৯ মহামারি, বেঁচে থাকতে হবে এর সঙ্গেই - তৈরি হচ্ছে রোডম্যাপ
তিনি আরও জানিয়েছেন, এই বরফের মধ্যে আটকে থাকা ভাইরাস এবং অন্য়ান্য জীবাণু সম্পর্কে বিজ্ঞানের জানা খুবই কম। সেখানে কী কী বিপদ লুকিয়ে রয়েছে কেউ জানে না। ক্রমে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে দুই মেরু প্রদেশ এবং তৃতীয় মেরু হিসাবে পরিচিত এই তিব্বতি মালভূমির হিমবাহগুলির বরফ গলছে। নভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি নতুন হলেও, করোনাভাইরাস পরিবারটি মানব সভ্যতার কাছে অপরিচিত ছিল না। তার নতুন সদস্যের মোকাবিলা করতেই গত দেড়বছর ধরে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে। বরফ গলে গিয়ে যদি এই সম্পূর্ণ অচেনা ভাইরাসগুলির সংস্পর্ষে আসে মানুষ, তাহলে কী হতে পারে, তা কল্পনা করাই যায়।
তাই, ওহায়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, এই ভাইরাসগুলির ডকুমেন্টেশন এবং এগুলিকে নিয়ে গবেষণা করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকটিরিয়া এবং ভাইরাস জলবায়ু পরিবর্তনে কীভাবে সাড়া দেয়? বরফের যুগে থেকে বিশ্বউষ্ণায়নের সময়ে আসলে কী ঘটে, সেগুলি নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন।