সংক্ষিপ্ত
মঙ্গলবার গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের লাইভ কনসার্টে এসে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে, এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। আর এই ঘটনার পর থেকেই শুরু হয়েছে নানান বিতর্ক। কেউ বলছেন অসুস্থ অবস্থায় কেকে-কে আগে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে আগে হোটেলে কেন নিয়ে যাওয়া হল? তো কেউ প্রশ্ন করেছেন নজরুল মঞ্চের দায়িত্ববোধ নিয়ে, কেউ আবার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন অনুষ্ঠান আয়োজকদের। তবে যাঁদের জন্য আদতে এই অনুষ্ঠান অর্থাৎ কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের উপর পড়েছে কতটা প্রভাব? আসুন জেনে নিই ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ সোমবার বিবেকানন্দ কলেজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ছাত্রছাত্রীরা কী বলছেন?
সোমবার এবং মঙ্গলবার পরপর দুই দিন টানা শহরবাসীকে আনন্দে মাতিয়ে রেখেছিলেন কেকে। সোমবার বিবেকানন্দ কলেজের অনুষ্ঠানে এবং মঙ্গলবার গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের কনসার্টে প্রায় ২০ টা করে গান গেয়ে অবশেষে আর কাউকে গান শোনানোর ক্ষমতায় থাকল না তাঁর। চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন বলিউডের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কেকে। মাত্র একদিন আগে যার গান শুনে আসা সেই মানুষটাই আর নেই, এই অনুভূতিটা একেবারেই আলাদা। চাক্ষুস লাইভ কনসার্টে দেখে আসার আবেগটা ভুলতেও পারেন নি বিবেকানন্দ কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, আচমকা তারই মাঝে খবর এল 'প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী কেকে।'
ঘটনাটা যতটা আকস্মিক ততটাই বেদনাদায়ক ও বটে। এই প্রসঙ্গেই এশিয়ানেট নিউজ বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় বিবেকানন্দ কলেজের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে, জানতে চাওয়া হয় তাঁদের প্রতিক্রিয়া?
আরও পড়ুন- বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় মুম্বইয়ের ভারাসোভা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে কেকে-র
শ্রেয়া দে
কেকে- র আকস্মিক প্রয়াণ সম্পর্কে শ্রেয়া জানান, 'এখন ও বিশ্বাস করতে পারছি না যে মানুষটা আর এই পৃথিবীতে নেই। একদিন আগে যার গান শুনে এতটা উত্তেজিত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম, পরদিন তারই মৃত্যুর খবর পাব এটা কখনওই আশা করি নি। মনে হচ্ছে নিজের কাউকে হারিয়ে ফেললাম।' তবে অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে শ্রেয়া জানান, সেদিন তাঁদের অনুষ্ঠানেও প্রয়োজনের অধিক লোক হয়েছিল, সকলকে বসার জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে নি। কিছুক্ষন পর মনে হয়েছিল এসি যেন কাজই করছে না। শো- এর মাঝে তাই হয়তো বিরক্ত হয়ে কেকে নিজেই বলেই উঠেছিলেন 'এসি কি অ্যাইসি কি ত্যাইসি।'
দেবার্ঘ্য দত্ত
পছন্দের গায়কেকের এই আচমকা প্রয়াণ মেনে নিতে পারেন নি দেবার্ঘ্য দত্ত ও। তিনি জানান, 'গতকাল রাতে খবরটা পেয়ে মনে হচ্ছিল যেন হাত পা কাঁপছে, কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সেদিন গানের মাঝে উনি বলছিলেন কলকাতা ওনার খুব পছন্দের একটি জায়গা, গত ২ বছরে এই করোনা মহামারির কারণে আর এখানে আসা হয়ে ওঠে নি, অবশেষে বিবেকানন্দ কলেজের হাত ধরেই অতিমারির পর প্রথম কলকাতায় আসা, সবটা যে এত ক্ষনিকের ছিল এটাই বুঝতে পারি নি।'
সন্দীপ প্রসাদ
শুধু মঙ্গলবারই নয় দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সোমবার ও। কেকে- র অনুষ্ঠান দেখার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে সন্দীপ প্রসাদ এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে জানান, 'আমাদের ও সেদিন সাফোকেটিং লাগছিল, যদিও আমাদের অনুষ্ঠানে গতকালের মত অত লোক হয় নি, যতগুলি বসার জায়গা নজরুল মঞ্চে ছিল তার চেয়ে কিছু লোকই বেশি হয়েছিল।' তবে সন্দীপের কথায় গরমে বারবার ঘাম মোছা, গরমের কষ্টটা কেকে আগেরদিন ও অনুভব করেছিলেন।
পিয়া বসু দাস
তবে কেকে- র মৃত্যুতে একেবারে গুরুতর কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন পিয়া বসু দাস। তিনি জানান, বিবেকানন্দ কলেজের অনুষ্ঠানে এসেই না কি শারীরিকভাবে স্বাভাবিক নেই বলে মনে হচ্ছিল কেকে-কে। পিয়ার কথায়, কেকে- র অন্যান্য লাইভ অনুষ্ঠানে আমরা ওনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে দেখে অভ্যস্ত সেটা সেদিন দেখা যায় নি, তবে ভিতরে কিছু সমস্যা হলেও উনি নিজের সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেদিন তাঁদের কলেজের অনুষ্ঠানে ও অতিরিক্ত ভিড় থাকায় একে ওপরের কোলে বসে শো দেখতে হয়েছে বলে ও দাবি করেছেন পিয়া, এমন কি এসি ঠিকঠাকভাবে কাজ না করার ঘটনাকে ও সমর্থন করেছেন পিয়া। কেকে-কে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির শিকার বলে দাবি করেছেন পিয়া।
মঙ্গলবার গুরুদাস মহাবিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা দিনু হালদার বলে বিবেকানন্দ কলেজেরই এক প্ৰাক্তন ছাত্র জানান, 'সেখানে পরিস্থিতি একেবারেই বেসামাল হয়ে উঠেছিল কারণ যেই হলে বসার জায়গা মাত্র ২৪৮৩টি সেখানে ৬-৭ হাজার লোককে সামাল দেওয়া কোনওভাবেই সম্ভবপর ছিল না। পাঁচিল টপকে সবাই ভিতরে চলে আসছিলেন, ফলে হলের ভিতরের পরিস্থিতি না কি ক্রমেই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছিল।'
এমন কি এও জানা গেছে যে মঙ্গলবার বারবার এসি চালানোর জন্য অনুরোধ করে কোনও সদর্থক সাড়া পান নি কেকে। এদিন এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিবেকানন্দ কলেজের কিছু ছাত্রছাত্রী জানান, 'কলেজের অনুষ্ঠানকে কলেজের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই বোধ হয় ভালো হত, বাইরে থেকে কয়েকজনকে বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ করা যায় ঠিকই তবে সেটাকে এই ধরণের বিজ্ঞাপনী ইভেন্টে পরিণত না করলেই ভালো হত।'