প্রয়াত অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর জন্য দিল্লিতে আয়োজিত এক প্রার্থনা সভায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী হেমা মালিনী। তিনি তাঁদের ৫৭ বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক, ধর্মেন্দ্রর মাটির কাছাকাছি থাকা ব্যক্তিত্ব এবং ফিল্মি কেরিয়ারের স্মৃতিচারণা করেন।
বলিউডের আসল হি-ম্যান ধর্মেন্দ্র আর এই পৃথিবীতে নেই। ২৪ নভেম্বর ২০২৫-এ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ৮৯ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। ২৭ নভেম্বর ধর্মেন্দ্র জির প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর এবং ছেলে সানি ও ববি দেওল মুম্বইতে তাঁর জন্য একটি প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছিলেন। ধর্মেন্দ্রর দ্বিতীয় স্ত্রী হেমা মালিনী সেদিন নিজের বাড়িতে তাঁর জন্য গীতা পাঠের ব্যবস্থা করেন। এবার হেমা ধর্মেন্দ্রজি এবং তাঁর মেয়ে এষা ও অহনা দেওলকে সঙ্গে নিয়ে নতুন দিল্লিতে একটি প্রার্থনা সভার আয়োজন করলেন। ১১ ডিসেম্বর দিল্লির ডঃ আম্বেদকর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে আয়োজিত এই প্রার্থনা সভায় ধর্মেন্দ্রর কথা বলতে গিয়ে হেমা কেঁদে ফেলেন।
ধর্মেন্দ্রর প্রার্থনা সভায় আবেগপ্রবণ হেমা মালিনী
ধর্মেন্দ্রর প্রার্থনা সভায় উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে হেমা মালিনী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “আজকের এই প্রার্থনা সভায় আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাতে গিয়ে আমি খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। আমি কখনও ভাবিনি যে আমার জীবনে এমন একটা দিন আসবে, যখন আমাকে এই প্রার্থনা সভা আয়োজন করতে হবে। বিশেষ করে আমার ধর্মেন্দ্রজির জন্য। গোটা বিশ্ব তাঁর চলে যাওয়ায় শোকাহত। কিন্তু আমার জন্য এটা একটা বিরাট ধাক্কা। এমন একটা সম্পর্ক, যা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল, তা আজ ভেঙে গেল।” হেমা মালিনী প্রার্থনা সভায় ধর্মেন্দ্রর ব্যক্তিত্বের প্রশংসা করে বলেন, "ধর্মেন্দ্রজি কখনও নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবেননি। তিনি সারাজীবন মাটির কাছাকাছি ছিলেন। ধনী হোক বা গরীব, পরিচিত হোক বা অপরিচিত, তিনি সবাইকে ভালোবাসতেন। সকলের ইজ্জত করতেন এবং সকলকে সম্মান দিতেন। তিনি এমনই একজন মানুষ ছিলেন।"
ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনীর ৫৭ বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক
হেমা মালিনী তাঁর ভাষণে ধর্মেন্দ্রজির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা বলেন। তিনি বলেন, "আমাদের সম্পর্ক ছিল ৫৭ বছরের। আমি যখন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসি, তখন বেশিরভাগ কাজই তাঁর সঙ্গে করার সুযোগ পাই। আমরা ৪৫টি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছি, যার মধ্যে ২৫টিই সুপারহিট ছিল। ইন্ডাস্ট্রি আমাদের সফল অনস্ক্রিন জুটি হিসেবে পছন্দ করেছিল এবং দর্শকরা আমাদের প্রচুর ভালোবাসা দিয়েছেন।" এই সময় হেমা মালিনী ধর্মেন্দ্রর ফিল্মি কেরিয়ার নিয়েও কথা বলেন এবং জানান যে তিনি ৩০০-র বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, "রোমান্টিক হোক বা অ্যাকশন, তিনি সবসময় অসাধারণ অভিনয় করতেন। কিন্তু তাঁর আসল ভালোবাসা ছিল কমেডি। ক্যামেরাই ছিল তাঁর জীবন। তিনি অভিনয় করতে খুব ভালোবাসতেন এবং যে চরিত্রই পেতেন, তাতে প্রাণ ঢেলে দিতেন।"
ধর্মেন্দ্রর সেই ইচ্ছে, যা অধরা রয়ে গেল
হেমা মালিনীর মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর কবি সত্তা সামনে আসে। তিনি বলেন, "উনি কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। ওঁর কাছে একটা বিশেষ ক্ষমতা ছিল যে কোনও পরিস্থিতি বা অনুষ্ঠানেই ওঁর কাছে শব্দ তৈরি থাকত। আমি ওঁকে বলেছিলাম যে ওঁর একটা বই লেখা উচিত, ভক্তরা এটা খুব পছন্দ করবে। তাই উনি এটা নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলেন এবং সব পরিকল্পনা করছিলেন। সেই কাজটা অসমাপ্ত রয়ে গেল।"
ধর্মেন্দ্রর প্রার্থনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অনেক রাজনীতিবিদ
দিল্লিতে আয়োজিত এই প্রার্থনা সভায় হেমা মালিনীর সঙ্গে তাঁর দুই মেয়ে এষা ও অহনা দেওল উপস্থিত ছিলেন। এষার প্রাক্তন স্বামী ভরত তখতানি এবং অহনার স্বামী বৈভব ভোরাও সেখানে ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা সহ আরও অনেক রাজনীতিবিদ ধর্মেন্দ্রকে শ্রদ্ধা জানাতে এই প্রার্থনা সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন।


