সংক্ষিপ্ত

মানুষের বয়স বাড়া মানেই বেঁচে থাকার বছরের সংখ্যা কমতে থাকা। ধরুন, আর পাঁচ বছর বা ১০ বছর হাতে। আর যাঁরা ২৫ কি ৩৫ তাঁরা সেটা সগর্বে ঘোষণা করেন!

২ নভেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি পোস্ট। ‘আজ জন্মদিন কি শুধু শাহরুখের একার পাগলা ?’ অনেক দিন পরে তাঁর আসল নাম ধরেও ডেকেছেন কেউ কেউ, দীপক চক্রবর্তী। শাহরুখ খানের মতোই আজকের দিন দীপক ওরফে চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীরও। আজ তাঁরও জন্মদিন। উত্তমকুমার পরবর্তী সময়ে বাংলা ছবির চার ‘স্তম্ভ’র এক জন। ঝুলিতে ১৩২টি ছবি। ছবি পরিচালনা করেছেন সাতটি। উইকিপিডিয়া বলছে, শাহরুখ আজ ৫৭। চিরঞ্জিৎ? জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিধায়ক-পরিচালক-অভিনেতার কাছে প্রশ্ন রেখেছিল এশিয়ানেট নিউজ।

কী জবাব দিলেন? ফোনের ওপারে মৃদু হাসির সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘বাড়তির দিকে না কমতি?’’ নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে ফেলেছেন তার পর। নিজের কথার ব্যাখাও দিয়েছেন, ‘‘এই বক্তব্য আমার নয়। কবি-সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের। ছোট বেলায় ওঁর একটি লেখায় পড়েছিলাম কথাটা। তখন ছোট তো, মানে বুঝতে পারিনি। এখন বুঝি, মানুষের বয়স বাড়া মানেই বেঁচে থাকার বছরের সংখ্যা কমতে থাকা। ধরুন, আর পাঁচ বছর বা ১০ বছর হাতে। আর যাঁরা ২৫ কি ৩৫ তাঁরা সেটা সগর্বে ঘোষণা করেন! আমার এখন কমতির দিকে গুনতি!’’

 

 

কেউই তুলনা পছন্দ করেন না। চিরঞ্জিৎ তো নয়ই। তবু একই দিনে জন্মদিন হওয়ায় বলিউড-টলিউডের দুই তারকাকে নিয়ে তুলনা যে এসেই যাচ্ছে! যেমন, ১ নভেম্বর মাঝ রাত থেকেই শাহরুখের জন্মদিন নিয়ে উন্মাদনা শুরু। অভিনেতা বাংলো মন্নত-এর ছাদে এসে গভীর রাতে দর্শন দিয়েছেন অনুরাগীদের। চিরঞ্জিতের ১ নভেম্বরের মাঝ রাত কেমন ছিল? বলিউডের বাদশা খান-এর জনপ্রিয়তা কি তাঁর জন্মদিন ভুলিয়ে দিয়েছে? এ বার পোড় খাওয়া বিধায়কের মতোই উত্তর, ‘‘আজ বলে নয়, আমার জন্মদিন নিয়ে কোনও কালেই মাতামাতি নেই। আমার কাছে বাকি দিনগুলোর মতোই এই দিনটি। কিন্তু কাছের মানুষেরা সেটা মানতে চান না। তাই গত রাত থেকে মোবাইলে শুভেচ্ছা বার্তার লাইন। সকাল থেকে ফোন। ফুলের বোকেও এসেছে বেশ কয়েকটি। আমি কৃতজ্ঞ, বাংলা আমায় মনে রেখেছে।’’ তার জন্য মাঝ রাত পর্যন্ত জাগতে হয়নি তাঁকে।

বাকি দিনের মতোই জন্মদিনের দিনটাও। তাই এ দিন অভিনেতার পাতে পায়েস ছাড়া রান্নার বিশেষ কোনও ঘটা নেই। বিকেলে কেক আসবে। সন্ধেয় প্রিয় জনদের নিয়ে সেই কেকের তুলতুলে বুকে ছুরি বসাবেন! প্রিয় বান্ধবীরাও আসবেন? হাসতে হাসতে পাশ কাটিয়েছেন এই প্রশ্নের। দেখতে দেখতে ৬৬টা বসন্ত পার। পিছনে ফিরে জীবন দেখেন? কোনও আফসোস বা ইচ্ছে? খুব নির্লিপ্ত গলায় জবাব, ‘‘নাঃ! বেশ কেটে গেল জীবনটা। অনেক দিন সবার সঙ্গে কাটিয়ে ফেললাম। এ বার ছুটি পেলেও আফসোস হবে না।’’ ঈশ্বর যদি আশীর্বাদ করে আবার তাঁকে ৩৬-এর চিরঞ্জিৎ করে দেন! ‘‘আমি একটা গবেষণা করছি। জ্বালানি ছাড়া টারবাইনের চাকা ঘোরানোর। আমার মতো আরও অনেকেই করছেন। এখনও কেউ সফল হননি। চাকা ঘুরবে মধ্যাকর্ষণ শক্তিতে। এতে প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হবে। দূষণ কমবে। বদলে বিদ্যুৎ তৈরি হবে। বয়স কমলে এই গবেষণাটা শেষ করে যেতে পারতাম। ৬৬ বলছে, হাতে আর বেশি সময় নেই!’’

বাংলা ছবি নিয়ে নতুন ভাবনা? ‘‘আর না। যতই ভাল ছবি করি, নোবেল পুরস্কার তো পাব না! একটা নির্দিষ্ট মাপ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা আসবে। অভিনয় করে ‘ছাপ’ রেখে যাওয়া যায় না’’, দাবি চিরঞ্জিতের। তাই কি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব প্রাঙ্গনে তাঁর দেখা মেলেনি! চঞ্চল চৌধুরীর ‘হাওয়া’ দেখেছেন? এ বারেও অকপট চিরঞ্জিৎ, ‘‘তা কেন! সময় পাইনি। শুনেছি খুবই ভাল ছবি। চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় খুবই ভাল করেন। পরে নিশ্চয়ই দেখব।’’ একটু থেমে হালকা অনুযোগ, ‘‘বাংলাদেশের হাওয়া বাংলায় ঝড় তুলে গেল! বাংলাবাসী চুপচাপ দেখল। ঠিক যে ভাবে দক্ষিণ ভারতের ছবি ছড়ি ঘোরাচ্ছে হিন্দি সাম্রাজ্যে! আমরা বাংলাদেশে ঢুকে কবে এ ভাবে রাজত্ব করব?’’