সংক্ষিপ্ত
বৌদ্ধরা মনে করেন বর্গভীমা মন্দিরের স্থানটি প্রথমে একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল। বর্গভীমা মন্দিরটি একান্ন পীঠের অন্তর্ভুক্ত কিনা এ নিয়ে মতভেদ আছে। হাজারো কাহিনি ও রহস্যে ঘেরা তমলুক বা প্রাচীন তাম্রলিপ্তের বর্গভীমা মন্দির।লিখছেন অনিরুদ্ধ সরকার।
W. W. Hunter তাঁর : ‘A Statistical Account of Bengal’, Vol 3, 1876, London গ্রন্থে বর্গভীমার দেবীমূর্তর বর্ণনা দিচ্ছেন, – দেবীর ডানদিকের উপরের হাতে ত্রিশূল, নীচে তলোয়ার; বা-দিকের উপরের হাতে তলোয়ার ও নীচে অসুর-মুণ্ড। তমলুক ও পার্শ্ববর্তী স্থানে ‘বর্গভীমা’ বা ‘ভীমা মা’ অত্যন্ত জাগ্রত দেবী বলেই খ্যাত এবং উপাসিত। দেবীর প্রভাব এতটাই কাজ করত যে মন্দিরের বাইরে একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে অন্য কোন পূজা অনুষ্ঠিত হত না। এখন অবশ্য সেই প্রথার অবসান ঘটেছে। প্রচলিত রয়েছে যে, মারাঠারা যখন দক্ষিণবঙ্গে লুঠতরাজ ও ধ্বংসকার্য চালায়, তখন কিন্তু তারা তমলুকে এসে দেবী বর্গভীমাকে মূল্যবান দ্রব্যাদি শ্রদ্ধার্ঘ হিসাবে প্রদান করে। ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি কালাপাহাড়ের আক্রমণ থেকেও মন্দিরটি রক্ষা পেয়েছিল। এমন কি রূপনারায়ণ নদীর বন্যাও মন্দির অবধি এসে থেমে যায় বলে জনশ্রুতি।
মন্দিরটি কবে নির্মিত হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক কোন দিশা পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন ময়ূরবংশীয় রাজারাই এর প্রতিষ্ঠাতা। ময়ূরবংশের শেষ রাজা নিঃশাঙ্ক নারায়ণ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান এবং পরাক্রমশালী ধীবর বংশীয় কালু ভুইঞা সিংহাসনে আরোহণ করেন। কালু ভুইঞাই ছিলেন কৈবর্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম নৃপতি। অনেকের মতে কৈবর্ত রাজারাই বর্গভীমা মন্দিরটি নির্মান করেছেন। ষোড়শ শতাব্দীতে ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে’ যেমন এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে তেমনই উল্লেখ রয়েছে মাণিকরাম গাঙ্গুলীর ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যেও।
Subscribe to get breaking news alerts
বর্গভীমা মন্দিরটি একান্ন পীঠের অন্তর্ভুক্ত কিনা এ নিয়ে মতভেদ আছে। অনেকে মনে করেন সতীর বাঁ-পায়ের গোড়ালি এখানে পড়েছিল এবং এটি পীঠস্থান। পঞ্জিকায় একান্ন পীঠের যে তালিকা রয়েছে তাতে ‘বিভাস’ বা ‘বিভাসক’-এর পাশে তমলুকের নাম উল্লেখ করা থাকে।
মন্দিরের নির্মানকাল ও প্রতিষ্ঠাতা নিয়েও একাধিক মত ও কাহিনী বিদ্যমান। যার দুটি কাহিনীকে গবেষকরা মান্যতা দিয়েছেন। একটি হল, প্রাচীন ময়ূরবংশের রাজা গরুড়ধ্বজের কাহিনি। অন্যটি ধনপতি নামে এক ধনাঢ্য বণিকের কাহিনি।
প্রথম কাহিনিতে রাজা গরুড়ধ্বজ এক জেলেকে শোলমাছ ধরতে পাঠান হয়। সে মাছ ধরতে না পারায় ক্রুদ্ধ রাজা জেলেকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। তখন জেলে দেবীর দর্শন পায় ও দেবীর কৃপায় একটি রাজাকে প্রতিদিন মাছ দিতে থাকে। রাজা সে রহস্য জেনে ফেলায় দেবী ফিরে যান। অন্য দ্বিতীয় কাহিনিটি এরকম, রাজা ধনপতি বাণিজ্যপথে যাবার সময় তমলুকে নোঙর করেন এবং সেখানে একজন লোককে একটি সোনার পাত্র বয়ে নিয়ে যেতে দেখেন। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে একটি কূপের জলের স্পর্শে পিতলের জিনিস সোনায় রূপান্তরিত হয়। বণিক তমলুকের সমস্ত পিতলের বাসন যোগাড় করে সোনায় পরিণত করে সিংহলে চলে যান। ফিরে এসে মন্দিরটি নির্মান করে দেন।
বৌদ্ধরা মনে করেন বর্গভীমা মন্দিরের স্থানটি প্রথমে একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল এবং বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে আসায় বহুদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে এলাকাটি। পাল রাজাদের সময় বা তার কিছু পরে সেনেই বর্গভীমা দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।পাল রাজারা তন্ত্রের উপাসক ছিলেন।
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুজোর দিন গৃহসজ্জায় মেনে চলুন এই বিশেষ টিপস, জেনে নিন কী কী করবেন
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুজোর ভোগবৃত্যান্ত, পুজোয় কি কি ভোগ নিবেদন করা হয় চঞ্চলা লক্ষ্মীকে
আরও পড়ুন- ঘরে লক্ষ্মী বাস চাইলে করুন এই কাজ, কোনও দিন হবে না অর্থের অভাব